কক্সবাজারে ডিমের বাজারে একক ব্যক্তির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব

  • Update Time : ১০:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 6

//খাইরুল বশরের দাপট
//ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের আঁতকে বন্দি চাষিরা
//চাষিরা ও পাইকারিরা সিন্ডিকেটের কবজায়

এরফান হোছাইন, চট্টগ্রাম ব্যুরো :

কক্সবাজার জেলায় ডিমের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জানা যায়, এখানকার খামারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কে কত টাকায় ডিম বিক্রি করবেন তা আগের দিন মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেন একজন ব্যক্তি। তার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ডিম বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
এমনকি, কোনো পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতা ইচ্ছে করলে সরাসরি খামারির কাছ থেকে ডিম ক্রয় করার সুযোগও পাচ্ছেন না। কারণ খামারিরা কোনোভাবেই ওই ব্যক্তির বাইরে অন্য কাউকে ডিম বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। এই একক ব্যক্তির একচ্ছত্র কর্তৃত্বের কারণে ডিমের বাজারে স্বচ্ছতা নেই এবং ভোক্তাদের কাছে ডিমের দাম অতিরিক্ত বেশি পড়ছে।
কক্সবাজার জেলার ডিমের বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন ঈদগাঁও উপজেলার লেয়ার খামার মালিক সমিতির নেতা খাইরুল বশর। তিনি সরাসরি স্বীকার করেছেন যে, তিনিই জেলার ডিমের দাম নির্ধারণ করেন।
খাইরুল বশর জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ডিমের সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তিনি কক্সবাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করেন। তার এই একক আধিপত্যের কারণে সাধারণ ভোক্তারা অতিরিক্ত দামে ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার শতাধিক খামারের নিয়ন্ত্রক খাইরুল বশর হলেও এই সিন্ডিকেটে ১৮৪ জন সদস্য জড়িত। এই সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড কক্সবাজার জেলা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া এবং বান্দরবনের একটি অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন সবচেয়ে কম দামে। কিন্তু খুচরা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছালে ডিমের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। খুচরা দোকানে একটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। কিন্তু পাইকারি ক্রেতারা এসব ডিম কিনছেন সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১২ টাকায়। এই দামের পার্থক্যের কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটের অস্তিত্বই সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, খামারিরা যদি কম দামে ডিম বিক্রি করেন, তাহলে কেন খুচরা ক্রেতাদের কাছে ডিমের দাম এত বেশি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ডিম সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি সামনে এসেছে।

ঈদগাঁও উপজেলার ডিমের বাজারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। চাষী ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। ফলে দাম বাড়ানো এবং উভয় পক্ষের লাভ কমে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট নেতা খাইরুল বশর প্রতিদিন মোবাইল ম্যাসেজ পাঠিয়ে চাষীদের ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেন।

ঈদগাঁও উপজেলার ডিম বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে। খামারিরা সিন্ডিকেটের নির্দেশ ছাড়া ডিম বিক্রি করতে পারে না। পাইকারিরাও সিন্ডিকেট নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে বাধ্য। সিন্ডিকেট নেতা খাইরুল বশর খামারিদের ডিমের দাম নির্ধারণ করেন। এই সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তারা অতিরিক্ত দামে ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

রামুর জোয়ারিয়া নালার এক খামারির কাছে ডিমের দাম জানতে চাইলে তিনি দাম বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, খাইরুল বশররা আমাদের আগেই টাকা দিয়ে রাখে, তাই আমরা ডিমের দাম নিজে নির্ধারণ করতে পারি না। তারা যে দাম দেবে, আমাদের সেটাই মানতে হবে। অনেক সময় আমরা লোকসান গুনতে বাধ্য হই, কিন্তু তারা লাভ করেই চলে।

এনিয়ে অভিযুক্ত খাইরুল বশর স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রতিদিন কক্সবাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠান। তিনি আরো জানান, তারা খামারিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। চট্টগ্রামের ডিমের পাইকারি বাজারের দাম অনুযায়ী কক্সবাজারের ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। কারণ, কক্সবাজারের উৎপাদিত অতিরিক্ত ডিম চট্টগ্রামের বাজারে যায়।

জেলা প্রশাসন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, ডিমের সিন্ডিকেটসহ যে কোনো ধরনের বাজার অস্থিরতা সৃষ্টিকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কক্সবাজারে ডিমের বাজারে একক ব্যক্তির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব

Update Time : ১০:২৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

//খাইরুল বশরের দাপট
//ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের আঁতকে বন্দি চাষিরা
//চাষিরা ও পাইকারিরা সিন্ডিকেটের কবজায়

এরফান হোছাইন, চট্টগ্রাম ব্যুরো :

কক্সবাজার জেলায় ডিমের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জানা যায়, এখানকার খামারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কে কত টাকায় ডিম বিক্রি করবেন তা আগের দিন মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেন একজন ব্যক্তি। তার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ডিম বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
এমনকি, কোনো পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতা ইচ্ছে করলে সরাসরি খামারির কাছ থেকে ডিম ক্রয় করার সুযোগও পাচ্ছেন না। কারণ খামারিরা কোনোভাবেই ওই ব্যক্তির বাইরে অন্য কাউকে ডিম বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। এই একক ব্যক্তির একচ্ছত্র কর্তৃত্বের কারণে ডিমের বাজারে স্বচ্ছতা নেই এবং ভোক্তাদের কাছে ডিমের দাম অতিরিক্ত বেশি পড়ছে।
কক্সবাজার জেলার ডিমের বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন ঈদগাঁও উপজেলার লেয়ার খামার মালিক সমিতির নেতা খাইরুল বশর। তিনি সরাসরি স্বীকার করেছেন যে, তিনিই জেলার ডিমের দাম নির্ধারণ করেন।
খাইরুল বশর জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ডিমের সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তিনি কক্সবাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করেন। তার এই একক আধিপত্যের কারণে সাধারণ ভোক্তারা অতিরিক্ত দামে ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার শতাধিক খামারের নিয়ন্ত্রক খাইরুল বশর হলেও এই সিন্ডিকেটে ১৮৪ জন সদস্য জড়িত। এই সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড কক্সবাজার জেলা ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া এবং বান্দরবনের একটি অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন সবচেয়ে কম দামে। কিন্তু খুচরা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছালে ডিমের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। খুচরা দোকানে একটা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। কিন্তু পাইকারি ক্রেতারা এসব ডিম কিনছেন সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১২ টাকায়। এই দামের পার্থক্যের কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটের অস্তিত্বই সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, খামারিরা যদি কম দামে ডিম বিক্রি করেন, তাহলে কেন খুচরা ক্রেতাদের কাছে ডিমের দাম এত বেশি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ডিম সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি সামনে এসেছে।

ঈদগাঁও উপজেলার ডিমের বাজারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। চাষী ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। ফলে দাম বাড়ানো এবং উভয় পক্ষের লাভ কমে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট নেতা খাইরুল বশর প্রতিদিন মোবাইল ম্যাসেজ পাঠিয়ে চাষীদের ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেন।

ঈদগাঁও উপজেলার ডিম বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে। খামারিরা সিন্ডিকেটের নির্দেশ ছাড়া ডিম বিক্রি করতে পারে না। পাইকারিরাও সিন্ডিকেট নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে বাধ্য। সিন্ডিকেট নেতা খাইরুল বশর খামারিদের ডিমের দাম নির্ধারণ করেন। এই সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তারা অতিরিক্ত দামে ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

রামুর জোয়ারিয়া নালার এক খামারির কাছে ডিমের দাম জানতে চাইলে তিনি দাম বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, খাইরুল বশররা আমাদের আগেই টাকা দিয়ে রাখে, তাই আমরা ডিমের দাম নিজে নির্ধারণ করতে পারি না। তারা যে দাম দেবে, আমাদের সেটাই মানতে হবে। অনেক সময় আমরা লোকসান গুনতে বাধ্য হই, কিন্তু তারা লাভ করেই চলে।

এনিয়ে অভিযুক্ত খাইরুল বশর স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রতিদিন কক্সবাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠান। তিনি আরো জানান, তারা খামারিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। চট্টগ্রামের ডিমের পাইকারি বাজারের দাম অনুযায়ী কক্সবাজারের ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। কারণ, কক্সবাজারের উৎপাদিত অতিরিক্ত ডিম চট্টগ্রামের বাজারে যায়।

জেলা প্রশাসন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, ডিমের সিন্ডিকেটসহ যে কোনো ধরনের বাজার অস্থিরতা সৃষ্টিকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা।