জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে কোটিপতি: সাদ্দামের অর্থের উৎস রহস্য

  • Update Time : ১০:২১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 10


//রাজনীতি থেকে অপরাধ: ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের উত্থান ও পতন
//কক্সবাজার ছাত্রলীগ সভাপতির অর্থের উৎস
//কয়েকবছরে শত কোটির মালিক

এরফান হোছাইন, চট্টগ্রাম ব্যুরো :

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন মাত্র কয়েক বছরেই শতকোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি কীভাবে এত অর্থ উপার্জন করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মুরা পাড়ার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এস এম সাদ্দাম হোসেন। তার বাবা নুরুল হক গরুর ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। দুই স্ত্রী ও সাত সন্তান নিয়ে সংসারের টানাপড়েনের মধ্যে বেড়ে ওঠা সাদ্দাম হোসেন আজ কোটিপতি হয়ে উঠেছেন, যা স্থানীয়দের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সাদ্দাম হোসেন ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। তিনি জমি দখল, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, এবং ছাত্রলীগের কমিটি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন। এছাড়াও, তিনি মিয়ানমার কেন্দ্রিক গরু চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক সূত্রের দাবি, সাদ্দাম হোসেন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়ার নাম করে একটি সুচারু অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এই টাকাগুলো ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

কক্সবাজার জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন যে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন তাদের সাথে প্রতারণা করে প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ঠিকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদাররা আরও জানিয়েছেন যে, তারা বিভিন্ন স্থানে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সাদ্দাম হোসেনের কাছের লোকজনের মতে, তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এই সব অবৈধ কাজ করেছেন। তিনি ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে ভয় দেখিয়ে অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন।
স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেনের নামে এবং বেনামে প্রচুর জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। এছাড়াও, তিনি কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে মাদক ব্যবসা চালিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেন এবং তার স্বজনরা জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করেছেন। এই অবৈধ পাহাড় কাটা কার্যকলাপের মাধ্যমেও তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
রামু ভূমি অফিসের একটি সূত্রের দাবি, সাদ্দাম হোসেন প্রতি সপ্তাহেই রামু ভূমি অফিসে জায়গার লেনদেন করতেন। তার ভাই আবদুস শুক্কুরও এই কাজে সহায়তা করত। সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবদুস শুক্কুরও একজন ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাদ্দাম হোসেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আগমনের আগে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। তবে, কোনো অদৃশ্য শক্তির সহায়তায় তিনি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন। সভাপতি হওয়ার পর তিনি অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত হন।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আগেই সাদ্দাম হোসেন দেশ ত্যাগ করেছেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি থেকে কোটিপতি: সাদ্দামের অর্থের উৎস রহস্য

Update Time : ১০:২১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪


//রাজনীতি থেকে অপরাধ: ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের উত্থান ও পতন
//কক্সবাজার ছাত্রলীগ সভাপতির অর্থের উৎস
//কয়েকবছরে শত কোটির মালিক

এরফান হোছাইন, চট্টগ্রাম ব্যুরো :

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন মাত্র কয়েক বছরেই শতকোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি কীভাবে এত অর্থ উপার্জন করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মুরা পাড়ার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এস এম সাদ্দাম হোসেন। তার বাবা নুরুল হক গরুর ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। দুই স্ত্রী ও সাত সন্তান নিয়ে সংসারের টানাপড়েনের মধ্যে বেড়ে ওঠা সাদ্দাম হোসেন আজ কোটিপতি হয়ে উঠেছেন, যা স্থানীয়দের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সাদ্দাম হোসেন ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন। তিনি জমি দখল, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, এবং ছাত্রলীগের কমিটি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছেন। এছাড়াও, তিনি মিয়ানমার কেন্দ্রিক গরু চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক সূত্রের দাবি, সাদ্দাম হোসেন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়ার নাম করে একটি সুচারু অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এই টাকাগুলো ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

কক্সবাজার জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন যে, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন তাদের সাথে প্রতারণা করে প্রায় ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ঠিকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদাররা আরও জানিয়েছেন যে, তারা বিভিন্ন স্থানে এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সাদ্দাম হোসেনের কাছের লোকজনের মতে, তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এই সব অবৈধ কাজ করেছেন। তিনি ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে ভয় দেখিয়ে অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন।
স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেনের নামে এবং বেনামে প্রচুর জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। এছাড়াও, তিনি কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে মাদক ব্যবসা চালিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেন এবং তার স্বজনরা জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করেছেন। এই অবৈধ পাহাড় কাটা কার্যকলাপের মাধ্যমেও তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
রামু ভূমি অফিসের একটি সূত্রের দাবি, সাদ্দাম হোসেন প্রতি সপ্তাহেই রামু ভূমি অফিসে জায়গার লেনদেন করতেন। তার ভাই আবদুস শুক্কুরও এই কাজে সহায়তা করত। সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবদুস শুক্কুরও একজন ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাদ্দাম হোসেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আগমনের আগে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। তবে, কোনো অদৃশ্য শক্তির সহায়তায় তিনি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন। সভাপতি হওয়ার পর তিনি অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত হন।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আগেই সাদ্দাম হোসেন দেশ ত্যাগ করেছেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।