মাদ্রাসার সভাপতির বিরুদ্ধে চেতনানাশক খাইয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

  • Update Time : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
  • / 36

হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল
(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে এক মাদ্রাসার সভাপতির বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসার এক কিশোরী ছাত্রীকে জুসের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে ধর্ষণ করেছে এমন অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার (৮ জুলাই) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম মোবাইল ফোনের সুইচড অফ করে এলাকায় ছেড়ে পালিয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয়রা মাদ্রাসাটি বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় উপজেলার ধর্মগড় ভরনিয়া গ্রামে “ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা” মাদ্রাসাটি গড়ে উঠে। মাদ্রাসাটির দুইটি শাখা রয়েছে। একটি ছাত্রীদের জন্য আবাসিক এবং অপরটি ছাত্রদের জন্য অনাবাসিক। আবাসিকে ১০-১৫ জন কিশোরী রাত্রিযাপন করে। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম মিলার মাদ্রাসা পরিদর্শনের নাম করে রাতের বেলা প্রায় আবাসিকে যাতায়াত করেন এবং সকল মেয়ে কিশোরী ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে জুস খাওয়াতেন। কিন্তু জুসে মেশানো থাকতো চেতনানাশক ঔষুধ বা ঘুমের বড়ি। আর যে ছাত্রীকে তিনি টার্গেট করতেন সেই ছাত্রীকে গভীর রাতে গিয়ে ধর্ষণ করতেন। ঘটনার দিন সব মেয়ে ছাত্রীদের ছুটি দেওয়া হলেও তিনজনকে সভাপতির নির্দেশে ছুটি দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম ওই রাতে গিয়ে ওই তিন কিশোরী ছাত্রীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খাওয়ান। কিশোরীরা ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করে এক কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। পাশে থাকা এক ছাত্রীর প্রসাবের চাপে ঘুম ভেঙে গেলে ঘরের আলো জ্বালানোর সুইচড দিতে গিয়ে সভাপতি ও ওই ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং সাথে সাথে সভাপতি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে জাগিয়ে তুলে সব ছাত্রীরা চেচামেচি করে উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনার সত্যতা দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ জানান। এবং সকালে আব্দুল করিমের বাড়ি ঘেরাও করেন। কিন্তু তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক কিশোরী জানান, সভাপতি আব্দুল করিম প্রায় মাদ্রাসায় আসতেন এবং মাঝে মধ্যে ছাত্রীদের জুস খাওয়াতেন। মনে হয় জুসের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ থাকতো। কারণ যেদিন তিনি জুস খাওয়াতেন সেদিন গভীর ঘুম লাগতো। সবাই যখন ঘুমিয়ে যেত তখন সভাপতি সুযোগ বুঝে একজনকে টার্গেট করে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। ওই মাদ্রাসায পড়ুয়া এক ছাত্রীর বাবা জানান, আমার মেয়ে কয়েকদিন ধরে মাদ্রাসা যেতে চায়না, কেন যাবেনা জানতে চাইলে সে বলে আমাকে অন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। আমি সেখানে যাবোনা, ওখানকার সভাপতির নজর ভালো না। স্থানীয় ইউপি সদস্য মইনউদ্দীন কাবুল বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা এক শিক্ষককে ঘটনাটি তদন্তে ছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে বলি। তাদের সঙ্গে কথা বললে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তারা সভাপতির বিচার চেয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, সেদিন খবর পেয়ে সকালে আমি মাদ্রাসা পরিদর্শনে যায়,এবং বাকী শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্ননের কথা মোতাবেক সভাপতি আব্দুর করিম কর্তৃক ফলের রসের জুসের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। এবং সে এর আগেও অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে একই কৌশলে এরকম অনৈতিক কর্মকান্ডে চালিয়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসাটি বন্ধ রেখে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে বলেও চেয়ারম্যান জানান। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সপাল আব্দুল মানান জানান, আমি ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষণিক গিয়ে জানতে পারি এটি সত্য। তবে ঘটনার পর থেকে সভাপতিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জয়ন্ত কুমার সাহা জানান, গত বুধবার ১০ জুলাই রাতে মেয়ের বাবা লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত সভাপতির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসারন(ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ভরনিয়া গ্রামে ‘ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা মাদরাসা’ আবাসিক ‘বালিকা হিফজুল কুরআন’ বিভাগে কিছু কোমলমতি ছাত্রী যারা ছিলো তাদের সাথে অনৈতিক কাজ করেছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলেই মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মাদ্রাসার সভাপতির বিরুদ্ধে চেতনানাশক খাইয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

Update Time : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল
(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে এক মাদ্রাসার সভাপতির বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসার এক কিশোরী ছাত্রীকে জুসের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে ধর্ষণ করেছে এমন অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার (৮ জুলাই) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম মোবাইল ফোনের সুইচড অফ করে এলাকায় ছেড়ে পালিয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয়রা মাদ্রাসাটি বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় উপজেলার ধর্মগড় ভরনিয়া গ্রামে “ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা” মাদ্রাসাটি গড়ে উঠে। মাদ্রাসাটির দুইটি শাখা রয়েছে। একটি ছাত্রীদের জন্য আবাসিক এবং অপরটি ছাত্রদের জন্য অনাবাসিক। আবাসিকে ১০-১৫ জন কিশোরী রাত্রিযাপন করে। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম মিলার মাদ্রাসা পরিদর্শনের নাম করে রাতের বেলা প্রায় আবাসিকে যাতায়াত করেন এবং সকল মেয়ে কিশোরী ছাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে জুস খাওয়াতেন। কিন্তু জুসে মেশানো থাকতো চেতনানাশক ঔষুধ বা ঘুমের বড়ি। আর যে ছাত্রীকে তিনি টার্গেট করতেন সেই ছাত্রীকে গভীর রাতে গিয়ে ধর্ষণ করতেন। ঘটনার দিন সব মেয়ে ছাত্রীদের ছুটি দেওয়া হলেও তিনজনকে সভাপতির নির্দেশে ছুটি দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিম ওই রাতে গিয়ে ওই তিন কিশোরী ছাত্রীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খাওয়ান। কিশোরীরা ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করে এক কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। পাশে থাকা এক ছাত্রীর প্রসাবের চাপে ঘুম ভেঙে গেলে ঘরের আলো জ্বালানোর সুইচড দিতে গিয়ে সভাপতি ও ওই ছাত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং সাথে সাথে সভাপতি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে জাগিয়ে তুলে সব ছাত্রীরা চেচামেচি করে উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনার সত্যতা দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ জানান। এবং সকালে আব্দুল করিমের বাড়ি ঘেরাও করেন। কিন্তু তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক কিশোরী জানান, সভাপতি আব্দুল করিম প্রায় মাদ্রাসায় আসতেন এবং মাঝে মধ্যে ছাত্রীদের জুস খাওয়াতেন। মনে হয় জুসের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ থাকতো। কারণ যেদিন তিনি জুস খাওয়াতেন সেদিন গভীর ঘুম লাগতো। সবাই যখন ঘুমিয়ে যেত তখন সভাপতি সুযোগ বুঝে একজনকে টার্গেট করে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। ওই মাদ্রাসায পড়ুয়া এক ছাত্রীর বাবা জানান, আমার মেয়ে কয়েকদিন ধরে মাদ্রাসা যেতে চায়না, কেন যাবেনা জানতে চাইলে সে বলে আমাকে অন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। আমি সেখানে যাবোনা, ওখানকার সভাপতির নজর ভালো না। স্থানীয় ইউপি সদস্য মইনউদ্দীন কাবুল বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা এক শিক্ষককে ঘটনাটি তদন্তে ছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে বলি। তাদের সঙ্গে কথা বললে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তারা সভাপতির বিচার চেয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, সেদিন খবর পেয়ে সকালে আমি মাদ্রাসা পরিদর্শনে যায়,এবং বাকী শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্ননের কথা মোতাবেক সভাপতি আব্দুর করিম কর্তৃক ফলের রসের জুসের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। এবং সে এর আগেও অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে একই কৌশলে এরকম অনৈতিক কর্মকান্ডে চালিয়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসাটি বন্ধ রেখে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে বলেও চেয়ারম্যান জানান। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সপাল আব্দুল মানান জানান, আমি ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষণিক গিয়ে জানতে পারি এটি সত্য। তবে ঘটনার পর থেকে সভাপতিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জয়ন্ত কুমার সাহা জানান, গত বুধবার ১০ জুলাই রাতে মেয়ের বাবা লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত সভাপতির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসারন(ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, ভরনিয়া গ্রামে ‘ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা মাদরাসা’ আবাসিক ‘বালিকা হিফজুল কুরআন’ বিভাগে কিছু কোমলমতি ছাত্রী যারা ছিলো তাদের সাথে অনৈতিক কাজ করেছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলেই মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।