মতলবে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন

  • Update Time : ১০:১৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩
  • / 96

মতলব প্রতিনিধিঃ

চলতি বছর মতলব দক্ষিণ উপজেলারয় সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং পোকা-পাখির উপদ্রব কম থাকায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। কৃষক কমল পোদ্দার (৪০) গত ডিসেম্বরে পৈত্রিক ৩০ শতক জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে উৎপাদিত সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করে লাভ করেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদাও মিটিয়েছেন। তার দেখাদেখি পাশের আরও অনেক কৃষক এবার শর্ষের পরিবর্তে সূর্যমুখীর আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, হচ্ছেন। তাদের মুখে এখন হলুদ হাসি। মোস্তফা কামালের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী গ্রামে। ওই গ্রামের আবদুল কাদির বকাউলের ছেলে তিনি। মোস্তফা কামালের মতো এভাবে এ উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে শর্ষের পরিবর্তে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। প্রত্যাশিত মূল্যে সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হয়েছেন। তাদের সংসারেও এসেছে সচ্ছলতা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মৌসুমে এ উপজেলায় মাত্র ৩০ শতক জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে (গত ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত) উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক ১ হাজার ২০০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী ফসলের আবাদ করেন। এবার এর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মণ। এবার গত মৌসুমের চেয়ে ৪০গুণ বেশি জমিতে এ ফসলের আবাদ হয়।
উপজেলার আশ্বিনপুর, দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী, পশ্চিম নাগদা, দক্ষিণ বারগাঁও, বাড়ৈগাঁও, কালিকাপুর, পিংড়া, বাবুরপাড়াসহ উপজেলার আরও ২০ গ্রামে সূর্যমুখীর আবাদ হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী, আশি^নপুর, বাবুরপাড়া ও নাগদাসহ আরও কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়, সেখানকার বেশ কিছু জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ। কিছু কিছু খেতে সূর্যমুখীর ফুল ছাপিয়ে দানাদার ফলন উঁকিঝুঁকি মারছে। কিছু খেতে সুর্যমুখীর মনভোলানো ফুল ফুটে আছে। কৃষকদের অনেকেই খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সূর্যমুখীর দানাদার ফলনও তুলছেন কিছু কৃষক।
কোনো কোনো খেতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। সেখানে সূর্যমুখীর বাহারি ফুলের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলছেন কেউ কেউ। সূর্যমুখীর ফুল ও দানাদার ফলের গন্ধে গোটা এলাকাই সুগন্ধময়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বিরাজ করছে সেখানে। খেতগুলো যেন সৌন্দর্যের রাণী।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী গ্রামের কমল পোদ্দার বলেন, স্থানীয় কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ সংগ্রহ করে গত ডিসেম্বরে ৩০ শতক পৈতৃক জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন। এতে খরচ পড়ে ১৫ হাজার টাকা। পাখি ও পোকার উপদ্রব কম থাকায় এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় এর ফলন খুব ভালো হয়েছে। খেত থেকে প্রায় ৭-৮ মণ সূর্যমুখীর দানা সংগ্রহ করেছেন।
দানা থেকে ছাড়ানো সূর্যমুখীর ভোজ্যতেল বিক্রি করে লাভ করেছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার তেল বিক্রি করেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। মিটিয়েছেন পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদাও। আগামীতে আরও বড় পরিসরে ফসলটির আবাদ করবেন। তার দেখাদেখি আশপাশের আরও অনেকেই ফসলটির আবাদ করেছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোক্তার হোসেন বলেন, সূর্যমুখী একটি স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেলের ফসল। এ তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, ডি ও সি। এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম। এজন্য হৃদ্রোগীদের জন্য এ তেল খুবই উপকারী। সূর্যমুখীর খৈলও গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। অন্যান্য ভোজ্যতেলের তুলনায় এর বাজারদর বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, কম খরচে এই ভোজ্যতেলের ফসল আবাদ করে স্থানীয় কৃষকেরা আর্থিকভাবে অধিকতর লাভবান হচ্ছেন। সয়াবিন তেলের ওপর চাপ কমাতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ানো আবশ্যক। আগামীতে তার উপজেলায় আরও বেশি পরিমাণ জমিতে ফসলটির আবাদে পদক্ষেপ নেবেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মতলবে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন

Update Time : ১০:১৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩

মতলব প্রতিনিধিঃ

চলতি বছর মতলব দক্ষিণ উপজেলারয় সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং পোকা-পাখির উপদ্রব কম থাকায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। কৃষক কমল পোদ্দার (৪০) গত ডিসেম্বরে পৈত্রিক ৩০ শতক জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে উৎপাদিত সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করে লাভ করেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদাও মিটিয়েছেন। তার দেখাদেখি পাশের আরও অনেক কৃষক এবার শর্ষের পরিবর্তে সূর্যমুখীর আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, হচ্ছেন। তাদের মুখে এখন হলুদ হাসি। মোস্তফা কামালের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী গ্রামে। ওই গ্রামের আবদুল কাদির বকাউলের ছেলে তিনি। মোস্তফা কামালের মতো এভাবে এ উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে শর্ষের পরিবর্তে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। প্রত্যাশিত মূল্যে সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হয়েছেন। তাদের সংসারেও এসেছে সচ্ছলতা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মৌসুমে এ উপজেলায় মাত্র ৩০ শতক জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে (গত ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত) উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক ১ হাজার ২০০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী ফসলের আবাদ করেন। এবার এর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মণ। এবার গত মৌসুমের চেয়ে ৪০গুণ বেশি জমিতে এ ফসলের আবাদ হয়।
উপজেলার আশ্বিনপুর, দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী, পশ্চিম নাগদা, দক্ষিণ বারগাঁও, বাড়ৈগাঁও, কালিকাপুর, পিংড়া, বাবুরপাড়াসহ উপজেলার আরও ২০ গ্রামে সূর্যমুখীর আবাদ হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী, আশি^নপুর, বাবুরপাড়া ও নাগদাসহ আরও কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়, সেখানকার বেশ কিছু জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ। কিছু কিছু খেতে সূর্যমুখীর ফুল ছাপিয়ে দানাদার ফলন উঁকিঝুঁকি মারছে। কিছু খেতে সুর্যমুখীর মনভোলানো ফুল ফুটে আছে। কৃষকদের অনেকেই খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সূর্যমুখীর দানাদার ফলনও তুলছেন কিছু কৃষক।
কোনো কোনো খেতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। সেখানে সূর্যমুখীর বাহারি ফুলের সঙ্গে সেলফি ও ছবি তুলছেন কেউ কেউ। সূর্যমুখীর ফুল ও দানাদার ফলের গন্ধে গোটা এলাকাই সুগন্ধময়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বিরাজ করছে সেখানে। খেতগুলো যেন সৌন্দর্যের রাণী।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিঘলদী গ্রামের কমল পোদ্দার বলেন, স্থানীয় কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ সংগ্রহ করে গত ডিসেম্বরে ৩০ শতক পৈতৃক জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন। এতে খরচ পড়ে ১৫ হাজার টাকা। পাখি ও পোকার উপদ্রব কম থাকায় এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় এর ফলন খুব ভালো হয়েছে। খেত থেকে প্রায় ৭-৮ মণ সূর্যমুখীর দানা সংগ্রহ করেছেন।
দানা থেকে ছাড়ানো সূর্যমুখীর ভোজ্যতেল বিক্রি করে লাভ করেছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার তেল বিক্রি করেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। মিটিয়েছেন পরিবারে ভোজ্যতেলের চাহিদাও। আগামীতে আরও বড় পরিসরে ফসলটির আবাদ করবেন। তার দেখাদেখি আশপাশের আরও অনেকেই ফসলটির আবাদ করেছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোক্তার হোসেন বলেন, সূর্যমুখী একটি স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেলের ফসল। এ তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, ডি ও সি। এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম। এজন্য হৃদ্রোগীদের জন্য এ তেল খুবই উপকারী। সূর্যমুখীর খৈলও গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। অন্যান্য ভোজ্যতেলের তুলনায় এর বাজারদর বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, কম খরচে এই ভোজ্যতেলের ফসল আবাদ করে স্থানীয় কৃষকেরা আর্থিকভাবে অধিকতর লাভবান হচ্ছেন। সয়াবিন তেলের ওপর চাপ কমাতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ানো আবশ্যক। আগামীতে তার উপজেলায় আরও বেশি পরিমাণ জমিতে ফসলটির আবাদে পদক্ষেপ নেবেন।