নওগাঁর রাণীনগরে শিক্ষকের কাছে ঘুষ দাবির অভিযোগ

  • Update Time : ০৬:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২
  • / 177

মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ফিল্ড সুপারভাইজারের নামে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। দাবিকৃত ঘুষ না দিলে ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ ও কেন্দ্র বাতিল করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভুক্তভোগী শিক্ষক শাহাদত হোসেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক জিসি ও ফিল্ড সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করাসহ নানা অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় উপজেলার ধনপাড়া মৎস্যজীবিপাড়া জামে মসজিদ কেন্দ্রে মসজিদ ভিত্তিক নূরানী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ওই এলাকার চরকানাই গ্রামের শাহাদত হোসেন। এরপর ২০১৭ সালে মোহাম্মদ মুসা রাণীনগরে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে অজ্ঞাত কারনে অ-কারনে শিক্ষক শাহাদতকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। চাকুরী ছেড়ে না দেয়ায় বিভিন্ন অযুহাতে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন এবং শিক্ষক শাহাদতকে অযোগ্য প্রমান করতে ঠুনকো অযুহাতে শোকজ করার চেষ্টা করেন। এছাড়া এক পর্যায়ে প্রায় ১০ মাসের বেতন বন্ধ রাখেন। এরই মধ্যে গত ১৮ অক্টোবর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জিসি (সাধারণ কেয়ারটেকার) আবু বক্কর সিদ্দিক কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সুপারভাইজার মুসার নামে শিক্ষক শাহাদতের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে বেতন-ভাতা বন্ধ এবং কেন্দ্র বাতিল করারও হুমকি দেন।

এ সময় পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করার সময় একজন সাংবাদিকের স্বাক্ষর দেখে জিসি সিদ্দিক বিষয়টি সুপার ভাইজারকে জানায়। এরপর সুপার ভাইজার শিক্ষককে কেন্দ্রের সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে দেখা করতে বলেন। গত বুধবার শিক্ষক শাহাদত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে গেলে সাংবাদিকের স্বাক্ষর দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে খাতাপত্র, শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রার ও পরিদর্শন বহি কেড়ে নিয়ে শিক্ষককের চাকুরী নেই জানিয়ে চলে যেতে বলেন। এ ঘটনায় শিক্ষক শাহাদত সুষ্ঠ বিচার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

শিক্ষক শাহাদত হোসেন জানান, ফিল্ড সুপারভাইজার মুসা আমাকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার কথা বলতেন। চাকুরী ছেড়ে না দেয়ায় বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি ১০ মাসের বেতন বন্ধ রেখেছিলেন। তিনি জিসি সিদ্দিকের মাধ্যমে আমার নিকট ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। আর ঘুষের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় পরিদর্শন বহিতে সাংবাদিকের স্বাক্ষর কেন এই অযুহাতে সমস্ত কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে চাকুরী নেই বলে আমাকে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আমি ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জিসি আবু বক্কর সিদ্দিক ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী পেয়েছি। কিন্তু এর আগে কোন এক সাংবাদিক কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখিয়ে পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করেছেন। শিক্ষক শাহাদত সে অনুযায়ী পরিদর্শন বহিতে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখাতে বলেন। সেটা না করায় আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ মুসা সকল অভিযোগ অস্বীকার এবং সম্পন্ন ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, শিক্ষক শাহাদতের গাফিলতির কারনে এর আগে বেতন বন্ধ করা হয়েছিল। পরে কেন্দ্র সুষ্ঠমতো চালাবেন এমন মুচলেখা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও বার বার সর্তক করেও কোন ফল হচ্ছে না। তবে কেন্দ্র বাতিল বা তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়নি। শুধুমাত্র কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, শিক্ষকের দায়ের করা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নওগাঁর রাণীনগরে শিক্ষকের কাছে ঘুষ দাবির অভিযোগ

Update Time : ০৬:৪৭:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২

মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ফিল্ড সুপারভাইজারের নামে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। দাবিকৃত ঘুষ না দিলে ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ ও কেন্দ্র বাতিল করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভুক্তভোগী শিক্ষক শাহাদত হোসেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক জিসি ও ফিল্ড সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করাসহ নানা অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় উপজেলার ধনপাড়া মৎস্যজীবিপাড়া জামে মসজিদ কেন্দ্রে মসজিদ ভিত্তিক নূরানী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ওই এলাকার চরকানাই গ্রামের শাহাদত হোসেন। এরপর ২০১৭ সালে মোহাম্মদ মুসা রাণীনগরে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে অজ্ঞাত কারনে অ-কারনে শিক্ষক শাহাদতকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। চাকুরী ছেড়ে না দেয়ায় বিভিন্ন অযুহাতে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন এবং শিক্ষক শাহাদতকে অযোগ্য প্রমান করতে ঠুনকো অযুহাতে শোকজ করার চেষ্টা করেন। এছাড়া এক পর্যায়ে প্রায় ১০ মাসের বেতন বন্ধ রাখেন। এরই মধ্যে গত ১৮ অক্টোবর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জিসি (সাধারণ কেয়ারটেকার) আবু বক্কর সিদ্দিক কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সুপারভাইজার মুসার নামে শিক্ষক শাহাদতের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে বেতন-ভাতা বন্ধ এবং কেন্দ্র বাতিল করারও হুমকি দেন।

এ সময় পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করার সময় একজন সাংবাদিকের স্বাক্ষর দেখে জিসি সিদ্দিক বিষয়টি সুপার ভাইজারকে জানায়। এরপর সুপার ভাইজার শিক্ষককে কেন্দ্রের সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে দেখা করতে বলেন। গত বুধবার শিক্ষক শাহাদত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে গেলে সাংবাদিকের স্বাক্ষর দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে খাতাপত্র, শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রার ও পরিদর্শন বহি কেড়ে নিয়ে শিক্ষককের চাকুরী নেই জানিয়ে চলে যেতে বলেন। এ ঘটনায় শিক্ষক শাহাদত সুষ্ঠ বিচার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

শিক্ষক শাহাদত হোসেন জানান, ফিল্ড সুপারভাইজার মুসা আমাকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার কথা বলতেন। চাকুরী ছেড়ে না দেয়ায় বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন। এমনকি ১০ মাসের বেতন বন্ধ রেখেছিলেন। তিনি জিসি সিদ্দিকের মাধ্যমে আমার নিকট ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। আর ঘুষের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় পরিদর্শন বহিতে সাংবাদিকের স্বাক্ষর কেন এই অযুহাতে সমস্ত কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে চাকুরী নেই বলে আমাকে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আমি ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জিসি আবু বক্কর সিদ্দিক ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী পেয়েছি। কিন্তু এর আগে কোন এক সাংবাদিক কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখিয়ে পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করেছেন। শিক্ষক শাহাদত সে অনুযায়ী পরিদর্শন বহিতে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি দেখাতে বলেন। সেটা না করায় আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ মুসা সকল অভিযোগ অস্বীকার এবং সম্পন্ন ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, শিক্ষক শাহাদতের গাফিলতির কারনে এর আগে বেতন বন্ধ করা হয়েছিল। পরে কেন্দ্র সুষ্ঠমতো চালাবেন এমন মুচলেখা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও বার বার সর্তক করেও কোন ফল হচ্ছে না। তবে কেন্দ্র বাতিল বা তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়নি। শুধুমাত্র কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, শিক্ষকের দায়ের করা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।