নীলফামারীতে সেতুর বেহাল দশা সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিতে হাজার মানুষ

  • Update Time : ০৭:৩৯:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / 209

মশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডোমার উপজেলাধীন গোমনাতী ইউনিয়নের শীশাতলা ঘাটে বুড়ী তিস্তা নদীর উপর সেতুটি অবস্থিত। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিতে ২০ হাজর মানুষ। প্রায় ৪/৫ বছর পূর্বে সেতুটির পূর্ব প্রান্তে মোকার মাটি ধসে পড়েছে। মেরামত কিংবা নতুন করে স্থায়ী সমাধানের জন্য দেখার কেউ নেই। অথচ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২/৩শ মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল করে। বিশেষ করে গোমনাতী ইউনিয়নের পূর্বদিকের তিনটি ইউনিয়ন বালাপাড়া, পশ্চিম ছাতনাই ও পূর্বছাতনাই। এই তিন ইউনিয়নের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র সোজা পথ এটা। এই পথের বেহাল অবস্থার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে উক্ত তিন ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। শুধু তাই নয়, সেতুর পূর্ব প্রান্তের অনেক শিক্ষার্থী গোমনাতী স্কুল ও গোমনাতী মহাবিদ্যালয়ে যায় এই পথ বেয়ে। গোমনাতী মহাবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সাইকেল নিয়ে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। অনেক ভয় লাগে। বর্তমানে তো পারাপার হওয়া যাচ্ছে না। বাঁশের সাঁকোটিও ভেঙে গেছে। গোমনাতী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, ভাই আমার বাড়ি পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে। বাড়ি থেকে আমার স্কুল প্রায় ১০ কিঃমি। এইপথে স্কুলে যাতায়াত করি। কিন্তু বর্তমানে সেতুর এমন বেহাল অবস্থার কারণে ২০কিঃমিঃ ঘুরে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এমনিতেই জ্বালানি তেলের দাম বেশি, তার উপর সেতু সংস্কারের অভাবে দুর পথ। এ যেনো মরার উপর খারার ঘা। এছাড়াও আমবারী, গোমনাতী, চিলাহাটি, ভাউলাগঞ্জ, পঞ্চগড় এই এলাকার লোকজনও তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে যেতে এবং ঐসব এলাকার লোকজন ঠাকুরগঞ্জ বাজার যেতে এইপথ ব্যবহার করে। এমনকি পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই ও বালাপাড়া ইউনিয়নের কিছু অংশের প্রায় ১০ হাজার লোকজন ডোমার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী “আমবারী হাট” এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। তারাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে গোমনাতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহমেদ ফয়সাল শুভ বলেন, ভাই আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক করেছি। এখন হালছেড়ে দিয়েছি। এই সেতু বিষয়ে মাননীয় এমপি মহোদয়ও জানেন। তিনি ব্যবস্থা নিবেন। চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের সাথে কিন্তু এলাকাবাসী সহমত পোষণ করেননি। এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, তাদের নিজ উদ্যোগে বার বার সেতুটির মোকায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াতের উপযোগী করে তোলেন। এতে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজনও চলাচল করতে পারে এবং তাদের নিজের পূর্ব পাশের জমিরও আবাদি ফসলও দেখভাল করতে পারেন।
সেতুটির বিষয়ে ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তোফায়েল আহমেদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিডিসমাচার২৪.কমকে বলেন, আমি গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। আমার উপজেলার পক্ষ থেকে খুব দ্রুত যাতায়াতের সুবিধার জন্য মাটি ভরাট করে দিব। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রমিজ আলমের সাথেও তিনি কথা বলেছেন মর্মে উল্লেখ করেন।
বিষয়টি নিয়ে ডোমার উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ এর সাথে কথা হলে, তিনি জানান – ব্রীজটি পুরাতন। এটা নীলফামারী এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। আমাদের নিকট পুরো তথ্য নেই। তবে ১০ হতে ১৫ দিনের মধ্যে চলাচলের জন্য অস্থায়ী মেরামত করে দিবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নীলফামারী নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক বিভিন্ন দপ্তরে প্রাক্কলন দেওয়া আছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার হবে। নীলফামারী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্যে নেওয়া হয়নি।
ভাঙা সেতুর এমন বেহাল অবস্থা সম্পর্কে (ডোমার- ডিমলা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার মহোদয়ের সাথে কথা হলে তিনি বিডিসমাচার২৪.কমকে বলেন, শীশাতলা সেতুটি সংস্কারকল্পে আমি অবগত আছি। খুব শীঘ্রই বরাদ্দ হবে ইনশাআল্লাহ। তখন আর এই ভোগান্তি থাকবে না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নীলফামারীতে সেতুর বেহাল দশা সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিতে হাজার মানুষ

Update Time : ০৭:৩৯:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

মশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডোমার উপজেলাধীন গোমনাতী ইউনিয়নের শীশাতলা ঘাটে বুড়ী তিস্তা নদীর উপর সেতুটি অবস্থিত। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিতে ২০ হাজর মানুষ। প্রায় ৪/৫ বছর পূর্বে সেতুটির পূর্ব প্রান্তে মোকার মাটি ধসে পড়েছে। মেরামত কিংবা নতুন করে স্থায়ী সমাধানের জন্য দেখার কেউ নেই। অথচ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২/৩শ মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল করে। বিশেষ করে গোমনাতী ইউনিয়নের পূর্বদিকের তিনটি ইউনিয়ন বালাপাড়া, পশ্চিম ছাতনাই ও পূর্বছাতনাই। এই তিন ইউনিয়নের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র সোজা পথ এটা। এই পথের বেহাল অবস্থার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে উক্ত তিন ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। শুধু তাই নয়, সেতুর পূর্ব প্রান্তের অনেক শিক্ষার্থী গোমনাতী স্কুল ও গোমনাতী মহাবিদ্যালয়ে যায় এই পথ বেয়ে। গোমনাতী মহাবিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সাইকেল নিয়ে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। অনেক ভয় লাগে। বর্তমানে তো পারাপার হওয়া যাচ্ছে না। বাঁশের সাঁকোটিও ভেঙে গেছে। গোমনাতী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, ভাই আমার বাড়ি পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে। বাড়ি থেকে আমার স্কুল প্রায় ১০ কিঃমি। এইপথে স্কুলে যাতায়াত করি। কিন্তু বর্তমানে সেতুর এমন বেহাল অবস্থার কারণে ২০কিঃমিঃ ঘুরে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এমনিতেই জ্বালানি তেলের দাম বেশি, তার উপর সেতু সংস্কারের অভাবে দুর পথ। এ যেনো মরার উপর খারার ঘা। এছাড়াও আমবারী, গোমনাতী, চিলাহাটি, ভাউলাগঞ্জ, পঞ্চগড় এই এলাকার লোকজনও তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে যেতে এবং ঐসব এলাকার লোকজন ঠাকুরগঞ্জ বাজার যেতে এইপথ ব্যবহার করে। এমনকি পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই ও বালাপাড়া ইউনিয়নের কিছু অংশের প্রায় ১০ হাজার লোকজন ডোমার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী “আমবারী হাট” এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। তারাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে গোমনাতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহমেদ ফয়সাল শুভ বলেন, ভাই আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক করেছি। এখন হালছেড়ে দিয়েছি। এই সেতু বিষয়ে মাননীয় এমপি মহোদয়ও জানেন। তিনি ব্যবস্থা নিবেন। চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের সাথে কিন্তু এলাকাবাসী সহমত পোষণ করেননি। এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, তাদের নিজ উদ্যোগে বার বার সেতুটির মোকায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াতের উপযোগী করে তোলেন। এতে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজনও চলাচল করতে পারে এবং তাদের নিজের পূর্ব পাশের জমিরও আবাদি ফসলও দেখভাল করতে পারেন।
সেতুটির বিষয়ে ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তোফায়েল আহমেদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিডিসমাচার২৪.কমকে বলেন, আমি গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। আমার উপজেলার পক্ষ থেকে খুব দ্রুত যাতায়াতের সুবিধার জন্য মাটি ভরাট করে দিব। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রমিজ আলমের সাথেও তিনি কথা বলেছেন মর্মে উল্লেখ করেন।
বিষয়টি নিয়ে ডোমার উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ এর সাথে কথা হলে, তিনি জানান – ব্রীজটি পুরাতন। এটা নীলফামারী এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। আমাদের নিকট পুরো তথ্য নেই। তবে ১০ হতে ১৫ দিনের মধ্যে চলাচলের জন্য অস্থায়ী মেরামত করে দিবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নীলফামারী নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক বিভিন্ন দপ্তরে প্রাক্কলন দেওয়া আছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার হবে। নীলফামারী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্যে নেওয়া হয়নি।
ভাঙা সেতুর এমন বেহাল অবস্থা সম্পর্কে (ডোমার- ডিমলা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার মহোদয়ের সাথে কথা হলে তিনি বিডিসমাচার২৪.কমকে বলেন, শীশাতলা সেতুটি সংস্কারকল্পে আমি অবগত আছি। খুব শীঘ্রই বরাদ্দ হবে ইনশাআল্লাহ। তখন আর এই ভোগান্তি থাকবে না।