সুন্দরগঞ্জে আশ্রয়ণের ঘরে স্বপ্ন বুনন

  • Update Time : ০৪:২৮:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২
  • / 191

এনামুল হক,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভূমিহীন পরিবার গুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে অনেকেই নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে বসতবাড়ির আঙিনায় ছোট্ট আকারেই বিভিন্ন রকমের সবজির চাষাবাদ করছেন আবার কেউবা করছেন মুদি দোকানের ব্যবসা। ঘর পাওয়ার পরেও সাংসারিক জীবনে অভাব-অনাটন থাকলেও নেই কারে ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কা।চালিয়ে যাচ্ছে জীবন যুদ্ধের লড়াই ভাগ্যের চাকা-কে পরিবর্তন করতে।

শনিবার(১৩ আগষ্ট) উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের পূর্ব রামজীবন গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়,আশ্রয়ণে বসবাসরত কেউ বসে নেই। প্রত্যেকেই কোন না কোন কাজকর্ম করছেন।নিজেকে স্বাবলম্বী করার কঠিন প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। কেউ গরু পালছেন, কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন, কেউ ছাগল পালন করছেন, আবার কেউবা দিয়েছেন দোকান।আবার অনেকেই আশ্রয়ণের ফাকা জায়গাতেই করছেন লাউ,শিম,কদর,মিষ্টিকুমড়া সহ বিভিন্ন রকমের শাক-সবজির চাষ।এতে নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন তারা।এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ঘুরে দেখা যায়,ঘরের পাশে সামান্য ফাকা জায়গাতেও লাগিয়েছেন আম,জাম,কাঠাল সহ বিভিন্ন ফলজ ও কাঠ জাতীয় বৃক্ষ।

এই আশ্রয়ণের বাসিন্দা নরু বক্করের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,আমি একজন অসহায় মানুষ আমার স্ত্রী সন্তানরা ঢাকায় থাকে বিগত দশ বছর ধরে তারা আমার খোঁজখবর রাখেনা। আমি পাখির মত প্রতিনিয়তই যেখানে-সেখানে আশ্রয় নিতাম। নির্ধারিত কোন বসবাসের ঠিকানা ছিলনা। এখন আমি প্রায় এক বছর ধরে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছি। সারাদিন শেষে নিজের ঠিকানা খুঁজে পাই।দিনমজুরের কাজ করি এতে দিনশেষে ৪০০-৪৫০টাকা রোজগার হয় এখান থেকেই নিজের জীবনের চাকা ঘোরানোর চেষ্টা করছি।আমি ঘর পেয়ে আনন্দিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ জানাই তার জন্য দোয়া করি সে যেন অনেকদিন বেঁচে থাকেন।তিনি আরো বলেন,আমি এমন একজন হতভাগা বাপের কোন জমিজমা পাইনি ডালে ডালে ঘুরতাম বসবাসের স্থায়ী ঠিকানাও ছিলনা এমনকি সংসার জীবনের স্ত্রী -সন্তানসহ সবকিছু হারিয়ে এখন আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য কঠিন লড়াই করে যাচ্ছি। কি নাই এখানে সরকার পানি খাওয়ার জন্য টিউবওয়েল দিছে,রাতেরবেলা ঘর যেন অন্ধকার না হয় সেজন্য কারেন্ট দিছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাইছি। কখনো ভাবিনী আমার মত হতভাগার বাড়িঘর হবে স্থায়ী ঠিকানা হবে।

অপরদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত মিলন মিয়া তার স্ত্রী- দুই পুত্র সন্তান কে নিয়ে জীবনের নতুন গল্প বুনছেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে পরিবার নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তিনি।মিলন মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করে সচল করেছেন ভাগ্যের চাকা ফিরেছেন সুখের দিনে।
মিলন মিয়া বলেন, আজকের তার যে অবস্থান তা প্রধানমন্ত্রীর অবদান।কারন আমি আগে অন্যের জায়গায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতাম নিজের ভিটেমাটি বলে কিছু ছিলনা।প্রতিদিন যা রোজগার করতাম সেটা পরিবারের সদস্যদের পিছনে ব্যয় করতাম এমতাবস্থায় জমি কিনে এমন ঘরবাড়ি করা সম্ভব ছিলনা।

 

এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দোকান দিয়ে সুখেই সংসার চালাচ্ছেন এক দম্পতি।স্বামী করেন মাছের ব্যবসা অন্যদিকে স্ত্রী দোকান দিয়েছেন। দুজনে মিলে প্রতিদিন ভালো রোজগার করছেন বলে জানান তারা।দুজনের উপার্জনের কারনে অনেকটাই স্বাবলম্বী এই দম্পতীর পরিবার।বেশ সুখেই কাটছে তাদের দিন।

এক সময় থাকতেন শ্বশুর বাড়ীতে সেখান থেকে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাড়িয়ে দিলে অন্যের জমিতে অস্থায়ীভাবে থাকতেন।নিজের বলে কিছু ছিলনা তার।বর্তমানে এখন তার পাকা ঘর হয়েছে একথা বলতেই অশ্রুসজল আনোয়ার হোসেন।তিনি আরো বলেন,অন্যের জমিতে ছিলাম কতো মাড়ামারি হুড়োহুড়ি কত গালাগালি অত্যাচার -নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।এমনকি ঘরের চালাও ঠিক ছিলনা বর্ষা আসলেই কত কষ্ট করে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতে হতো।এখন কত সুন্দর ঘর পাইছি একবেলা না খেয়ে থাকলেও কেউ কথা বলার নাই।এরকম সুখ আর শান্তিতে আছি তা বলার মত ভাষা নেই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মত ভূমিহীন পরিবারদের ঘর দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে তাই তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখেন ভালো রাখেন।

এ আশ্রয়ণের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা ঘর পেয়ে খুশি ও বেশ সুখে আছেন।বসে না থেকে কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে ইচ্ছুক তাদের।অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন নিজেকে ও নিজের অবস্থান কে পরিবর্তন করার।আবার কেউবা বলছেন, বর্তমানে আমাদের জীবন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।এই বদলে যাওয়া জীবনে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সুন্দরগঞ্জে আশ্রয়ণের ঘরে স্বপ্ন বুনন

Update Time : ০৪:২৮:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২

এনামুল হক,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভূমিহীন পরিবার গুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে অনেকেই নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে বসতবাড়ির আঙিনায় ছোট্ট আকারেই বিভিন্ন রকমের সবজির চাষাবাদ করছেন আবার কেউবা করছেন মুদি দোকানের ব্যবসা। ঘর পাওয়ার পরেও সাংসারিক জীবনে অভাব-অনাটন থাকলেও নেই কারে ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কা।চালিয়ে যাচ্ছে জীবন যুদ্ধের লড়াই ভাগ্যের চাকা-কে পরিবর্তন করতে।

শনিবার(১৩ আগষ্ট) উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের পূর্ব রামজীবন গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়,আশ্রয়ণে বসবাসরত কেউ বসে নেই। প্রত্যেকেই কোন না কোন কাজকর্ম করছেন।নিজেকে স্বাবলম্বী করার কঠিন প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। কেউ গরু পালছেন, কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন, কেউ ছাগল পালন করছেন, আবার কেউবা দিয়েছেন দোকান।আবার অনেকেই আশ্রয়ণের ফাকা জায়গাতেই করছেন লাউ,শিম,কদর,মিষ্টিকুমড়া সহ বিভিন্ন রকমের শাক-সবজির চাষ।এতে নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন তারা।এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ঘুরে দেখা যায়,ঘরের পাশে সামান্য ফাকা জায়গাতেও লাগিয়েছেন আম,জাম,কাঠাল সহ বিভিন্ন ফলজ ও কাঠ জাতীয় বৃক্ষ।

এই আশ্রয়ণের বাসিন্দা নরু বক্করের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,আমি একজন অসহায় মানুষ আমার স্ত্রী সন্তানরা ঢাকায় থাকে বিগত দশ বছর ধরে তারা আমার খোঁজখবর রাখেনা। আমি পাখির মত প্রতিনিয়তই যেখানে-সেখানে আশ্রয় নিতাম। নির্ধারিত কোন বসবাসের ঠিকানা ছিলনা। এখন আমি প্রায় এক বছর ধরে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছি। সারাদিন শেষে নিজের ঠিকানা খুঁজে পাই।দিনমজুরের কাজ করি এতে দিনশেষে ৪০০-৪৫০টাকা রোজগার হয় এখান থেকেই নিজের জীবনের চাকা ঘোরানোর চেষ্টা করছি।আমি ঘর পেয়ে আনন্দিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ জানাই তার জন্য দোয়া করি সে যেন অনেকদিন বেঁচে থাকেন।তিনি আরো বলেন,আমি এমন একজন হতভাগা বাপের কোন জমিজমা পাইনি ডালে ডালে ঘুরতাম বসবাসের স্থায়ী ঠিকানাও ছিলনা এমনকি সংসার জীবনের স্ত্রী -সন্তানসহ সবকিছু হারিয়ে এখন আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য কঠিন লড়াই করে যাচ্ছি। কি নাই এখানে সরকার পানি খাওয়ার জন্য টিউবওয়েল দিছে,রাতেরবেলা ঘর যেন অন্ধকার না হয় সেজন্য কারেন্ট দিছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাইছি। কখনো ভাবিনী আমার মত হতভাগার বাড়িঘর হবে স্থায়ী ঠিকানা হবে।

অপরদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত মিলন মিয়া তার স্ত্রী- দুই পুত্র সন্তান কে নিয়ে জীবনের নতুন গল্প বুনছেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে পরিবার নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তিনি।মিলন মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করে সচল করেছেন ভাগ্যের চাকা ফিরেছেন সুখের দিনে।
মিলন মিয়া বলেন, আজকের তার যে অবস্থান তা প্রধানমন্ত্রীর অবদান।কারন আমি আগে অন্যের জায়গায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতাম নিজের ভিটেমাটি বলে কিছু ছিলনা।প্রতিদিন যা রোজগার করতাম সেটা পরিবারের সদস্যদের পিছনে ব্যয় করতাম এমতাবস্থায় জমি কিনে এমন ঘরবাড়ি করা সম্ভব ছিলনা।

 

এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দোকান দিয়ে সুখেই সংসার চালাচ্ছেন এক দম্পতি।স্বামী করেন মাছের ব্যবসা অন্যদিকে স্ত্রী দোকান দিয়েছেন। দুজনে মিলে প্রতিদিন ভালো রোজগার করছেন বলে জানান তারা।দুজনের উপার্জনের কারনে অনেকটাই স্বাবলম্বী এই দম্পতীর পরিবার।বেশ সুখেই কাটছে তাদের দিন।

এক সময় থাকতেন শ্বশুর বাড়ীতে সেখান থেকে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাড়িয়ে দিলে অন্যের জমিতে অস্থায়ীভাবে থাকতেন।নিজের বলে কিছু ছিলনা তার।বর্তমানে এখন তার পাকা ঘর হয়েছে একথা বলতেই অশ্রুসজল আনোয়ার হোসেন।তিনি আরো বলেন,অন্যের জমিতে ছিলাম কতো মাড়ামারি হুড়োহুড়ি কত গালাগালি অত্যাচার -নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।এমনকি ঘরের চালাও ঠিক ছিলনা বর্ষা আসলেই কত কষ্ট করে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতে হতো।এখন কত সুন্দর ঘর পাইছি একবেলা না খেয়ে থাকলেও কেউ কথা বলার নাই।এরকম সুখ আর শান্তিতে আছি তা বলার মত ভাষা নেই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মত ভূমিহীন পরিবারদের ঘর দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে তাই তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখেন ভালো রাখেন।

এ আশ্রয়ণের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা ঘর পেয়ে খুশি ও বেশ সুখে আছেন।বসে না থেকে কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে ইচ্ছুক তাদের।অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন নিজেকে ও নিজের অবস্থান কে পরিবর্তন করার।আবার কেউবা বলছেন, বর্তমানে আমাদের জীবন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।এই বদলে যাওয়া জীবনে পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি।