সুন্দরগঞ্জে কোরবানির পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়

  • Update Time : ০৪:৩১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • / 173

এনামুল হক,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে খাজনা বা হাসিল আদায়ে কোনো নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। হাটের ইজারাদাররা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকেই খাজনা বা হাসিল আদায় করছেন। এমনকি হাটে টাঙানো হয়নি সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায়ের তালিকাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা হাট-বাজারের নতুন হাসিল রেট অনুসারে একটি গরু কিনলে শুধুমাত্র ক্রেতাকে খাজনা দিতে হবে ৪০০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫০ টাকা হাসিল বা খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই খাজনাও দেবেন কেবল ক্রেতা। বিক্রেতা কোনো হাসিল বা খাজনা দেবেন না।অথচ এই কথার কোনো মূল্য দিচ্ছেই না ইজারদারেরা।

কিন্তু সুন্দরগঞ্জের হাটগুলোতে ইজারাদারেরা প্রতিটি গরু ক্রেতার কাছ থেকে ৬০০ টাকা, বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ক্রেতার কাছ থেকে ৩০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করছেন। পশুরহাটে খাজনা আদায়ের তালিকা টাঙানোর বিষয়ে ইজারাদারদের প্রতি সরকারিভাবে নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। ফলে তারা শুধু পশুর হাট থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতা ও পশু ব্যবসায়ীরা।

কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা ও বিক্রেতার সাথে । উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের শোভাগঞ্জ হাটে একজন গরু ক্রেতা বলেন,আমি দিনমজুর মানুষ দারিদ্রতার মধ্যে বহু কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে একটি ষাঁড় গরু ক্রয় করার জন্য হাটে এসেছি হাটে গরু কেনার পর খাজনা ৬০০টাকা দিতে হলো।আমার বাপ-দাদারা হাটে গরু ছাগল কিনেছিল তখন তাদের টাকা লাগে নাই আর এখন হাটে পশু কিনলেও টাকা বিক্রি করলেও টাকা লাগে।

অপর দিকে শোভাগঞ্জ হাটে গরু বিক্রেতা বলেন,আমি গরীব মানুষ বহু দূঃখ কষ্ট করে একটি গাভী লালন-পালন করেছিলাম হঠাৎ পারিবারিক জীবনে দূঃখ কষ্টের ঢোল নেমে আসায় আজকে হাটে বিক্রি করতে আসছি। সেটি বিক্রি করে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ, দেনা পরিশোধ, ভাঙ্গা ঘর মেরামত করে ঈদের কেনাকাটা করবেন। গাভীটি শনিবার শোভাগঞ্জ হাটে আনেন। সেটি ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করার সময় তার কাছ থেকে ২০০ টাকা ও ক্রেতার কাছ থেকে ৬০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।

গরু ক্রেতা ও বিক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন এতো কষ্টে করে গাভীটি লালন পালন করে ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম পরে ইজারাদার আমার কাছে থেকে ২০০টাকা ও ক্রেতার ৬০০টাকা খাজনা কেটে নিলো।

এভাবে টাকা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে শোভাগঞ্জ হাটের ইজারাদারের নিয়োগ করা কর্মীরা কোন উত্তর দেননি।

একই চিত্র দেখা গেছে, মীরগঞ্জ, বেলকা,শোভাগঞ্জ সহ উপজেলার প্রায় সব পশুরহাট গুলোতে। সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত মনগড়াভাবে খাজনার নাম দিয়ে অর্থ লুটে নিচ্ছে ইজারাদাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এসব হাটগুলোতে যারা পশু বিক্রি করতে আসেন তারা বেশিরভাগই আশপাশের গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষক বা ছোট ব্যবসায়ী। তাই সহজে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তারা। তাদের অভিযোগ, ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। এভাবে টাকা আদায় করাকে তারা পরোক্ষভাবে চাঁদাবাজি বলেও মনে করছেন।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ জানান,পশুরহাটে খাজনা আদায়ের জন্য ইজারাদারদের নির্ধারিত তালিকা টাঙিয়ে সে মোতাবেক খাজনা আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি এর কোন ব্যত্যয় ঘটে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সুন্দরগঞ্জে কোরবানির পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়

Update Time : ০৪:৩১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

এনামুল হক,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে খাজনা বা হাসিল আদায়ে কোনো নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। হাটের ইজারাদাররা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকেই খাজনা বা হাসিল আদায় করছেন। এমনকি হাটে টাঙানো হয়নি সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায়ের তালিকাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা হাট-বাজারের নতুন হাসিল রেট অনুসারে একটি গরু কিনলে শুধুমাত্র ক্রেতাকে খাজনা দিতে হবে ৪০০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫০ টাকা হাসিল বা খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই খাজনাও দেবেন কেবল ক্রেতা। বিক্রেতা কোনো হাসিল বা খাজনা দেবেন না।অথচ এই কথার কোনো মূল্য দিচ্ছেই না ইজারদারেরা।

কিন্তু সুন্দরগঞ্জের হাটগুলোতে ইজারাদারেরা প্রতিটি গরু ক্রেতার কাছ থেকে ৬০০ টাকা, বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ক্রেতার কাছ থেকে ৩০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করছেন। পশুরহাটে খাজনা আদায়ের তালিকা টাঙানোর বিষয়ে ইজারাদারদের প্রতি সরকারিভাবে নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। ফলে তারা শুধু পশুর হাট থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতা ও পশু ব্যবসায়ীরা।

কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা ও বিক্রেতার সাথে । উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের শোভাগঞ্জ হাটে একজন গরু ক্রেতা বলেন,আমি দিনমজুর মানুষ দারিদ্রতার মধ্যে বহু কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে একটি ষাঁড় গরু ক্রয় করার জন্য হাটে এসেছি হাটে গরু কেনার পর খাজনা ৬০০টাকা দিতে হলো।আমার বাপ-দাদারা হাটে গরু ছাগল কিনেছিল তখন তাদের টাকা লাগে নাই আর এখন হাটে পশু কিনলেও টাকা বিক্রি করলেও টাকা লাগে।

অপর দিকে শোভাগঞ্জ হাটে গরু বিক্রেতা বলেন,আমি গরীব মানুষ বহু দূঃখ কষ্ট করে একটি গাভী লালন-পালন করেছিলাম হঠাৎ পারিবারিক জীবনে দূঃখ কষ্টের ঢোল নেমে আসায় আজকে হাটে বিক্রি করতে আসছি। সেটি বিক্রি করে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ, দেনা পরিশোধ, ভাঙ্গা ঘর মেরামত করে ঈদের কেনাকাটা করবেন। গাভীটি শনিবার শোভাগঞ্জ হাটে আনেন। সেটি ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করার সময় তার কাছ থেকে ২০০ টাকা ও ক্রেতার কাছ থেকে ৬০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।

গরু ক্রেতা ও বিক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন এতো কষ্টে করে গাভীটি লালন পালন করে ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম পরে ইজারাদার আমার কাছে থেকে ২০০টাকা ও ক্রেতার ৬০০টাকা খাজনা কেটে নিলো।

এভাবে টাকা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে শোভাগঞ্জ হাটের ইজারাদারের নিয়োগ করা কর্মীরা কোন উত্তর দেননি।

একই চিত্র দেখা গেছে, মীরগঞ্জ, বেলকা,শোভাগঞ্জ সহ উপজেলার প্রায় সব পশুরহাট গুলোতে। সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত মনগড়াভাবে খাজনার নাম দিয়ে অর্থ লুটে নিচ্ছে ইজারাদাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এসব হাটগুলোতে যারা পশু বিক্রি করতে আসেন তারা বেশিরভাগই আশপাশের গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষক বা ছোট ব্যবসায়ী। তাই সহজে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তারা। তাদের অভিযোগ, ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। এভাবে টাকা আদায় করাকে তারা পরোক্ষভাবে চাঁদাবাজি বলেও মনে করছেন।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ জানান,পশুরহাটে খাজনা আদায়ের জন্য ইজারাদারদের নির্ধারিত তালিকা টাঙিয়ে সে মোতাবেক খাজনা আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি এর কোন ব্যত্যয় ঘটে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।