গ্যাস সংকট, যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

  • Update Time : ০৭:৩২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০২২
  • / 161

এমরান হোসেন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ 

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী যমুনা সার কারখানাটি গত কয়েকদিন যাবৎ গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) বিভাগ।

কারখানার একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, যমুনা সার কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৭শ মে.টন। কিন্তু গ্যাসের চাপ কম থাকায় তা ১৩শ ২৬ মে.টনে নেমে আসে। চলতি মাসে ৪১ হাজার মে.টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা থাকলেও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে যেতে পারছেনা যমুনা সার কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা চালাতে হলে চাহিদা অনুযায়ী যে চাপে ও পরিমানে স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ করা প্রয়োজন তা সরবরাহ হচ্ছে না। তাই উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিআইসির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিডিসমাচার টোয়েন্টিফোর ডটকম কে জানান, চলতি বছরের (২৭ মার্চ) যমুনা সার কারখানার শর্ট শাট ডাউন শুরু হয়। শর্ট শাট ডাউন শেষে গত (২ মে) আবার উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর আবারও অ্যামোনিয়া প্লান্টের ২ নং বিএফডব্লিউ প্রি-হিটারের এসি-ই-০৫এ/বি এর ক্যাপ ফ্লাঞ্জের ওয়েলডিং ফেল করে। এতে ব্যাপক হারে গ্যাস নির্গত হতে থাকে এবং আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তাই কারখানার নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরো অ্যামোনিয়া প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে গত ১১মে মেরামত এর কাজ শেষ করে, পরেরদিন ১২মে ওই লিকেজ টেস্ট করে সঠিক পাওয়া যায় বলে জানান। এরপর উৎপাদনে গেলে যে পরিমাণের গ্যাসের প্রয়োজন হয়। সেই পরিমাণের গ্যাস না থাকায় সংকট দেখা দেয়।

জানা যায়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে বেশ কয়েকটি ধাপে নির্ধারিত চাপে ও পরিমানে গ্যাসের প্রয়োজন হয়। ১ম ধাপে ২৮ এমএমসিএফ,২য় ধাপে ৩৩ এমএমসিএফ , ৩য় ধাপে ৩৫ এমএমসিএফ, ৪র্থ ধাপে ৩৮ এমএমসিএফ ও ৫ম ধাপে ৪২ এমএমসিএফ গ্যাসের প্রয়োজন হয়।প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর সুষ্ঠু ও নিরাপদে কারখানা চালাতে সার্বক্ষনিক ২৫কেজি চাপে ৪৫.০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন।

কিন্তু কোনভাবেই গ্যাসের চাপ স্থিতিশীল না হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ পুনরায় উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তারা জানান, ওইদিন সকাল ৭টায় গ্যাসের চাপ ছিল ১৬.৯০ কেজি। বিকেল ৬টায় তা ৬.৩০ কেজিতে নেমে আসে। এভাবে দ্রুত গ্যাসের চাপ কমতে থাকায় কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় আসে কর্তৃপক্ষের। পরে প্রাইমারী রিফরমারের ১৬০টি বার্নারের ১৪০টিই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। যমুনা সার কারখানা একটি অত্যাধুনিক ভারী শিল্প কারখানা। এ কারখানার লোড ঘনঘন উঠানামা করা হলে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ব্যাপকহারে ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে বলেও ওই সুত্রটি দাবি করে।

এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আব্দুল হালিম বিডিসমাচার টোয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, কারখানাটি সুষ্ঠু ও নিরাপদে চালু রাখতে হলে চাহিদা মাফিক চাপে ও পরিমানে স্থিতিশীলভাবে সার্বক্ষনিক গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন। উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্যান্য ধাপ সম্পন্ন করতে হলে ২৫ কেজি চাপে দৈনিক ৪৫.০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


গ্যাস সংকট, যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

Update Time : ০৭:৩২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০২২

এমরান হোসেন, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ 

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী যমুনা সার কারখানাটি গত কয়েকদিন যাবৎ গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) বিভাগ।

কারখানার একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, যমুনা সার কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৭শ মে.টন। কিন্তু গ্যাসের চাপ কম থাকায় তা ১৩শ ২৬ মে.টনে নেমে আসে। চলতি মাসে ৪১ হাজার মে.টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা থাকলেও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে যেতে পারছেনা যমুনা সার কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানা চালাতে হলে চাহিদা অনুযায়ী যে চাপে ও পরিমানে স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ করা প্রয়োজন তা সরবরাহ হচ্ছে না। তাই উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিআইসির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিডিসমাচার টোয়েন্টিফোর ডটকম কে জানান, চলতি বছরের (২৭ মার্চ) যমুনা সার কারখানার শর্ট শাট ডাউন শুরু হয়। শর্ট শাট ডাউন শেষে গত (২ মে) আবার উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর আবারও অ্যামোনিয়া প্লান্টের ২ নং বিএফডব্লিউ প্রি-হিটারের এসি-ই-০৫এ/বি এর ক্যাপ ফ্লাঞ্জের ওয়েলডিং ফেল করে। এতে ব্যাপক হারে গ্যাস নির্গত হতে থাকে এবং আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তাই কারখানার নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরো অ্যামোনিয়া প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে গত ১১মে মেরামত এর কাজ শেষ করে, পরেরদিন ১২মে ওই লিকেজ টেস্ট করে সঠিক পাওয়া যায় বলে জানান। এরপর উৎপাদনে গেলে যে পরিমাণের গ্যাসের প্রয়োজন হয়। সেই পরিমাণের গ্যাস না থাকায় সংকট দেখা দেয়।

জানা যায়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে বেশ কয়েকটি ধাপে নির্ধারিত চাপে ও পরিমানে গ্যাসের প্রয়োজন হয়। ১ম ধাপে ২৮ এমএমসিএফ,২য় ধাপে ৩৩ এমএমসিএফ , ৩য় ধাপে ৩৫ এমএমসিএফ, ৪র্থ ধাপে ৩৮ এমএমসিএফ ও ৫ম ধাপে ৪২ এমএমসিএফ গ্যাসের প্রয়োজন হয়।প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর সুষ্ঠু ও নিরাপদে কারখানা চালাতে সার্বক্ষনিক ২৫কেজি চাপে ৪৫.০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন।

কিন্তু কোনভাবেই গ্যাসের চাপ স্থিতিশীল না হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ পুনরায় উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তারা জানান, ওইদিন সকাল ৭টায় গ্যাসের চাপ ছিল ১৬.৯০ কেজি। বিকেল ৬টায় তা ৬.৩০ কেজিতে নেমে আসে। এভাবে দ্রুত গ্যাসের চাপ কমতে থাকায় কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় আসে কর্তৃপক্ষের। পরে প্রাইমারী রিফরমারের ১৬০টি বার্নারের ১৪০টিই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। যমুনা সার কারখানা একটি অত্যাধুনিক ভারী শিল্প কারখানা। এ কারখানার লোড ঘনঘন উঠানামা করা হলে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ব্যাপকহারে ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে বলেও ওই সুত্রটি দাবি করে।

এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আব্দুল হালিম বিডিসমাচার টোয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, কারখানাটি সুষ্ঠু ও নিরাপদে চালু রাখতে হলে চাহিদা মাফিক চাপে ও পরিমানে স্থিতিশীলভাবে সার্বক্ষনিক গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন। উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্যান্য ধাপ সম্পন্ন করতে হলে ২৫ কেজি চাপে দৈনিক ৪৫.০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন।