মিরসরাইয়ে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত জনপদ

  • Update Time : ০৫:৩০:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
  • / 150

কমল পাটোয়ারী, মিরসরাই, চট্রগ্রামঃ

ষড়ঋতুর আবর্তে আবারো এলো শীত। শীত এলেই শুরু হয় পরিযায়ী তথা অতিথি পাখির আগমন। এ সময়টাতে মেরু অঞ্চল, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত বরফ পড়ার কারণে তুলনামূলক কম শীতের বাংলাদেশে খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় চলে আসে অতিথি পাখিরা। এ সময় বাংলাদেশের হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কলকাকলিতে। তবে এ পরিযায়ী পাখিরা দেশের সব স্থানে আসে না। খাদ্যের যেমন প্রাচুর্য রয়েছে, তেমনি জলাশয় ও বিশালাকার জলাভূমি এলাকাগুলো বেছে নেয় এরা। আর এমন অনুকূল পরিবেশ-প্রতিবেশ পেয়েই পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক মিরসরাইয়ের মহামায়া।
একসময় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার সুবিশাল বিল আর জলাশয়। তবে এখন এ অঞ্চলে পাখিদের আগমন অনেকাংশে কমে এসেছে। যত্রতত্র পাখি শিকার আর কৃত্রিম মাছের প্রকল্পে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বর্তমানে পাখিদের বিচরণ কমতে শুরু করেছে বলে ধারণা করছেন এলাকার লোকজন ও পরিবেশবিদরা।

এখন মিরসরাইয়ের প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার লেক পরিযায়ী পাখিদের দখলে। শীতের শুরু থেকে তারা এখানে আসতে শুরু করে। পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত পুরো এলাকা। মহামায়ায় আগত পর্যটকরাও মনভরে উপভোগ করছেন পাখিদের ওড়াউড়ি, কলকাকলি আর কিচিরমিচির ডাক।

ডিঙি নৌকায় চড়ে লেকের কাফতলি এলাকায় দেখা মেলে পরিযায়ীদের। ক্যামেরায় ক্লিক পড়তেই ঝাঁক বেঁধে কিচিরমিচির শব্দে উড়তে শুরু করে আকাশে। লেকের চার দিক চেয়ে দেখা মেলে নানা প্রজাতির ছোট-বড় অসংখ্য পাখির।

মহামায়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক ও পাখিপ্রেমী ওমর হাসান বলেন, আমি পাখিপ্রিয় মানুষ। একসময় বাসায় পাখি লালন-পালন করতাম। কিন্তু সেই পাখিদের ছেড়ে দিয়েছি। গত বছর শীতের সকালে পাখি দেখব বলে মহামায়ায় এসেছিলাম। এখানে পাখিদের দলবেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ানো আর কলকাকলি দেখে ভালো লেগেছে।

লেকের একজন ডিঙি নৌকার মাঝি সোহরাব হোসেন জানান, মাঝে মধ্যে বন্দুক নিয়ে অনেকে পাখি শিকারে আসে। ইদানীং শিকারিরা খুব একটা আসে না।
প্রতি বছর পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠে মহামায়া। পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করে এটি। পাখি গবেষকের পরামর্শ নিয়ে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এটিও হতে পারে পাখিদের বড় অভয়াশ্রম।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে গাংচিল আর লেন্জা প্রকৃতির পাখি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির পাখি এখানে চোখে পড়ে না। তারা এর জন্য শিকারিদের শ্যেনদৃষ্টি আর মাছ চাষের প্রকল্পে ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহারকে দায়ী করেন।
মুহুরী প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান নয়ন জানান, একসময় শীতের শুরুতেই দলে দলে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটত মুহুরী প্রকল্প এলাকায়। বিকেল বেলায় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এখানকার গ্রামগুলো মুখরিত হতো। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে।

মিরসরাইয়ের ভারপ্রাপ্ত উপকূলীয় বন রেঞ্জ কর্মকর্তা এরফান উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা পাখি ধরা কিংবা শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। এখনো আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। যে কেউ আমাদের এমন অপরাধের তথ্য দিলে আমরা তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মিরসরাইয়ে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত জনপদ

Update Time : ০৫:৩০:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

কমল পাটোয়ারী, মিরসরাই, চট্রগ্রামঃ

ষড়ঋতুর আবর্তে আবারো এলো শীত। শীত এলেই শুরু হয় পরিযায়ী তথা অতিথি পাখির আগমন। এ সময়টাতে মেরু অঞ্চল, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত বরফ পড়ার কারণে তুলনামূলক কম শীতের বাংলাদেশে খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় চলে আসে অতিথি পাখিরা। এ সময় বাংলাদেশের হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কলকাকলিতে। তবে এ পরিযায়ী পাখিরা দেশের সব স্থানে আসে না। খাদ্যের যেমন প্রাচুর্য রয়েছে, তেমনি জলাশয় ও বিশালাকার জলাভূমি এলাকাগুলো বেছে নেয় এরা। আর এমন অনুকূল পরিবেশ-প্রতিবেশ পেয়েই পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক মিরসরাইয়ের মহামায়া।
একসময় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার সুবিশাল বিল আর জলাশয়। তবে এখন এ অঞ্চলে পাখিদের আগমন অনেকাংশে কমে এসেছে। যত্রতত্র পাখি শিকার আর কৃত্রিম মাছের প্রকল্পে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বর্তমানে পাখিদের বিচরণ কমতে শুরু করেছে বলে ধারণা করছেন এলাকার লোকজন ও পরিবেশবিদরা।

এখন মিরসরাইয়ের প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার লেক পরিযায়ী পাখিদের দখলে। শীতের শুরু থেকে তারা এখানে আসতে শুরু করে। পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত পুরো এলাকা। মহামায়ায় আগত পর্যটকরাও মনভরে উপভোগ করছেন পাখিদের ওড়াউড়ি, কলকাকলি আর কিচিরমিচির ডাক।

ডিঙি নৌকায় চড়ে লেকের কাফতলি এলাকায় দেখা মেলে পরিযায়ীদের। ক্যামেরায় ক্লিক পড়তেই ঝাঁক বেঁধে কিচিরমিচির শব্দে উড়তে শুরু করে আকাশে। লেকের চার দিক চেয়ে দেখা মেলে নানা প্রজাতির ছোট-বড় অসংখ্য পাখির।

মহামায়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক ও পাখিপ্রেমী ওমর হাসান বলেন, আমি পাখিপ্রিয় মানুষ। একসময় বাসায় পাখি লালন-পালন করতাম। কিন্তু সেই পাখিদের ছেড়ে দিয়েছি। গত বছর শীতের সকালে পাখি দেখব বলে মহামায়ায় এসেছিলাম। এখানে পাখিদের দলবেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ানো আর কলকাকলি দেখে ভালো লেগেছে।

লেকের একজন ডিঙি নৌকার মাঝি সোহরাব হোসেন জানান, মাঝে মধ্যে বন্দুক নিয়ে অনেকে পাখি শিকারে আসে। ইদানীং শিকারিরা খুব একটা আসে না।
প্রতি বছর পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠে মহামায়া। পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করে এটি। পাখি গবেষকের পরামর্শ নিয়ে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এটিও হতে পারে পাখিদের বড় অভয়াশ্রম।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে গাংচিল আর লেন্জা প্রকৃতির পাখি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির পাখি এখানে চোখে পড়ে না। তারা এর জন্য শিকারিদের শ্যেনদৃষ্টি আর মাছ চাষের প্রকল্পে ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহারকে দায়ী করেন।
মুহুরী প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান নয়ন জানান, একসময় শীতের শুরুতেই দলে দলে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটত মুহুরী প্রকল্প এলাকায়। বিকেল বেলায় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এখানকার গ্রামগুলো মুখরিত হতো। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে।

মিরসরাইয়ের ভারপ্রাপ্ত উপকূলীয় বন রেঞ্জ কর্মকর্তা এরফান উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা পাখি ধরা কিংবা শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। এখনো আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। যে কেউ আমাদের এমন অপরাধের তথ্য দিলে আমরা তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।