প্রকাশ্যে সিল মারা নির্বাচন আর চাই না: সিইসি

  • Update Time : ০২:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
  • / 106

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ জনগণ যদি বলে এবারের নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়েছে, তবেই এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষীপুর দুটি আসনের উপনির্বাচনে দেখা গেছে যে, প্রকাশ্যে সিল মারা হচ্ছে। ওই নিবার্চনের জন্য আমরা লজ্জিত। আমরা এরকম নির্বাচন আর চাই না।

সিইসি বলেন, ‘আমি আগে বিচার বিভাগে কাজ করেছি। বিচার বিভাগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো স্বাধীনতা। দেশের মানুষ বিচার বিভাগকেই স্বাধীন বলে বিবেচনা করে। দেশের মানুষের আস্থাটা বিচার বিভাগের ওপর সবচেয়ে বেশি। তাই আপনারা যেখানে কাজ করবেন সেখানে স্বাধীন ও স্বচ্ছতার ভেতরে কাজ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্রি-ফেয়ার এবং ক্রেডিবল নির্বাচন চাচ্ছি। বিদেশিরাও চাচ্ছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন ফ্রি-ফেয়ার ও ক্রেডিবল হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি ফ্রি ফেয়ার নির্বাচনের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে কখনোই নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রশাসন এবং আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আপনারা চোখ কান খোলা রেখে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আইনে বলা আছে যে, নির্বাচনের ২১ দিন আগে কখনো নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। যখন প্রচারণা শুরু হবে তখন থেকে আপনাদের আরও বেশি অ্যাটেনশন দিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশি ভারসাম্য তৈরি করে স্বাধীন বিচার বিভাগ। আপনারা দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে নির্বাচনটাকে স্বচ্ছ রাখার জন্য আপনারা সততা ও সাহসিকতা দিয়ে নির্বাচনের যতদূর সম্ভব সাহায্য করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশ কিন্তু একটি সংকটে আছে। এই জায়গায় আমাদের সবাইকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা খুশি হয়ে ৩০০ ইলেক্টোরাল কমিটি গঠন করেছি। আমাদের গণতন্ত্র অনেক নতুন হলেও আমাদের অনেক ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছে। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেও আপনাদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। নির্বাচনের দিনটা আমি বলবো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা যদি দেখি যে, নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এরপর যদি দেখি লাইনটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে আছে তাহলে মনে করতে হবে অন্য কোনো কাজ করা হচ্ছে। আপনাদের দেখতে হবে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছে কি না।’

‘নির্বাচনকে জনগণের কাছে স্বচ্ছ করে তুলতে হবে। সাংবাদিক ও অবজারভাররা নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য সংবাদ সংগ্রহ করবেন। আমি বলবো যদি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয় তাহলে সেই ভোট ডাকাতির প্রচারটাও হোক। ভোট যদি স্বচ্ছ হয় তাহলে সেটিরও প্রচার হবে। আমি চাই নির্বাচনের সত্য ও বাস্তব চিত্রটা মিডিয়াকর্মীরা তুলে ধরবেন।’

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনের জন্য যে কয়টা আইন আছে তার মধ্যে আরপিও গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির আগের নির্বাচনের জন্য একটি বা দুটি কমিটি গঠন করা হত। এবারই প্রথম বড় পরিসরে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আপনাদের সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আপনাদের যে দায়িত্বে নিয়োজিত করেছে, সে দায়িত্ব যথাযথভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।’

অনুষ্ঠানে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


প্রকাশ্যে সিল মারা নির্বাচন আর চাই না: সিইসি

Update Time : ০২:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নির্বাচনকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সাধারণ জনগণ যদি বলে এবারের নির্বাচন ফ্রি-ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়েছে, তবেই এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষীপুর দুটি আসনের উপনির্বাচনে দেখা গেছে যে, প্রকাশ্যে সিল মারা হচ্ছে। ওই নিবার্চনের জন্য আমরা লজ্জিত। আমরা এরকম নির্বাচন আর চাই না।

সিইসি বলেন, ‘আমি আগে বিচার বিভাগে কাজ করেছি। বিচার বিভাগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো স্বাধীনতা। দেশের মানুষ বিচার বিভাগকেই স্বাধীন বলে বিবেচনা করে। দেশের মানুষের আস্থাটা বিচার বিভাগের ওপর সবচেয়ে বেশি। তাই আপনারা যেখানে কাজ করবেন সেখানে স্বাধীন ও স্বচ্ছতার ভেতরে কাজ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্রি-ফেয়ার এবং ক্রেডিবল নির্বাচন চাচ্ছি। বিদেশিরাও চাচ্ছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন ফ্রি-ফেয়ার ও ক্রেডিবল হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি ফ্রি ফেয়ার নির্বাচনের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে কখনোই নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রশাসন এবং আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আপনারা চোখ কান খোলা রেখে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আইনে বলা আছে যে, নির্বাচনের ২১ দিন আগে কখনো নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। যখন প্রচারণা শুরু হবে তখন থেকে আপনাদের আরও বেশি অ্যাটেনশন দিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশি ভারসাম্য তৈরি করে স্বাধীন বিচার বিভাগ। আপনারা দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে নির্বাচনটাকে স্বচ্ছ রাখার জন্য আপনারা সততা ও সাহসিকতা দিয়ে নির্বাচনের যতদূর সম্ভব সাহায্য করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশ কিন্তু একটি সংকটে আছে। এই জায়গায় আমাদের সবাইকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা খুশি হয়ে ৩০০ ইলেক্টোরাল কমিটি গঠন করেছি। আমাদের গণতন্ত্র অনেক নতুন হলেও আমাদের অনেক ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছে। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেও আপনাদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। নির্বাচনের দিনটা আমি বলবো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা যদি দেখি যে, নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এরপর যদি দেখি লাইনটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে আছে তাহলে মনে করতে হবে অন্য কোনো কাজ করা হচ্ছে। আপনাদের দেখতে হবে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছে কি না।’

‘নির্বাচনকে জনগণের কাছে স্বচ্ছ করে তুলতে হবে। সাংবাদিক ও অবজারভাররা নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য সংবাদ সংগ্রহ করবেন। আমি বলবো যদি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয় তাহলে সেই ভোট ডাকাতির প্রচারটাও হোক। ভোট যদি স্বচ্ছ হয় তাহলে সেটিরও প্রচার হবে। আমি চাই নির্বাচনের সত্য ও বাস্তব চিত্রটা মিডিয়াকর্মীরা তুলে ধরবেন।’

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনের জন্য যে কয়টা আইন আছে তার মধ্যে আরপিও গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির আগের নির্বাচনের জন্য একটি বা দুটি কমিটি গঠন করা হত। এবারই প্রথম বড় পরিসরে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আপনাদের সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আপনাদের যে দায়িত্বে নিয়োজিত করেছে, সে দায়িত্ব যথাযথভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।’

অনুষ্ঠানে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।