বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা

  • Update Time : ১০:০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / 126

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০-এরও বেশি শহরের মোটরযানের গড় গতি নিয়ে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর)।

গবেষণার সূচকে ঢাকার পয়েন্ট শূন্য দশমিক ৬০। পরের অবস্থানে নাইজেরিয়ার লাগোস, পয়েন্ট শূন্য দশমিক ৫২।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘দ্য ফাস্ট, দ্য স্লো, অ্যান্ড দ্য কনজাস্টেড : আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন রিচ অ্যান্ড পুওর কান্ট্রিস’ শীর্ষক ওই গবেষণা গত আগস্টে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় পৃথিবীর ১৫২টি দেশের এক হাজার ২০০ শহর নিয়ে কাজ করা হয়। চীন ও উত্তর কোরিয়া গবেষণার আওতায় ছিল না।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধীরগতির শহরের তালিকায় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের নামও আছে। ময়মনসিংহের অবস্থান নবম, চট্টগ্রাম ১২তম। উল্টো দিকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ গতিশীল শহরের ১৯টিই যুক্তরাষ্ট্রে।

দরিদ্র ও ধনী দেশের তুলনা করতে গিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, গরিব দেশের তুলনায় ধনী দেশের শহরে গাড়ির গতি অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। যে শহরের গতি বেশি সে শহরের মাথাপিছু আয়ও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এই গবেষণা প্রসঙ্গে এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘গবেষণার এমন ফলাফল নিয়ে আমরা চিন্তিত, এটা ভয়ংকর। এই গবেষণা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমাদের যানজট মূল সড়ক থেকে শাখা সড়কে চলে যাচ্ছে।’

হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা একেবারেই করতে পারিনি। এ কারণেই যখন আমাদের সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকে, তখনো বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় আমাদের শহর ধীরগতির হয়ে যায়। অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট কমানো আর সম্ভব না। এখন সময় এসেছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’

২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে ব্যস্ত সময়ে (পিক টাইমে) চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০২২ সালে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। উল্টো দিকে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি।

বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রকাশনী সংস্থা প্লাস ওয়ান জার্নাল এক গবেষণায় বলছে, ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪.৮২ কিলোমিটার। আর সত্তরোর্ধ্ব মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এভাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার, যা বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি।

ঢাকা শহরের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করা হয়েছিল, ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে ঢাকার সড়কের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট যখন থাকে না, তখনো ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি বিশ্বের অন্য শহরগুলোর চেয়ে কম। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ শহরের সড়কগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে। তবে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার সড়কগুলোর যে সক্ষমতা তা বিবেচনায় নিয়ে চলাচলের জন্য যানবাহনের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া জরুরি। ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে কিছুটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা

Update Time : ১০:০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০-এরও বেশি শহরের মোটরযানের গড় গতি নিয়ে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর)।

গবেষণার সূচকে ঢাকার পয়েন্ট শূন্য দশমিক ৬০। পরের অবস্থানে নাইজেরিয়ার লাগোস, পয়েন্ট শূন্য দশমিক ৫২।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘দ্য ফাস্ট, দ্য স্লো, অ্যান্ড দ্য কনজাস্টেড : আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন রিচ অ্যান্ড পুওর কান্ট্রিস’ শীর্ষক ওই গবেষণা গত আগস্টে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় পৃথিবীর ১৫২টি দেশের এক হাজার ২০০ শহর নিয়ে কাজ করা হয়। চীন ও উত্তর কোরিয়া গবেষণার আওতায় ছিল না।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধীরগতির শহরের তালিকায় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের নামও আছে। ময়মনসিংহের অবস্থান নবম, চট্টগ্রাম ১২তম। উল্টো দিকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ গতিশীল শহরের ১৯টিই যুক্তরাষ্ট্রে।

দরিদ্র ও ধনী দেশের তুলনা করতে গিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, গরিব দেশের তুলনায় ধনী দেশের শহরে গাড়ির গতি অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। যে শহরের গতি বেশি সে শহরের মাথাপিছু আয়ও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এই গবেষণা প্রসঙ্গে এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘গবেষণার এমন ফলাফল নিয়ে আমরা চিন্তিত, এটা ভয়ংকর। এই গবেষণা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমাদের যানজট মূল সড়ক থেকে শাখা সড়কে চলে যাচ্ছে।’

হাদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা একেবারেই করতে পারিনি। এ কারণেই যখন আমাদের সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকে, তখনো বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় আমাদের শহর ধীরগতির হয়ে যায়। অবকাঠামো নির্মাণ করে যানজট কমানো আর সম্ভব না। এখন সময় এসেছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’

২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে ব্যস্ত সময়ে (পিক টাইমে) চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০২২ সালে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। উল্টো দিকে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি।

বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রকাশনী সংস্থা প্লাস ওয়ান জার্নাল এক গবেষণায় বলছে, ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪.৮২ কিলোমিটার। আর সত্তরোর্ধ্ব মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এভাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার, যা বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি।

ঢাকা শহরের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করা হয়েছিল, ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে ঢাকার সড়কের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট যখন থাকে না, তখনো ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি বিশ্বের অন্য শহরগুলোর চেয়ে কম। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ শহরের সড়কগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগও কমে এসেছে। তবে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার সড়কগুলোর যে সক্ষমতা তা বিবেচনায় নিয়ে চলাচলের জন্য যানবাহনের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া জরুরি। ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে কিছুটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’