আমার স্বামীই এডিসি হারুন স্যারকে প্রথমে আঘাত করেন: সানজিদা

  • Update Time : ০৮:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / 240

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধরের ঘটনায় মুখ খুললেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানজিদা আফরিন নিপা। তিনি বলেছেন, ‘আমার স্বামীই এডিসি হারুন স্যারকে প্রথমে আঘাত করেছেন।’

সানজিদা রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী। তিনি ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি একটি টেলিভিশনে তিনি এ কথা বলেন।

সানজিদা আফরিন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছে। সেই ২০১৯ সাল থেকে আমি হাইপারটেনশনের ওষুধ খাচ্ছি। গত ৪-৫ মাস ধরে আমার সমস্যাটা বেড়ে যায়। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে চেস্ট পেইনটা একটু বেড়ে যায়। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দেখানোর দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের (আওতা) মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে যখন ডাক্তার দেখাতে যাই তখন ডাক্তার কনফারেন্সে ছিলেন। পরে আমি স্যার ( হারুন) কে জানাই স্যার ডাক্তার তো কনফারেন্সে হয়তো আজ দেখবেন না। তিনি হয়তো আশেপাশে ছিলেন, বললেন দাঁড়ান আমি আসতেছি দেখি। এরপর স্যার এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকো টেস্ট আর ইসিজি করানো হলো। যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি ইটিটি করাচ্ছিলাম। প্রায় শেষের দিকে… বাইরে গোলমালের আওয়াজে পেলাম। প্রথম যে সাউন্ডটা (শব্দটা) কানে আসে যে স্যারই (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন—‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’।

সানজিদা বলেন, ‘আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে হয়তো অন্য কারও সঙ্গে স্যারের (হারুন) ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন), উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।’

‘ওই সময় স্যার নিজের সেফটির (নিরাপত্তার) জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোণার দিকে দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এত লোক ঢোকাতে তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন (বিব্রতকর পরিস্থিতি) তৈরি হয়। কারণ ইটিটি রুমে রেস্ট্রিকশন (কড়াকড়ি) থাকে। তখন আমি শাউট করছিলাম।’

সানজিদা বলেন, ‘এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই দুজনের ভিডিও কর’। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। এরপর যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না সেই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।’

‘সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমাকে চড় মারেন এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও এলেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়’ যোগ করেন সানজিদা আফরিন।

এসব ঘটনার স্থান কোথায় এবং কয়টার দিকের ঘটনা জানতে চাইলে সানজিদা আফরিন বলেন, ‘আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। এরপর ৭টার দিকে স্যার (হারুন) এসেছিলেন, পরে ডাক্তারও এসেছিলেন। এরপর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকি। ঘটনা ঘটেছে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চারতলার কার্ডিওলজি বিভাগে।’

আপনি অসুস্থ সেটা আপনার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন) জানতেন কি না, জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, ‘আমি অসুস্থ সেটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাব সেটা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সামহাউ তিনি মিস করে গিয়েছিলেন, অথবা বিজি ছিলেন। যেহেতু ৬-৭ দিন ধরে আমার সিভিয়ার চেস্ট পেইন হচ্ছিল …যাইহোক, সবসময় তো পরিস্থিতি সেরকম থাকে না যে আমি তার সঙ্গে শেয়ার করব। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।’

তারপরও কীভাবে আপনার স্বামী জেনেছেন আপনি হাসপাতালে আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড কীভাবে জেনেছেন সেটা আমি জানি না।’

আপনার কী মনে হয় তিনি আপনার পেছনে কাউকে দিয়ে নজরদারি করছেন, এমন প্রশ্নে সানজিদা বলেন, ‘করতে পারেন। তবে আমি নিশ্চিত নই।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পরকীয়ার সম্পর্কের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (হারুন) আমার সিনিয়র কলিগ। এর বাইরে আর কোনো বিষয় নেই।’

সানজিদা বলেন, ‘এই ঘটনার পর স্বামীর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।’

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

এ ঘটনার জেরে রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে মীমাংসা করেন।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক নারীর সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সে সময় ওই নারীর স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান এবং তাদের দুজনকে একসঙ্গে পান। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশিদ।

এ ঘটনায় গত রবিবার সেপ্টেম্বর বিকেলেই ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুইদিনের মধ্যে দ্রুত তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এরপর হারুনকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। আবার ওইদিন বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়।

তবে গতকাল সোমবার বদলি করা এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আমার স্বামীই এডিসি হারুন স্যারকে প্রথমে আঘাত করেন: সানজিদা

Update Time : ০৮:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধরের ঘটনায় মুখ খুললেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানজিদা আফরিন নিপা। তিনি বলেছেন, ‘আমার স্বামীই এডিসি হারুন স্যারকে প্রথমে আঘাত করেছেন।’

সানজিদা রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী। তিনি ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি একটি টেলিভিশনে তিনি এ কথা বলেন।

সানজিদা আফরিন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছে। সেই ২০১৯ সাল থেকে আমি হাইপারটেনশনের ওষুধ খাচ্ছি। গত ৪-৫ মাস ধরে আমার সমস্যাটা বেড়ে যায়। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে চেস্ট পেইনটা একটু বেড়ে যায়। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দেখানোর দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের (আওতা) মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে যখন ডাক্তার দেখাতে যাই তখন ডাক্তার কনফারেন্সে ছিলেন। পরে আমি স্যার ( হারুন) কে জানাই স্যার ডাক্তার তো কনফারেন্সে হয়তো আজ দেখবেন না। তিনি হয়তো আশেপাশে ছিলেন, বললেন দাঁড়ান আমি আসতেছি দেখি। এরপর স্যার এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকো টেস্ট আর ইসিজি করানো হলো। যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি ইটিটি করাচ্ছিলাম। প্রায় শেষের দিকে… বাইরে গোলমালের আওয়াজে পেলাম। প্রথম যে সাউন্ডটা (শব্দটা) কানে আসে যে স্যারই (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন—‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’।

সানজিদা বলেন, ‘আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে হয়তো অন্য কারও সঙ্গে স্যারের (হারুন) ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন), উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।’

‘ওই সময় স্যার নিজের সেফটির (নিরাপত্তার) জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোণার দিকে দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এত লোক ঢোকাতে তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন (বিব্রতকর পরিস্থিতি) তৈরি হয়। কারণ ইটিটি রুমে রেস্ট্রিকশন (কড়াকড়ি) থাকে। তখন আমি শাউট করছিলাম।’

সানজিদা বলেন, ‘এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই দুজনের ভিডিও কর’। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। এরপর যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না সেই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।’

‘সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমাকে চড় মারেন এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও এলেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়’ যোগ করেন সানজিদা আফরিন।

এসব ঘটনার স্থান কোথায় এবং কয়টার দিকের ঘটনা জানতে চাইলে সানজিদা আফরিন বলেন, ‘আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। এরপর ৭টার দিকে স্যার (হারুন) এসেছিলেন, পরে ডাক্তারও এসেছিলেন। এরপর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকি। ঘটনা ঘটেছে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চারতলার কার্ডিওলজি বিভাগে।’

আপনি অসুস্থ সেটা আপনার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন) জানতেন কি না, জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, ‘আমি অসুস্থ সেটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাব সেটা তিনি জানতেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সামহাউ তিনি মিস করে গিয়েছিলেন, অথবা বিজি ছিলেন। যেহেতু ৬-৭ দিন ধরে আমার সিভিয়ার চেস্ট পেইন হচ্ছিল …যাইহোক, সবসময় তো পরিস্থিতি সেরকম থাকে না যে আমি তার সঙ্গে শেয়ার করব। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।’

তারপরও কীভাবে আপনার স্বামী জেনেছেন আপনি হাসপাতালে আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড কীভাবে জেনেছেন সেটা আমি জানি না।’

আপনার কী মনে হয় তিনি আপনার পেছনে কাউকে দিয়ে নজরদারি করছেন, এমন প্রশ্নে সানজিদা বলেন, ‘করতে পারেন। তবে আমি নিশ্চিত নই।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পরকীয়ার সম্পর্কের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উনি (হারুন) আমার সিনিয়র কলিগ। এর বাইরে আর কোনো বিষয় নেই।’

সানজিদা বলেন, ‘এই ঘটনার পর স্বামীর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।’

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।

এ ঘটনার জেরে রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে মীমাংসা করেন।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এডিসি হারুন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক নারীর সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সে সময় ওই নারীর স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান এবং তাদের দুজনকে একসঙ্গে পান। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশিদ।

এ ঘটনায় গত রবিবার সেপ্টেম্বর বিকেলেই ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুইদিনের মধ্যে দ্রুত তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এরপর হারুনকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। আবার ওইদিন বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়।

তবে গতকাল সোমবার বদলি করা এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।