গোঁজামিলে শুরু নতুন শিক্ষাবর্ষ

  • Update Time : ১১:৪৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩
  • / 207

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নতুন বছরের প্রথম দিন রবিবার, সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতে বই উৎসব। তবে সব বিষয়ের বই না পাওয়ার অপ্রাপ্তি নিয়েই পাঠ্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রাথমিকের ৩৪ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২২ শতাংশ বই এখনও ছাপাই হয়নি। এ অবস্থার জন্য অর্থ সংকট, সমন্বয়হীনতা, কর্মকর্তাদের গাফিলতি, ছাপাখানা মালিকদের অবহেলাকে দায়ী করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম- এই তিন শ্রণিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। তবে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠানো হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া প্রস্তুতি ঘাটতিতে শেষমুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির নতুন পাঠ্যক্রম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলে গোঁজামিল দিয়ে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাবর্ষ।

সূত্র জানায়, বই বিতরণ উৎসবে বিভিন্ন জেলায় মন্ত্রী-এমপিরা উপস্থিত থাকবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিকের বই উৎসব হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উপস্থিত থাকবেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাধ্যমিকের বই উৎসবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বই উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, নানা কারণে এখনও মাধ্যমিকের ২২ এবং প্রাথমিকের ৩৪ শতাংশ বই ছাপাই হয়নি। কয়েকটি উপজেলায় বিভিন্ন ক্লাসের নতুন বই পৌঁছায়নি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। এর জন্য দায়ী বেশি পরিমাণে বই ছাপার কাজ পাওয়া মুদ্রণকারীরা। এর মধ্যে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস, লেটার এন কালার লিমিটেড, আনন্দ প্রিন্টার্স, বারোতোপা প্রিন্টার্স, প্রমা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, সরকার প্রিন্টার্স উল্লেখযোগ্য।

তবে বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নয় এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেছেন, মাধ্যমিকের ৮২ শতাংশ এবং প্রাথমিকের ৭০ শতাংশ বই ছাপার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে সব শিক্ষার্থী যেন শিগগির বই হাতে পায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি শতভাগ আশাবাদী সব শিক্ষার্থী বই উৎসবে বই পাবে। কিছু বই সরবরাহ বাকি আছে। তবে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে সব বই সরবাহ করার লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে নতুন বই দিয়ে আসছে সরকার। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩টি পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮টি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫টি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা।

সুনামগঞ্জে পৌঁছায়নি প্রাথমিকের অধিকাংশ বই

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, টাইমস মিডিয়া, ভাই ভাই প্রেসসহ তিনটি বড় প্রেস কোনো বই ছাপেইনি। যে কারণে অনেক উপজেলাতে বিভিন্ন ক্লাসের বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ওই জেলায় বই ছাপার কাজ পাওয়া জাহানারা প্রেস, মাস্টার সিমেক্স প্রেসকে দেরিতে ওয়ার্ক ওর্ডার দেওয়ায় তারা সব বই ছাপতে পারেনি। তবে ২০ জানুয়ারির মধ্যেই এসব বই ছাপা শেষে পাঠানো সম্ভব।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় প্রাথমিকের কোনো বই-ই পৌঁছায়নি। অন্যান্য উপজেলায় এখনও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই আসেনি। তবে পাশের উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করে বই উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের ‘নামমাত্র’ প্রশিক্ষণ

২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে দ্বিতীয় শ্রেণিতে তা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম, দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে একাদশ, ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তাদের ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যেই এক লাখ শিক্ষককে এক ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা, ইন্টারনেটের ধীরগতি, সময় বিভ্রাটরসহ নানা কারণে এই এক ঘণ্টার প্রশিক্ষণও ঠিকমতো নিতে পারেননি বেশিরভাগ শিক্ষক।

প্রশিক্ষণ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইন প্রশিক্ষণ কোনো কাজেই আসবে না। অনেক শিক্ষক শুধু ভিডিও লিংকে প্রবেশ করেই পুরো প্রশিক্ষণ না নিয়েই সার্টিফিকেট ডাউনলোড করছেন। অনেকে অন্য শিক্ষকের কাছে আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়ে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিচ্ছেন। ভিডিও শেষে কোনো এসেসমেন্ট না থাকায় গুরুত্বও কম।

তারা আরও জানান, সশরীরে উপস্থিততে প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষকদের মূল্যায়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বড় আশা করার কারণ নেই।

সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ গত ১৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অর্থের জোগান না হওয়ায় তা হয়নি। পরে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল, তাও হয়নি। ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। কিন্তু বেশিরভাগই শিক্ষকই সেদিন প্রশিক্ষণের সময়সূচি জানতে পারেননি।

মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ ও ৭ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মধ্য জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, নামমাত্র প্রশিক্ষণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। শিক্ষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে তারা প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার আলোকে ক্লাসে ঠিকমতো পড়াতে ও বোঝাতে পারবেন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দাবি করেছেন, পয়লা জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে চেয়েছিলাম। একেকজন শিক্ষক ছয় দিনের প্রশিক্ষণ পাবেন। এখন এটি জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


গোঁজামিলে শুরু নতুন শিক্ষাবর্ষ

Update Time : ১১:৪৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নতুন বছরের প্রথম দিন রবিবার, সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতে বই উৎসব। তবে সব বিষয়ের বই না পাওয়ার অপ্রাপ্তি নিয়েই পাঠ্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রাথমিকের ৩৪ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২২ শতাংশ বই এখনও ছাপাই হয়নি। এ অবস্থার জন্য অর্থ সংকট, সমন্বয়হীনতা, কর্মকর্তাদের গাফিলতি, ছাপাখানা মালিকদের অবহেলাকে দায়ী করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম- এই তিন শ্রণিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। তবে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠানো হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া প্রস্তুতি ঘাটতিতে শেষমুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির নতুন পাঠ্যক্রম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলে গোঁজামিল দিয়ে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাবর্ষ।

সূত্র জানায়, বই বিতরণ উৎসবে বিভিন্ন জেলায় মন্ত্রী-এমপিরা উপস্থিত থাকবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিকের বই উৎসব হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উপস্থিত থাকবেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাধ্যমিকের বই উৎসবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বই উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, নানা কারণে এখনও মাধ্যমিকের ২২ এবং প্রাথমিকের ৩৪ শতাংশ বই ছাপাই হয়নি। কয়েকটি উপজেলায় বিভিন্ন ক্লাসের নতুন বই পৌঁছায়নি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। এর জন্য দায়ী বেশি পরিমাণে বই ছাপার কাজ পাওয়া মুদ্রণকারীরা। এর মধ্যে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস, লেটার এন কালার লিমিটেড, আনন্দ প্রিন্টার্স, বারোতোপা প্রিন্টার্স, প্রমা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন, সরকার প্রিন্টার্স উল্লেখযোগ্য।

তবে বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নয় এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেছেন, মাধ্যমিকের ৮২ শতাংশ এবং প্রাথমিকের ৭০ শতাংশ বই ছাপার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে সব শিক্ষার্থী যেন শিগগির বই হাতে পায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি শতভাগ আশাবাদী সব শিক্ষার্থী বই উৎসবে বই পাবে। কিছু বই সরবরাহ বাকি আছে। তবে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে সব বই সরবাহ করার লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে নতুন বই দিয়ে আসছে সরকার। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩টি পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮টি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫টি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা।

সুনামগঞ্জে পৌঁছায়নি প্রাথমিকের অধিকাংশ বই

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, টাইমস মিডিয়া, ভাই ভাই প্রেসসহ তিনটি বড় প্রেস কোনো বই ছাপেইনি। যে কারণে অনেক উপজেলাতে বিভিন্ন ক্লাসের বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ওই জেলায় বই ছাপার কাজ পাওয়া জাহানারা প্রেস, মাস্টার সিমেক্স প্রেসকে দেরিতে ওয়ার্ক ওর্ডার দেওয়ায় তারা সব বই ছাপতে পারেনি। তবে ২০ জানুয়ারির মধ্যেই এসব বই ছাপা শেষে পাঠানো সম্ভব।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় প্রাথমিকের কোনো বই-ই পৌঁছায়নি। অন্যান্য উপজেলায় এখনও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই আসেনি। তবে পাশের উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করে বই উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষকদের ‘নামমাত্র’ প্রশিক্ষণ

২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে দ্বিতীয় শ্রেণিতে তা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম, দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে একাদশ, ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তাদের ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যেই এক লাখ শিক্ষককে এক ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা, ইন্টারনেটের ধীরগতি, সময় বিভ্রাটরসহ নানা কারণে এই এক ঘণ্টার প্রশিক্ষণও ঠিকমতো নিতে পারেননি বেশিরভাগ শিক্ষক।

প্রশিক্ষণ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইন প্রশিক্ষণ কোনো কাজেই আসবে না। অনেক শিক্ষক শুধু ভিডিও লিংকে প্রবেশ করেই পুরো প্রশিক্ষণ না নিয়েই সার্টিফিকেট ডাউনলোড করছেন। অনেকে অন্য শিক্ষকের কাছে আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়ে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিচ্ছেন। ভিডিও শেষে কোনো এসেসমেন্ট না থাকায় গুরুত্বও কম।

তারা আরও জানান, সশরীরে উপস্থিততে প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষকদের মূল্যায়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বড় আশা করার কারণ নেই।

সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ গত ১৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অর্থের জোগান না হওয়ায় তা হয়নি। পরে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল, তাও হয়নি। ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। কিন্তু বেশিরভাগই শিক্ষকই সেদিন প্রশিক্ষণের সময়সূচি জানতে পারেননি।

মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ ও ৭ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মধ্য জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, নামমাত্র প্রশিক্ষণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। শিক্ষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে তারা প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার আলোকে ক্লাসে ঠিকমতো পড়াতে ও বোঝাতে পারবেন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দাবি করেছেন, পয়লা জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে চেয়েছিলাম। একেকজন শিক্ষক ছয় দিনের প্রশিক্ষণ পাবেন। এখন এটি জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।