আবারো ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, নিহত ১৭

  • Update Time : ১০:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪
  • / 67

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনের ভিড়ে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, স্থানীয় সময় আজ রোববার (৩১ মার্চ) হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার আল কুয়েত গোলচত্বরে হামলায় নিহতের সংখ্যা ১২ জন থেকে বেড়ে ১৭ জনে পৌঁছেছে। হামলায় আরও প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার ওই মোড়ে জড়ো হচ্ছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারা একের পর এক ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে।

এর আগে, প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট বলেছিল, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার একই গোলচত্বরে সাহায্য বিতরণের সময় বন্দুক হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সেসময় হাজার হাজার মানুষ সেখানে ময়দা এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী ট্রাকগুলোর আসার অপেক্ষায় জড়ো হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী গাজাবাসীরা ফাঁকা গুলি চালায়, তবে ওই এলাকায় ইসরায়েলি সৈন্যরাও গুলি চালায় এবং কিছু চলন্ত ট্রাক খাবার নেয়ার চেষ্টা করা লোকেদের আঘাত করে। এতেই হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।

এদিকে হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা মেডিক্যাল টিম এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের সহায়তার হতাহতদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের ‘বেদনাদায়ক দৃশ্য’ বর্ণনা করেছেন।

ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা অবশ্য আরও বেশ কয়েকটি আক্রমণের তথ্য সামনে এনেছে। সংস্থাটি বলছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের ওয়াদি গাজা সেতুর কাছে ইসরায়েলি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগাজি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা এবং মধ্য গাজার আল-বুরেজি শরণার্থী শিবিরে কামানের গোলাবর্ষণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদমাধ্যমটির সংবাদদাতারা বলেছেন, দেইর আল-বালাহের আল আকসা শহীদ হাসপাতালের আশপাশ থেকে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, গাজার এই চিকিৎসা অবকাঠামোটিতে ইসরায়েলি অভিযান হয়নি।

এর আগেও ইসরায়েল কয়েক দফায় গাজায় সাহায্য প্রার্থীদের ওপর এই ধরনের হামলা চালিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় এক হাজার ২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হন। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে।

ওইদিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি।

ইসরায়েলি এ হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

প্রায় ছয় মাসের মতো সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩২ হাজার ৬২৩ ফিলিস্তিনি। আর আহত ৭৫ হাজার ৯২ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতোমধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় কাতরানো মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আবারো ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, নিহত ১৭

Update Time : ১০:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনের ভিড়ে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, স্থানীয় সময় আজ রোববার (৩১ মার্চ) হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার আল কুয়েত গোলচত্বরে হামলায় নিহতের সংখ্যা ১২ জন থেকে বেড়ে ১৭ জনে পৌঁছেছে। হামলায় আরও প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার ওই মোড়ে জড়ো হচ্ছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারা একের পর এক ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে।

এর আগে, প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট বলেছিল, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার একই গোলচত্বরে সাহায্য বিতরণের সময় বন্দুক হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সেসময় হাজার হাজার মানুষ সেখানে ময়দা এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী ট্রাকগুলোর আসার অপেক্ষায় জড়ো হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী গাজাবাসীরা ফাঁকা গুলি চালায়, তবে ওই এলাকায় ইসরায়েলি সৈন্যরাও গুলি চালায় এবং কিছু চলন্ত ট্রাক খাবার নেয়ার চেষ্টা করা লোকেদের আঘাত করে। এতেই হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।

এদিকে হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা মেডিক্যাল টিম এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের সহায়তার হতাহতদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের ‘বেদনাদায়ক দৃশ্য’ বর্ণনা করেছেন।

ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা অবশ্য আরও বেশ কয়েকটি আক্রমণের তথ্য সামনে এনেছে। সংস্থাটি বলছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের ওয়াদি গাজা সেতুর কাছে ইসরায়েলি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগাজি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা এবং মধ্য গাজার আল-বুরেজি শরণার্থী শিবিরে কামানের গোলাবর্ষণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদমাধ্যমটির সংবাদদাতারা বলেছেন, দেইর আল-বালাহের আল আকসা শহীদ হাসপাতালের আশপাশ থেকে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, গাজার এই চিকিৎসা অবকাঠামোটিতে ইসরায়েলি অভিযান হয়নি।

এর আগেও ইসরায়েল কয়েক দফায় গাজায় সাহায্য প্রার্থীদের ওপর এই ধরনের হামলা চালিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় এক হাজার ২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হন। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে।

ওইদিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি।

ইসরায়েলি এ হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

প্রায় ছয় মাসের মতো সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩২ হাজার ৬২৩ ফিলিস্তিনি। আর আহত ৭৫ হাজার ৯২ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতোমধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় কাতরানো মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।