নাইজারে ফ্রান্সের সেনাদের বিতাড়নে লাখো মানুষের বিক্ষোভ

  • Update Time : ১১:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / 169

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নাইজারে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও দেশটির সেনাদের বিতাড়িত করতে সেনাঘাঁটির সামনে লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। নাইজারের রাজধানী নিয়ামিতে ফ্রান্সের সেনাঘাঁটির সামনে এ বিক্ষোভ পালন করেন দেশটিতে অভ্যুত্থানপন্থি সাধারণ জনগণ।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত জুলাই মাসের শেষ দিকে পশ্চিমা ও ফ্রান্সপন্থি দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে অবরুদ্ধ ও জিম্মি করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনীর একটি দল। এরপর থেকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রয়েছেন দেশটির অভ্যত্থানপন্থি নাগরিকরা। তাদের দাবি, সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স নাইজারকে শোষণ করে আসছে। এজন্য তারা ফ্রান্সের সেনাদের বিতাড়িত করতে বিক্ষোভ করছেন।

আলজাজিরার সাংবাদিক আহমেদ ইদ্রিস নিয়ামি থেকে জানান, বর্তমানে দেশটিতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সালভিন ইত্তে নাইজারে রয়েছেন। তবে জনগণের বিক্ষোভ দেখে মনে হচ্ছে তারা ইত্তেসহ ফ্রান্সের সেনাদের বিতাড়িত করার দায়িত্ব নিজেদেরে কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে দুপুর ৩টার বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। তবে সেখানে সকাল ১০টার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। যা দেখে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকতারাই অবাক হয়ে যান।

ইদ্রিস জানান, দেশটিতে গত কয়েকদিন ধরেই জনগণ বিক্ষোভ করেছেন। তবে শনিবার সকালে জনগণ নিরাপত্তা বাঁধ ভেঙে অনেক এগিয়ে আসেন। এ সময়ে অনেকেই সেনাঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিক্ষোভের পর সেনাঘাঁটি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। ফ্রান্সের ওই সেনাঘাঁটিতে প্রায় দেড় হাজার সেনা রয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুলাই নাইজার থেকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় দেশটির জান্তা সরকার। এ সময়ে ফরাসি রাষ্ট্রদূত সিলভাইন ইত্তে ও তার পরিবারের ভিসা বাতিল করা হয়।

উল্লেখ্য গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার বাসভবনে অবরোধ করে পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের বিদ্রোহী সদস্যরা। এরপর থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম ও তার পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে রেখেছে সামরিক সরকার।

তাদের এ সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও প্রতিবেশী পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইকোওয়াস। সেনা অভ্যুত্থানের পর নাইজারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইকোওয়াস। ক্ষমতাচ্যুত সরকার পুনর্বহালে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ইকোওয়াসের নেতারা। ইকোওয়াসের এমন পদক্ষেপে সমর্থন জুগিয়ে আসছে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সামরিক নেতাদের তাদের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্ককারের কোনো এখতিয়ার নেই। ফরাসি দূতাবাসের নিরাপত্তা ও পরিচালনার অবস্থা প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফরাসি রাষ্ট্রদূত নাইজারে থাকবেন। একই সঙ্গে তিনি বাজুমের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নাইজারে ফ্রান্সের সেনাদের বিতাড়নে লাখো মানুষের বিক্ষোভ

Update Time : ১১:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নাইজারে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও দেশটির সেনাদের বিতাড়িত করতে সেনাঘাঁটির সামনে লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। নাইজারের রাজধানী নিয়ামিতে ফ্রান্সের সেনাঘাঁটির সামনে এ বিক্ষোভ পালন করেন দেশটিতে অভ্যুত্থানপন্থি সাধারণ জনগণ।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, গত জুলাই মাসের শেষ দিকে পশ্চিমা ও ফ্রান্সপন্থি দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে অবরুদ্ধ ও জিম্মি করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনীর একটি দল। এরপর থেকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রয়েছেন দেশটির অভ্যত্থানপন্থি নাগরিকরা। তাদের দাবি, সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স নাইজারকে শোষণ করে আসছে। এজন্য তারা ফ্রান্সের সেনাদের বিতাড়িত করতে বিক্ষোভ করছেন।

আলজাজিরার সাংবাদিক আহমেদ ইদ্রিস নিয়ামি থেকে জানান, বর্তমানে দেশটিতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সালভিন ইত্তে নাইজারে রয়েছেন। তবে জনগণের বিক্ষোভ দেখে মনে হচ্ছে তারা ইত্তেসহ ফ্রান্সের সেনাদের বিতাড়িত করার দায়িত্ব নিজেদেরে কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে দুপুর ৩টার বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। তবে সেখানে সকাল ১০টার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। যা দেখে পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকতারাই অবাক হয়ে যান।

ইদ্রিস জানান, দেশটিতে গত কয়েকদিন ধরেই জনগণ বিক্ষোভ করেছেন। তবে শনিবার সকালে জনগণ নিরাপত্তা বাঁধ ভেঙে অনেক এগিয়ে আসেন। এ সময়ে অনেকেই সেনাঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিক্ষোভের পর সেনাঘাঁটি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। ফ্রান্সের ওই সেনাঘাঁটিতে প্রায় দেড় হাজার সেনা রয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুলাই নাইজার থেকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় দেশটির জান্তা সরকার। এ সময়ে ফরাসি রাষ্ট্রদূত সিলভাইন ইত্তে ও তার পরিবারের ভিসা বাতিল করা হয়।

উল্লেখ্য গত ২৬ জুলাই নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে তার বাসভবনে অবরোধ করে পরের দিন বৃহস্পতিবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের বিদ্রোহী সদস্যরা। এরপর থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম ও তার পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে রেখেছে সামরিক সরকার।

তাদের এ সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও প্রতিবেশী পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইকোওয়াস। সেনা অভ্যুত্থানের পর নাইজারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইকোওয়াস। ক্ষমতাচ্যুত সরকার পুনর্বহালে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ইকোওয়াসের নেতারা। ইকোওয়াসের এমন পদক্ষেপে সমর্থন জুগিয়ে আসছে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সামরিক নেতাদের তাদের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্ককারের কোনো এখতিয়ার নেই। ফরাসি দূতাবাসের নিরাপত্তা ও পরিচালনার অবস্থা প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফরাসি রাষ্ট্রদূত নাইজারে থাকবেন। একই সঙ্গে তিনি বাজুমের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।