এবার চিনি রপ্তানিও নিষিদ্ধ করছে ভারত

  • Update Time : ০৪:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩
  • / 131

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অনাবৃষ্টির কারণে আখের ফলন ভালো না হওয়ায় আগামী অক্টোবর থেকে চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত। বৃহস্পতিবার তিনটি সরকারি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এর ফলে গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটি থেকে চিনির চালান বন্ধ হয়ে যাবে।

বিশ্ব চিনির বাজারে ভারতের অনুপস্থিতিতে লন্ডন ও নিউইয়র্কে চিনির বেঞ্চমার্ক মূল্য বেড়ে যেতে পারে, যা ইতোমধ্যে বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভারত গত মাসে বাসমতি ছাড়া সব সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নয়াদিল্লিও গত সপ্তাহে পেঁয়াজের রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বছরের শেষে রাজ্য নির্বাচনের আগে খাদ্যপণ্যের দাম শান্ত রাখার চেষ্টাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, তাদের প্রাথমিক ফোকাস হলো স্থানীয় বাজারে চিনির চাহিদা পূরণ করা এবং উদ্বৃত্ত আখ থেকে ইথানল তৈরি করা। আসন্ন মৌসুমে রপ্তানিতে বরাদ্দ করার জন্য পর্যাপ্ত চিনি থাকবে না বলে জানান তিনি।

গত মৌসুমে রেকর্ড ১১ দশমিক এক মিলিয়ন টন চিনি বিক্রি করার পর, ভারত চলতি মৌসুমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলগুলোকে মাত্র ছয় দশমিক ১ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের শীর্ষ আখ উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে এবছর স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ দুই রাজ্যে ভারতের মোট চিনির অর্ধেক উৎপাদিত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিল্প কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে চিনির উৎপাদন কমে যাবে এবং এমনকি ২০২৪-২৫ মৌসুমে রোপণও কমে যাবে।

ভারতে স্থানীয় পর্যায়ে চিনির দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এর ফলে আগস্টে মিলগুলোকে অতিরিক্ত দুই লাখ টন চিনি বিক্রির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

অন্য একটি সরকারি সূত্র বলেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগের বিষয়। চিনির দামের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি রপ্তানির সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।

ভারতে জুলাই মাসে খুচরা বাজারে মূল্যস্ফীতি ছিলো সাত দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গত ১৫ মাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিলো ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

২০২৩-২৪ মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ কমে ৩১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তৃতীয় সরকারি সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা গত দুই বছরে মিলগুলোকে প্রচুর পরিমাণে চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছি। তবে আমাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং স্থিতিশীল দামও নিশ্চিত করতে হবে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


এবার চিনি রপ্তানিও নিষিদ্ধ করছে ভারত

Update Time : ০৪:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অনাবৃষ্টির কারণে আখের ফলন ভালো না হওয়ায় আগামী অক্টোবর থেকে চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত। বৃহস্পতিবার তিনটি সরকারি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এর ফলে গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটি থেকে চিনির চালান বন্ধ হয়ে যাবে।

বিশ্ব চিনির বাজারে ভারতের অনুপস্থিতিতে লন্ডন ও নিউইয়র্কে চিনির বেঞ্চমার্ক মূল্য বেড়ে যেতে পারে, যা ইতোমধ্যে বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভারত গত মাসে বাসমতি ছাড়া সব সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নয়াদিল্লিও গত সপ্তাহে পেঁয়াজের রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বছরের শেষে রাজ্য নির্বাচনের আগে খাদ্যপণ্যের দাম শান্ত রাখার চেষ্টাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, তাদের প্রাথমিক ফোকাস হলো স্থানীয় বাজারে চিনির চাহিদা পূরণ করা এবং উদ্বৃত্ত আখ থেকে ইথানল তৈরি করা। আসন্ন মৌসুমে রপ্তানিতে বরাদ্দ করার জন্য পর্যাপ্ত চিনি থাকবে না বলে জানান তিনি।

গত মৌসুমে রেকর্ড ১১ দশমিক এক মিলিয়ন টন চিনি বিক্রি করার পর, ভারত চলতি মৌসুমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলগুলোকে মাত্র ছয় দশমিক ১ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের শীর্ষ আখ উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে এবছর স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ দুই রাজ্যে ভারতের মোট চিনির অর্ধেক উৎপাদিত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিল্প কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে চিনির উৎপাদন কমে যাবে এবং এমনকি ২০২৪-২৫ মৌসুমে রোপণও কমে যাবে।

ভারতে স্থানীয় পর্যায়ে চিনির দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এর ফলে আগস্টে মিলগুলোকে অতিরিক্ত দুই লাখ টন চিনি বিক্রির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

অন্য একটি সরকারি সূত্র বলেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগের বিষয়। চিনির দামের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি রপ্তানির সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।

ভারতে জুলাই মাসে খুচরা বাজারে মূল্যস্ফীতি ছিলো সাত দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গত ১৫ মাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিলো ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

২০২৩-২৪ মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ কমে ৩১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তৃতীয় সরকারি সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা গত দুই বছরে মিলগুলোকে প্রচুর পরিমাণে চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছি। তবে আমাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং স্থিতিশীল দামও নিশ্চিত করতে হবে।’