সামনে ভয়াবহ সময় আসছে : আইএমএফ

  • Update Time : ০৩:১০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২
  • / 173

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

এক টানা দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। এই দুই বছরে লকডাউন ও বিধিনিষেধসহ মহামারি সংশ্লিষ্ট নানা কারণে অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২১ সালজুড়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ফের দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হয়েছিল।

কিন্তু এর মধ্যেই সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয় ভাইরাসের অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রন। এরপরই ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ আর আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য নতুন শঙ্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে ওমিক্রন।

আর তাই বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য নতুন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য সামনে এনেছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম শীর্ষ এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সারা বিশ্বে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে সম্ভাব্য কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধির প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও মন্থর হয়ে যাচ্ছে।

আগামী ২৫ জনুয়ারি বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়ে হালনাগাদ রিপোর্ট প্রকাশ করবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর আগে সোমবার সংস্থাটি জানিয়েছে, মহামারির কারণে ক্ষতির শিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম চলতি বছর এবং আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে।

গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বব্যাপী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ প্রতিদিনই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এটিই সারা বিশ্বে নতুন করে স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করেছে।

ADVERTISEMENT

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ডেল্টা বা আরও অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রন গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে না। তবে অতিসংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে বহু মানুষ সংক্রমিত হয়ে পড়ায় বহু দেশ ফের লকডাউনসহ বিধিনিষেধ আরোপ করছে। আর এটিই বৈশ্বিক আর্থিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি করছে।

আইএমএফের অর্থনীতিবিদ স্টেফান ড্যানিঞ্জার, কেনেথ ক্যাং এবং হেলেন পোইরসন একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে সম্ভাব্য কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কারণ করোনা মহামারির কারণে এসব দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে সরকারি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটি। মুদ্রাস্ফীতির কারণে উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে দৈনন্দিন খরচ অনেক বেড়েছে।

আর সুদের হার আরও বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে, উদীয়মান অনেক দেশের ডলার-নিয়ন্ত্রিত ঋণের খরচও অনেক বেড়ে যাবে। এসব দেশ ইতোমধ্যেই মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে রয়েছে এবং শিগগিরই আরও অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা দেশগুলো খুব কমই বহন করতে সক্ষম।

আর এই পরিস্থিতিতে, নিজেদের সক্ষমতা ও দুর্বলতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে বলে মনে করে আইএমএফ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সামনে ভয়াবহ সময় আসছে : আইএমএফ

Update Time : ০৩:১০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

এক টানা দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। এই দুই বছরে লকডাউন ও বিধিনিষেধসহ মহামারি সংশ্লিষ্ট নানা কারণে অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২১ সালজুড়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ফের দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হয়েছিল।

কিন্তু এর মধ্যেই সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ নাগাদ দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয় ভাইরাসের অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রন। এরপরই ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ আর আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য নতুন শঙ্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে ওমিক্রন।

আর তাই বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য নতুন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য সামনে এনেছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম শীর্ষ এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ভাইরাসের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সারা বিশ্বে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে সম্ভাব্য কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধির প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও মন্থর হয়ে যাচ্ছে।

আগামী ২৫ জনুয়ারি বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়ে হালনাগাদ রিপোর্ট প্রকাশ করবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর আগে সোমবার সংস্থাটি জানিয়েছে, মহামারির কারণে ক্ষতির শিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম চলতি বছর এবং আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে।

গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বব্যাপী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ প্রতিদিনই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এটিই সারা বিশ্বে নতুন করে স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করেছে।

ADVERTISEMENT

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ডেল্টা বা আরও অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রন গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে না। তবে অতিসংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে বহু মানুষ সংক্রমিত হয়ে পড়ায় বহু দেশ ফের লকডাউনসহ বিধিনিষেধ আরোপ করছে। আর এটিই বৈশ্বিক আর্থিক প্রবৃদ্ধির ক্ষতি করছে।

আইএমএফের অর্থনীতিবিদ স্টেফান ড্যানিঞ্জার, কেনেথ ক্যাং এবং হেলেন পোইরসন একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে সম্ভাব্য কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কারণ করোনা মহামারির কারণে এসব দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে সরকারি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটি। মুদ্রাস্ফীতির কারণে উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে দৈনন্দিন খরচ অনেক বেড়েছে।

আর সুদের হার আরও বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে, উদীয়মান অনেক দেশের ডলার-নিয়ন্ত্রিত ঋণের খরচও অনেক বেড়ে যাবে। এসব দেশ ইতোমধ্যেই মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে রয়েছে এবং শিগগিরই আরও অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা দেশগুলো খুব কমই বহন করতে সক্ষম।

আর এই পরিস্থিতিতে, নিজেদের সক্ষমতা ও দুর্বলতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে বলে মনে করে আইএমএফ।