প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমেই যে ৭ কাজ করবেন ট্রাম্প

  • Update Time : ১০:৪৩:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
  • / 26

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল অর্থনীতি, অভিবাসন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়গুলো। মার্কিন কংগ্রেসে তার রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্সির পাশাপাশি তার দল রিপাবলিকান পার্টি ফের সিনেটেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

বিজয়ী বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছেন, আমরা একটি সহজ মন্ত্রে শাসন করবো: প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, প্রতিশ্রুতি রাখবো। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে তিনি কীভাবে এসব লক্ষ্য অর্জন করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। এক নজরে দেখে নেয়া যাক ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই যে সাতটি কাজ করতে চান-

১) অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন: ট্রাম্প প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড়’ অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি মেক্সিকো সীমান্তের দেওয়াল সম্পূর্ণ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার নির্মাণকাজ তার প্রথম শাসনামলে শুরু হয়েছিল।

২০২৪ সালে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অনুপ্রবেশের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, যদিও পরবর্তীতে তা কিছুটা কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত এই বিশাল আকারের বিতাড়ন কার্যকর করা আইনগত এবং পরিচালনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এবং এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।

২) অর্থনীতি, কর ও শুল্ক নিয়ে পদক্ষেপ: বাইডেন প্রশাসনের সময় বেড়ে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতি কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রেসিডেন্টের সরাসরি প্রভাব খুবই সীমিত। তিনি নতুন কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেমন- বকশিস কর, সামাজিক সুরক্ষা কর ও করপোরেশন কর।

ট্রাম্প বেশিরভাগ বিদেশি পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং চীন থেকে আমদানিতে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে।

৩) জলবায়ু সম্পর্কিত বিধিনিষেধ শিথিল: প্রথম প্রেসিডেন্সিতে ট্রাম্প কয়েকশ পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিশেষ করে মার্কিন গাড়ি শিল্পকে সাহায্য করার জন্য। তিনি আর্কটিক প্রান্তে তেল খননের পরিকল্পনা করেছেন। এতে জ্বালানি খরচ কমবে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।

৪) ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করা: রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাহাড়সম ব্যয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ করবেন তিনি। তবে কোন পক্ষকে কী ছাড় দিতে হবে, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, এই পদক্ষেপ পুতিনকে উৎসাহিত করতে পারে।

৫) গর্ভপাত নিষিদ্ধ নয়: কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্প জাতীয়ভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার আইনে স্বাক্ষর করবেন না বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, গর্ভপাত নিয়ে আইন তৈরির ব্যাপারে রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা থাকা উচিত।

৬) ৬ জানুয়ারি দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা: ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কিছু ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।

৭) স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি তদন্ত পরিচালনা করছেন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই তাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমেই যে ৭ কাজ করবেন ট্রাম্প

Update Time : ১০:৪৩:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল অর্থনীতি, অভিবাসন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়গুলো। মার্কিন কংগ্রেসে তার রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্সির পাশাপাশি তার দল রিপাবলিকান পার্টি ফের সিনেটেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

বিজয়ী বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেছেন, আমরা একটি সহজ মন্ত্রে শাসন করবো: প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, প্রতিশ্রুতি রাখবো। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে তিনি কীভাবে এসব লক্ষ্য অর্জন করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। এক নজরে দেখে নেয়া যাক ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই যে সাতটি কাজ করতে চান-

১) অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন: ট্রাম্প প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড়’ অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি মেক্সিকো সীমান্তের দেওয়াল সম্পূর্ণ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার নির্মাণকাজ তার প্রথম শাসনামলে শুরু হয়েছিল।

২০২৪ সালে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অনুপ্রবেশের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, যদিও পরবর্তীতে তা কিছুটা কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত এই বিশাল আকারের বিতাড়ন কার্যকর করা আইনগত এবং পরিচালনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এবং এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।

২) অর্থনীতি, কর ও শুল্ক নিয়ে পদক্ষেপ: বাইডেন প্রশাসনের সময় বেড়ে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতি কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রেসিডেন্টের সরাসরি প্রভাব খুবই সীমিত। তিনি নতুন কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেমন- বকশিস কর, সামাজিক সুরক্ষা কর ও করপোরেশন কর।

ট্রাম্প বেশিরভাগ বিদেশি পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং চীন থেকে আমদানিতে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে।

৩) জলবায়ু সম্পর্কিত বিধিনিষেধ শিথিল: প্রথম প্রেসিডেন্সিতে ট্রাম্প কয়েকশ পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিশেষ করে মার্কিন গাড়ি শিল্পকে সাহায্য করার জন্য। তিনি আর্কটিক প্রান্তে তেল খননের পরিকল্পনা করেছেন। এতে জ্বালানি খরচ কমবে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।

৪) ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করা: রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাহাড়সম ব্যয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ শেষ করবেন তিনি। তবে কোন পক্ষকে কী ছাড় দিতে হবে, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, এই পদক্ষেপ পুতিনকে উৎসাহিত করতে পারে।

৫) গর্ভপাত নিষিদ্ধ নয়: কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্প জাতীয়ভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার আইনে স্বাক্ষর করবেন না বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, গর্ভপাত নিয়ে আইন তৈরির ব্যাপারে রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা থাকা উচিত।

৬) ৬ জানুয়ারি দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা: ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কিছু ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।

৭) স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি তদন্ত পরিচালনা করছেন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই তাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।