ভারতের বিরুদ্ধে শিখ নেতাকে হত্যার অভিযোগ জাস্টিন ট্রুডোর

  • Update Time : ১০:১৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / 127

ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক শিখ নেতাকে হত্যার ‘গুরুতর অভিযোগ’ তুলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ অভিযোগে এরইমধ্যে ভারতের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে ট্রুডো প্রশাসন।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি জানান, কানাডা থেকে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ‘র’ এর প্রধানকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে এ বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে একটি শিখ মন্দিরের বাইরে অজ্ঞাত মুখোশধারীদের গুলিতে নিহত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জার। খালিস্তান আন্দোলনের এ নেতা কানাডার নাগরিক ছিলেন।

কানাডার আইনসভা হাউজ অব কমন্সে সোমবার ট্রুডো বলেন, কানাডার গোয়েন্দারা নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে।

ট্রুডো জানান, চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার আলোচনা হয়েছে এবং তিনি গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিদেশি সরকারের সংশ্লিষ্টতা অগ্রহণযোগ্য এবং সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।

একই অভিযোগে চলতি গেলো সপ্তাহে ভারতের সাথে পূর্ব ঘোষিত একটি ‘বাণিজ্য মিশন’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার।

চলতি বছরের অক্টোবরে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো।

সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভারত সরকার কানাডায় ‘ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ’ অব্যাহত রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর পরপরই কানাডার পক্ষে থেকে এলো এ ঘোষণা।

তবে কানাডা সরকার বলছে, দেশটিতে খালিস্তানি সমর্থকদের মত প্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের স্বাধীনতা রয়েছে। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ।

‘খালিস্তান’ দক্ষিণ এশিয়ার পাঞ্জাব অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত একটি স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম দেশ। প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকে ভূখণ্ডগতভাবে ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্য থেকে শুরু করে বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চল পর্যন্ত অথবা প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পাঞ্জাব অঞ্চল শিখদের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি। ইংরেজ দ্বারা অধিকৃত হওয়ার আগে পাঞ্জাব শিখদের দ্বারা ৮২ বছর শাসিত হয়; ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র পাঞ্জাব শিখ মিসল (সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র) সমূহের অধীন ছিল, তারপর মহারাজা রণজিৎ সিং শিখ মৈত্রী সঙ্ঘকে শিখ সাম্রাজ্যের মাঝে একীভূত করেন।

সেখানে শিখদের পাশাপাশি অনেক হিন্দু ও মুসলিমও বসবাস করতো। ১৯৪৭ সালের আগে শিখরা ব্রিটিশ অখণ্ড পাঞ্জাব রাজ্যের শুধু লুধিয়ানা জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম লীগ যখন মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানায়, তখন কিছু শিখ নেতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে, হিন্দু ও মুসলিমের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত করলে শিখ সম্প্রদায়ের কোনো স্বাধীন মাতৃভূমি থাকবে না। তারা তখন বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে বিস্তৃত খালিস্তান নামক একটি ধর্মরাষ্ট্র সৃষ্টির ধারণা পেশ করেন। তখন থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ভারতের বিরুদ্ধে শিখ নেতাকে হত্যার অভিযোগ জাস্টিন ট্রুডোর

Update Time : ১০:১৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক শিখ নেতাকে হত্যার ‘গুরুতর অভিযোগ’ তুলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ অভিযোগে এরইমধ্যে ভারতের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে ট্রুডো প্রশাসন।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি জানান, কানাডা থেকে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ‘র’ এর প্রধানকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে এ বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে একটি শিখ মন্দিরের বাইরে অজ্ঞাত মুখোশধারীদের গুলিতে নিহত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জার। খালিস্তান আন্দোলনের এ নেতা কানাডার নাগরিক ছিলেন।

কানাডার আইনসভা হাউজ অব কমন্সে সোমবার ট্রুডো বলেন, কানাডার গোয়েন্দারা নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে।

ট্রুডো জানান, চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার আলোচনা হয়েছে এবং তিনি গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিদেশি সরকারের সংশ্লিষ্টতা অগ্রহণযোগ্য এবং সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।

একই অভিযোগে চলতি গেলো সপ্তাহে ভারতের সাথে পূর্ব ঘোষিত একটি ‘বাণিজ্য মিশন’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা সরকার।

চলতি বছরের অক্টোবরে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নাগের মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো।

সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভারত সরকার কানাডায় ‘ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ’ অব্যাহত রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর পরপরই কানাডার পক্ষে থেকে এলো এ ঘোষণা।

তবে কানাডা সরকার বলছে, দেশটিতে খালিস্তানি সমর্থকদের মত প্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের স্বাধীনতা রয়েছে। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ।

‘খালিস্তান’ দক্ষিণ এশিয়ার পাঞ্জাব অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত একটি স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম দেশ। প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকে ভূখণ্ডগতভাবে ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্য থেকে শুরু করে বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চল পর্যন্ত অথবা প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্যসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। পাঞ্জাব অঞ্চল শিখদের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি। ইংরেজ দ্বারা অধিকৃত হওয়ার আগে পাঞ্জাব শিখদের দ্বারা ৮২ বছর শাসিত হয়; ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র পাঞ্জাব শিখ মিসল (সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র) সমূহের অধীন ছিল, তারপর মহারাজা রণজিৎ সিং শিখ মৈত্রী সঙ্ঘকে শিখ সাম্রাজ্যের মাঝে একীভূত করেন।

সেখানে শিখদের পাশাপাশি অনেক হিন্দু ও মুসলিমও বসবাস করতো। ১৯৪৭ সালের আগে শিখরা ব্রিটিশ অখণ্ড পাঞ্জাব রাজ্যের শুধু লুধিয়ানা জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম লীগ যখন মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানায়, তখন কিছু শিখ নেতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে, হিন্দু ও মুসলিমের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত করলে শিখ সম্প্রদায়ের কোনো স্বাধীন মাতৃভূমি থাকবে না। তারা তখন বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে বিস্তৃত খালিস্তান নামক একটি ধর্মরাষ্ট্র সৃষ্টির ধারণা পেশ করেন। তখন থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত।