৫০ বছর পর আবারো বড় পর্দায় ‘দ্য গডফাদার ট্রিলজি’

  • Update Time : ০৫:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
  • / 152

১৯৭২-এর হলিউড ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ফ্রান্সিস ফোর্ড কপ্পোলা পরিচালিত ‘দ্য গডফাদার’। ‘মারিও পুজো’র উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল অস্কারজয়ী এই সিনেমা। অভিনয়ে ছিলেন, মারলন ব্র্যান্ডো, আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরোর মতো শিল্পীরা।

তিনটি পর্বে ভাগ করে ছবি হয়ে পর্দায় এসেছিল গল্পটি। সেই ত্রয়ীর মুক্তির ৫০ বছর পেরোল ২০২২ সালে। সুবর্ণজয়ন্তী পালনে উঠে পড়ে লেগেছে প্যারামাউন্ট পিকচার্স। আমেরিকা এবং বিশ্বের বাছাই করা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে এই ছবিটি ফের মুক্তি পাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি। যার সৌজন্যে বড় পর্দায় ফের শোনা যাবে ‘রিভেঞ্জ ইজ আ ডিশ বেস্ট সার্ভড কোল্ড’, ‘আই অ্যাম গোয়িং টু মেক হিম অ্যান অফার হি কান্ট রিফিউজ’-এর মতো কালজয়ী সংলাপ।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে অর্ধশতক পুরনো এই ছবির রিল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ইতোমধ্যে। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ছবির পিকচার কোয়ালিটিও উন্নতমানের করা হয়েছে। আর সেই পরিশ্রমের ফসল, পর্দায় হাজির হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে।

দ্য গডফাদার বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা নির্মান হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে গ্যাংস্টার ঘরানার সিনেমার মধ্যে। ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণের জন্য মনোনীত হয়, বলা হয় ছবিটি “সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং নান্দনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ”। ছবিটি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা সর্বকালের সেরা মার্কিন চলচ্চিত্রের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। সিটিজেন কেইন ছবির পরেই এই ছবিটির অবস্থান। এর আরও দুটি অনুবর্তী পর্ব নির্মিত হয় – দ্য গডফাদার পার্ট ২ (১৯৭৪) এবং দ্য গডফাদার পার্ট ৩ (১৯৯০)।

চলচ্চিত্রটি মারিও পুজোর দ্য গডফাদার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। ছবিটির চিত্রনাট্য রচনার সময় প্রকাশের ৬৭ সপ্তাহ পরও উপন্যাসটি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রিত তালিকায় ছিল এবং দুই বছরে ৯ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত বইটি কয়েক বছর ইতিহাসের সর্বোচ্চ বিক্রিত প্রকাশিত কাজের তালিকায় ছিল। প্যারামাউন্ট পিকচার্স মূলত ১৯৬৭ সালে পুজোর এই উপন্যাসটির খোঁজ পায় যখন কোম্পানির সাহিত্য দল প্যারামাউন্টের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার বার্টের সাথে পুজোর ষাট পাতার অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি নিয়ে যোগাযোগ করে। বার্ট মনে করেন “এটি মাফিয়া গল্পের চেয়েও বেশি কিছু” এবং পুজোকে এই কাজের জন্য ১২,৫০০ মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দেন, এবং সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৮০,০০০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব দেন। পুজোর এজেন্ট তাকে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন, কিন্তু পুজো টাকার জন্য মরিয়া ছিলেন এবং প্রস্তাব গ্রহণ করেন। প্যারামাউন্টের রবার্ট ইভান্স এই বিষয়ে বলেন, যখন তারা ১৯৬৮ সালের শুরুর দিকে দেখা করেন, লেখক তাকে বিশ্বাস করে বলেছিলেন যে তার জুয়া খেলার পাওনা পরিশোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০,০০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে তখন তিনিই পুজোকে মাফিয়া শীর্ষক ষাট পাতার অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপির জন্য ১২,৫০০ মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দেন।

১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে প্যারামাউন্ট ঘোষণা দেয় যে তারা পুজোর আসন্ন কাজের জন্য তাকে সাহায্য করেছে এই গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের আশায়। ১৯৬৯ সালে প্যারামাউন্ট ৮০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছার কথা নিশ্চিত করে এবং ১৯৭১ সালের ক্রিসমাস ডেতে ছবিটি মুক্তির দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। ১৯৭০ সালের ২৩ মার্চ দাপ্তরিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় আলবার্ট এস. রুডি ছবিটি প্রযোজনা করবে, কারণ স্টুডিও নির্বাহীরা তার সাক্ষাৎকারে মুগ্ধ হয় এবং তিনি বাজেটের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।

দ্য গডফাদার ব্লকবাস্টার তকমা লাভ করে এবং বেশ কয়েকটি বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙ্গে ১৯৭২ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে মুক্তির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ছবিটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ থেকে ৮১.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে, ১৯৭৩ সালে পুনঃমুক্তি পেলে এর আয় বেড়ে দাড়ায় ৮৫.৭ মিলিয়নে, এবং ১৯৯৭ সালে সীমিত পুনঃমুক্তিতে এটি মোট ১৩৫ মিলিয়ন ডলার সমতুল্য আয় করে। এটি প্রেক্ষাগৃহ থেকে আয়ের দিক থেকে গন উইথ দ্য উইন্ড ছবির রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় এবং ১৯৭৫ সালে জস মুক্তির পূর্ব পর্যন্ত এই রেকর্ড ধরে রাখে। সে সময়ে এক সংবাদে জানানো হয় এটি উত্তর আমেরিকার প্রথম ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করা চলচ্চিত্র, কিন্তু এই গণনায় ভুল ছিল, ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য সাউন্ড অব মিউজিক প্রথম এই রেকর্ড করে।

চলচ্চিত্রটি নিজ দেশের মত দেশের বাইরেও সফলতা লাভ করে, এবং বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাগৃহ থেকে ১৪২ মিলিয়ন আয় করে সর্বোচ্চ নিট আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। দ্য গডফাদার ছবির মুনাফা এত বেশি হয় যে প্যারামাউন্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গালফ অ্যান্ড ওয়েস্টার্ন ইন্ড্রাস্ট্রিজ ইনকর্পোরেটেডের সে বছরের শেয়ারের মূল্য ৭৭ সেন্ট থেকে ৩.৩০ ডলারে উত্তীর্ণ হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


৫০ বছর পর আবারো বড় পর্দায় ‘দ্য গডফাদার ট্রিলজি’

Update Time : ০৫:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২

১৯৭২-এর হলিউড ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ফ্রান্সিস ফোর্ড কপ্পোলা পরিচালিত ‘দ্য গডফাদার’। ‘মারিও পুজো’র উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল অস্কারজয়ী এই সিনেমা। অভিনয়ে ছিলেন, মারলন ব্র্যান্ডো, আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরোর মতো শিল্পীরা।

তিনটি পর্বে ভাগ করে ছবি হয়ে পর্দায় এসেছিল গল্পটি। সেই ত্রয়ীর মুক্তির ৫০ বছর পেরোল ২০২২ সালে। সুবর্ণজয়ন্তী পালনে উঠে পড়ে লেগেছে প্যারামাউন্ট পিকচার্স। আমেরিকা এবং বিশ্বের বাছাই করা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে এই ছবিটি ফের মুক্তি পাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি। যার সৌজন্যে বড় পর্দায় ফের শোনা যাবে ‘রিভেঞ্জ ইজ আ ডিশ বেস্ট সার্ভড কোল্ড’, ‘আই অ্যাম গোয়িং টু মেক হিম অ্যান অফার হি কান্ট রিফিউজ’-এর মতো কালজয়ী সংলাপ।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে অর্ধশতক পুরনো এই ছবির রিল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ইতোমধ্যে। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ছবির পিকচার কোয়ালিটিও উন্নতমানের করা হয়েছে। আর সেই পরিশ্রমের ফসল, পর্দায় হাজির হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে।

দ্য গডফাদার বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা নির্মান হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে গ্যাংস্টার ঘরানার সিনেমার মধ্যে। ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণের জন্য মনোনীত হয়, বলা হয় ছবিটি “সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং নান্দনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ”। ছবিটি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা সর্বকালের সেরা মার্কিন চলচ্চিত্রের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। সিটিজেন কেইন ছবির পরেই এই ছবিটির অবস্থান। এর আরও দুটি অনুবর্তী পর্ব নির্মিত হয় – দ্য গডফাদার পার্ট ২ (১৯৭৪) এবং দ্য গডফাদার পার্ট ৩ (১৯৯০)।

চলচ্চিত্রটি মারিও পুজোর দ্য গডফাদার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। ছবিটির চিত্রনাট্য রচনার সময় প্রকাশের ৬৭ সপ্তাহ পরও উপন্যাসটি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রিত তালিকায় ছিল এবং দুই বছরে ৯ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত বইটি কয়েক বছর ইতিহাসের সর্বোচ্চ বিক্রিত প্রকাশিত কাজের তালিকায় ছিল। প্যারামাউন্ট পিকচার্স মূলত ১৯৬৭ সালে পুজোর এই উপন্যাসটির খোঁজ পায় যখন কোম্পানির সাহিত্য দল প্যারামাউন্টের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার বার্টের সাথে পুজোর ষাট পাতার অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি নিয়ে যোগাযোগ করে। বার্ট মনে করেন “এটি মাফিয়া গল্পের চেয়েও বেশি কিছু” এবং পুজোকে এই কাজের জন্য ১২,৫০০ মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দেন, এবং সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ৮০,০০০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব দেন। পুজোর এজেন্ট তাকে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন, কিন্তু পুজো টাকার জন্য মরিয়া ছিলেন এবং প্রস্তাব গ্রহণ করেন। প্যারামাউন্টের রবার্ট ইভান্স এই বিষয়ে বলেন, যখন তারা ১৯৬৮ সালের শুরুর দিকে দেখা করেন, লেখক তাকে বিশ্বাস করে বলেছিলেন যে তার জুয়া খেলার পাওনা পরিশোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০,০০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে তখন তিনিই পুজোকে মাফিয়া শীর্ষক ষাট পাতার অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপির জন্য ১২,৫০০ মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দেন।

১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে প্যারামাউন্ট ঘোষণা দেয় যে তারা পুজোর আসন্ন কাজের জন্য তাকে সাহায্য করেছে এই গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের আশায়। ১৯৬৯ সালে প্যারামাউন্ট ৮০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছার কথা নিশ্চিত করে এবং ১৯৭১ সালের ক্রিসমাস ডেতে ছবিটি মুক্তির দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। ১৯৭০ সালের ২৩ মার্চ দাপ্তরিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় আলবার্ট এস. রুডি ছবিটি প্রযোজনা করবে, কারণ স্টুডিও নির্বাহীরা তার সাক্ষাৎকারে মুগ্ধ হয় এবং তিনি বাজেটের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।

দ্য গডফাদার ব্লকবাস্টার তকমা লাভ করে এবং বেশ কয়েকটি বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙ্গে ১৯৭২ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে মুক্তির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ছবিটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ থেকে ৮১.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে, ১৯৭৩ সালে পুনঃমুক্তি পেলে এর আয় বেড়ে দাড়ায় ৮৫.৭ মিলিয়নে, এবং ১৯৯৭ সালে সীমিত পুনঃমুক্তিতে এটি মোট ১৩৫ মিলিয়ন ডলার সমতুল্য আয় করে। এটি প্রেক্ষাগৃহ থেকে আয়ের দিক থেকে গন উইথ দ্য উইন্ড ছবির রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় এবং ১৯৭৫ সালে জস মুক্তির পূর্ব পর্যন্ত এই রেকর্ড ধরে রাখে। সে সময়ে এক সংবাদে জানানো হয় এটি উত্তর আমেরিকার প্রথম ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করা চলচ্চিত্র, কিন্তু এই গণনায় ভুল ছিল, ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য সাউন্ড অব মিউজিক প্রথম এই রেকর্ড করে।

চলচ্চিত্রটি নিজ দেশের মত দেশের বাইরেও সফলতা লাভ করে, এবং বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাগৃহ থেকে ১৪২ মিলিয়ন আয় করে সর্বোচ্চ নিট আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। দ্য গডফাদার ছবির মুনাফা এত বেশি হয় যে প্যারামাউন্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গালফ অ্যান্ড ওয়েস্টার্ন ইন্ড্রাস্ট্রিজ ইনকর্পোরেটেডের সে বছরের শেয়ারের মূল্য ৭৭ সেন্ট থেকে ৩.৩০ ডলারে উত্তীর্ণ হয়।