রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে বাড়ছে রিজার্ভ, চাপ কমেছে বৈদেশিক লেনদেনে

- Update Time : ১২:১৪:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
- / 53
রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং পণ্য রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা বজায় থাকায় ক্রমেই বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (গ্রস রিজার্ভ) দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনা অনুযায়ী বিপিএম-৬ ভিত্তিক হিসাব অনুসারে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। তবে ব্যবহারযোগ্য বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখনও ১৬ বিলিয়নের ঘরেই রয়েছে।
৬ জুন (শুক্রবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চাপ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করলেও ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছে, ফলে আমদানি স্বাভাবিক থাকায় বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।
এর আগে, ৬ মে আকু বিল বাবদ ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে। ৪ মে পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, বিপিএম-৬ অনুসারে ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের আনুষ্ঠানিক হিসাব প্রকাশ না হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি মাসে গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ব্যয় বিবেচনায় এই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি মেটানো সম্ভব।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২২ সালের আগস্টে, যখন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমে গত বছরের জুলাইয়ে তা নেমে এসেছিল ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি করেনি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধিই রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা টাকায় প্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি। এর আগে মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স। মার্চ মাসে দেশে এসেছিল রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩ জুন পর্যন্ত দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, বৈশ্বিক প্রতিকূলতা ও অভ্যন্তরীণ সংকট সত্ত্বেও দেশের রপ্তানি খাতও শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।