শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

হোমল্যান্ড লাইফের ৬০ জনকে দুদকে তলব

  • Update Time : ০১:৪০:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / 11

হোমল্যান্ড লাইফের ৬০ জনকে দুদকে তলব

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ না করে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ১শ’ ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট ৬০ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংস্থার উপ-পরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত তাদের পৃথক ৩টি নোটিশ পাঠান।

হোমল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান,পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিকল্প পরিচালকসহ বিভিন্ন সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ২০২৪ এর ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। যাদের তলবি নোটিশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভূমিকা সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতবছর ১১ ফেব্রুয়ারি ‘গণমাধ্যমে  শত কেটি টাকা লোপাট : হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক : অস্তিত্বহীন জমিতে বালু ভরাট : বেতনাদি ও কমিশন পরিশোধের ভুয়া ভাউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট শত কোটি লোপাটের ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন দুদককে।

এ প্রেক্ষিতে দুদক অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বহু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। সর্বশেষ তলব করা হলো সংশ্লিষ্ট ৬০ কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে হোমল্যান্ডের চেয়ারম্যান ফয়জুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পরিচালক জামালউদ্দিন, নাফিসা সালমা, মো. মহিউদ্দিন, আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক, কামাল মিয়া, জামাল মিয়া, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ, মফিজউদ্দিন, ফয়জুল হকের বিকল্প পরিচালক এএইচএম মহসিন, পরিচালক রিজিয়া সুলতানা কোম্পানি সচিব মোয়াজ্জেমন হোসেন কয়ছর আলীও রয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো, অস্তিত্বহীন জমি ক্রয় এবং সেই ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট, অস্তিত্বহীন ‘সার্ভিস সেন্টার’ স্থাপন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের নামে লোপাট করা হয়েছে গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা। এ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিক, পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহীদের মধ্যে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, অনুমোদন লাভের পর ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ‘ হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:’। প্রতিষ্ঠানটির জন্মই হয় অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠানের ৩১ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একটি অস্তিত্বহীন জমি কেনা হয়। এই জমিতে পরে বালুও ভরাট করা হয়। যদিও পরবর্তীতে ওই জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। তবে জমি ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বালু ভরাট বাবদও ব্যয় দেখানো হয় কয়েক কোটি টাকা। সারাদেশে অন্তত ৪৪টি সার্ভিসিং সেন্টার খুলে সেগুলো ‘অগ্রিম খরচ’ বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ৬১ কোটি টাকা। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সালে এই লুটপাট আর আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। বিপুল এই আত্মসাতের ঘটনা উদ্ঘাটিত হয় ২০১০ সালের একটি বিশেষ নিরীক্ষায়। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করা এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি এক যুগেও। আইনি দুর্বলতার সুযোগে নানা ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকগণ লোপাট করেন অন্তত ১০৪ কোটি টাকা। রেকর্ড বলছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী এনামউদ্দীন, পরবর্তীতে তার পুত্র কাজী আরাফাত, পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে পরিচালক নজরুল ইসলাম, আব্দুর শুকুর ফারুক, মফিজ উদ্দিন এ অর্থ হাতিয়ে নেন। আত্মসাৎ সহায়তায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন কোম্পানির তৎকালীন উন্নয়ন ইনচার্জ জাকির হোসেন সরকার, জেনারেল ম্যানেজার ওয়ালি উল্লাহ নাসির, উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জলিল, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশার আকন্দ, এএমডি জাকির হোসেন, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণ ভুয়া ভাউচারে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন। বিগত চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণের অব্যাহত লুটপাটের প্রেক্ষাপটে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দেখা দিয়েছে তহবিল সঙ্কট। গ্রাহকরা তাদের টাকা পাচ্ছে না। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বীমা দাবি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বীমা দাবির টাকা ফেরত পাওয়া এখন অনিশ্চিত।

Please Share This Post in Your Social Media


শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

হোমল্যান্ড লাইফের ৬০ জনকে দুদকে তলব

Update Time : ০১:৪০:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ না করে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ১শ’ ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট ৬০ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংস্থার উপ-পরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত তাদের পৃথক ৩টি নোটিশ পাঠান।

হোমল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো নোটিশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান,পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিকল্প পরিচালকসহ বিভিন্ন সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ২০২৪ এর ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। যাদের তলবি নোটিশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভূমিকা সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতবছর ১১ ফেব্রুয়ারি ‘গণমাধ্যমে  শত কেটি টাকা লোপাট : হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক : অস্তিত্বহীন জমিতে বালু ভরাট : বেতনাদি ও কমিশন পরিশোধের ভুয়া ভাউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট শত কোটি লোপাটের ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন দুদককে।

এ প্রেক্ষিতে দুদক অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বহু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। সর্বশেষ তলব করা হলো সংশ্লিষ্ট ৬০ কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে হোমল্যান্ডের চেয়ারম্যান ফয়জুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পরিচালক জামালউদ্দিন, নাফিসা সালমা, মো. মহিউদ্দিন, আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক, কামাল মিয়া, জামাল মিয়া, আব্দুল হাই, আব্দুল আহাদ, মফিজউদ্দিন, ফয়জুল হকের বিকল্প পরিচালক এএইচএম মহসিন, পরিচালক রিজিয়া সুলতানা কোম্পানি সচিব মোয়াজ্জেমন হোসেন কয়ছর আলীও রয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো, অস্তিত্বহীন জমি ক্রয় এবং সেই ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট, অস্তিত্বহীন ‘সার্ভিস সেন্টার’ স্থাপন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের নামে লোপাট করা হয়েছে গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা। এ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মালিক, পরিচালক এবং মুখ্য নির্বাহীদের মধ্যে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, অনুমোদন লাভের পর ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ‘ হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:’। প্রতিষ্ঠানটির জন্মই হয় অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠানের ৩১ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একটি অস্তিত্বহীন জমি কেনা হয়। এই জমিতে পরে বালুও ভরাট করা হয়। যদিও পরবর্তীতে ওই জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। তবে জমি ক্রয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বালু ভরাট বাবদও ব্যয় দেখানো হয় কয়েক কোটি টাকা। সারাদেশে অন্তত ৪৪টি সার্ভিসিং সেন্টার খুলে সেগুলো ‘অগ্রিম খরচ’ বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ৬১ কোটি টাকা। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সালে এই লুটপাট আর আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। বিপুল এই আত্মসাতের ঘটনা উদ্ঘাটিত হয় ২০১০ সালের একটি বিশেষ নিরীক্ষায়। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করা এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি এক যুগেও। আইনি দুর্বলতার সুযোগে নানা ভুয়া ভাউচার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকগণ লোপাট করেন অন্তত ১০৪ কোটি টাকা। রেকর্ড বলছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী এনামউদ্দীন, পরবর্তীতে তার পুত্র কাজী আরাফাত, পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে পরিচালক নজরুল ইসলাম, আব্দুর শুকুর ফারুক, মফিজ উদ্দিন এ অর্থ হাতিয়ে নেন। আত্মসাৎ সহায়তায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন কোম্পানির তৎকালীন উন্নয়ন ইনচার্জ জাকির হোসেন সরকার, জেনারেল ম্যানেজার ওয়ালি উল্লাহ নাসির, উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জলিল, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশার আকন্দ, এএমডি জাকির হোসেন, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণ ভুয়া ভাউচারে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন। বিগত চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণের অব্যাহত লুটপাটের প্রেক্ষাপটে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দেখা দিয়েছে তহবিল সঙ্কট। গ্রাহকরা তাদের টাকা পাচ্ছে না। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বীমা দাবি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বীমা দাবির টাকা ফেরত পাওয়া এখন অনিশ্চিত।