জাল হচ্ছে ছোট নোটও
- Update Time : ১২:৫৪:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
- / 178
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সাধারণ মানুষের নজর এড়াতে এবার জাল নোটের কারবারিরা বাজারে ছাড়ছে ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ২০০ টাকার মতো ছোট নোট। এর সঙ্গে বড় জাল নোট তো আছেই। সম্প্রতি জাল নোট কারবারিদের একাধিক চক্র গ্রেপ্তারের পর ছোট জাল নোট ছাপানোর তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তারা বলছে, নতুন বড় নোট গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা সতর্ক থাকেন। সন্দেহ হলে যাচাই করার চেষ্টা করে নোটটি আসল না নকল। কিন্তু ছোট নোটের ক্ষেত্রে সন্দেহ করে না। ছোট জাল নোটে লাভ কম হলেও বাজারে চালানো যায় সহজ। এ কারণে তারা ছোট নোটগুলো জাল করছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।
অফলাইনে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে অনলাইনেও সক্রিয় হয়েছে জাল নোটের কারবারিরা। বিভিন্ন গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা জাল নোট বিক্রি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে তাদের বেশ কয়েকটি সিক্রেট গ্রুপ, যেখানে সারা দেশ থেকে হাজারো জাল নোটের ক্রেতা যুক্ত রয়েছে।
এমনই একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘কম মরলে জাল টাকা বিক্রি করি’। এই গ্রুপের সদস্য ৮০০-র বেশি। গ্রুপটিতে জাল নোট বিক্রির অসংখ্য পোস্ট রয়েছে। গত ৬ আগস্ট ‘সিজান ভাই টাকার ডিলার’ নামের একটি আইডি থেকে করা পোস্টে বলা হয়, সম্মানিত ক্রেতাগণ, আমাদের কাছে এ গ্রেড ১ লাখ জাল নোট পাচ্ছেন মাত্র ১২০০০ টাকায়। নতুন স্টক আছে, তাই ছোট-বড় সব রকমের মাল নিতে পারবেন। আমরাই দিচ্ছি ক্যাশ অন ডেলিভারির সুবিধা। অর্ডার করতে দ্রুত ইনবক্স করুন। ১০ টাকার নোট, ২০ টাকার নোট, ৫০ টাকার নোট, ১০০ টাকার নোট, ২০০ টাকার নোট। ভরপুর ছোট নোটের স্টক পাচ্ছেন আমাদের থেকে। অর্ডার করতে দ্রুত ইনবক্স করুন।
গত ২৭ আগস্ট একটি গ্রুপে ‘জাল টাকা বিক্রি করি’ আইডি থেকে দাবি করা হয়, তারা অর্ডার করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি দিচ্ছে। ৪৫০ টাকা পে করলে ছোট-বড় নোট ক্যাশ অন ডেলিভারিতে সারা দেশের যে কোনো জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে তারা। ছোট নোট ১ লাখ তারা দিচ্ছে ১৫ হাজার টাকায়।
বিভিন্ন গ্রুপের পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা দেশের যে কোনো স্থানে ক্যাশ অন হোম ডেলিভারি পাঠায়। ডেলিভারি পাওয়ার পর টাকা দিতে হয়। ৫০০ বা ১ হাজার টাকার ১ লাখ টাকা মূল্যের জাল নোটের দাম পড়ে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ছোট নোটগুলো ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
র্যাবের (গোয়েন্দা শাখা) এক কর্মকর্তা জানান, বড় জাল নোট চালাতে গিয়ে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই তারা ছোট নোটের দিকে ঝুঁকছে। অনলাইনে ছোট নোটের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ছোট-বড় অর্ধশতাধিক গ্রুপে জাল নোটের কারবারিরা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা তাদের মনিটর করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
ডেমরার একটি বাজার থেকে জাল নোটসহ একজনকে আটকের পর তার সূত্র ধরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ একটি চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০। গত ২২ আগস্ট র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০-এ যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চারজন হলেন মোহাম্মদ আমিনুল হক দুলাল ও তার সহযোগী আব্দুর রাজ্জাক দিদার, সুজন আলী ও মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান। তাদের কাছ থেকে জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
তারা এক বছর ধরে জাল নোটের কারবার করে আসছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে তাদের দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে যারা যোগাযোগ করত তাদের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার পর গোপন আরেকটি গ্রুপে যুক্ত করত। সেই গ্রুপে শুধু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। চক্রটি গত এক বছরে প্রায় ২ কোটি মূল্যমানের জাল নোট বাজারে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে ছোট নোটও ছিল।