অর্থনৈতিক করিডোরে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা: এডিবি

  • Update Time : ০৪:০৮:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩
  • / 124

নিজস্ব প্রতিবেদক

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছে, অর্থনৈতিক করিডোরের সুবিধা কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতে, এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে সাত কোটি ১৮ লাখ কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান হবে এক কোটি ২৭ লাখ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে চার কোটি ৬২ লাখ। পাশাপাশি এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার।

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে এডিবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি করিডোর সুবিধা ব্যবহার করা না যায় তাহলে ২০৫০ সালে কর্মসংস্থান হবে তিন কোটি ১১ লাখ। আর ব্যবহার করা গেলে হবে সাত কোটি ১৮ লাখ।

২০২৫ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে হবে এক কোটি ৩৪ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে এক কোটি ৫৭ লাখ।

২০৩০ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে কর্মসংস্থান হবে এক কোটি ৭০ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে হবে দুই কোটি ৩৪ লাখ।

২০৩৫ সালে সুবিধা কাজে না লাগানো গেলে দুই কোটি ১০ লাখ, আর কাজে লাগালে হবে তিন কোটি ৪৭ লাখ।

এছাড়া এই সুবিধা কাজে না লাগালে ২০৪০ সালে কর্মস্থান হবে দুই কোটি ৪৮ লাখ। তবে করিডোর সুবিধা কাজে লাগানো গেলে হবে চার কোটি ৬২ লাখ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থনৈতিক করিডোরের তিনটি পরিপূরক উপাদান রয়েছে। একটি বাণিজ্য ও পরিবহন করিডোর, উৎপাদন ক্লাস্টার যা অভ্যন্তরীণ বাজারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উভয়ই ব্যবহারের জন্য পণ্য উৎপাদন করে। এছাড়া শহুরে উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে পণ্যের প্রধান বাজার হিসাবে কাজ করে এবং আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের জন্য তারা শ্রম প্রযুক্তি, সহায়তা পরিষেবা, জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের উৎস হিসাবেও কাজ করে। এই তিনটি উপাদান একটি সাধারণ উন্নয়ন ব্লু প্রিন্টে যুক্ত করা হয়, যা উপযুক্ত নীতি সমর্থন এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব।

অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো, স্বল্পোন্নত অঞ্চলের একীকরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করা।

এডিবি জানায়, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ দেশের প্রধান পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। তাই বাংলাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ জুড়ে অভিন্ন, সামগ্রিক এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোরকে (বিইসি) দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল (খুলনা বিভাগ) থেকে উত্তর- পূর্ব অঞ্চলে (সিলেট) পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে। দেশের সারা অর্থনৈতিক করিডোরটি মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ কভার করে ১৪টি জেলাকে জুড়ে। এর বেশিরভাগ উত্তর-পূর্ব জেলাগুলি ছয়টি হটস্পটের একটিতে অন্তর্ভুক্ত।

এসময় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, বিশ্ব মন্দার এসময়ে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ এখন বড় ইস্যু। এ কারণে সম্পদের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়ন কেবল ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হলে হবে না। এটি অন্য জায়গায় প্রয়োজন। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল উন্নয়নের দিক থেকে এখনও পিছিয়ে। অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নের নতুন কেন্দ্র হতে পারে এসব স্থানে এতে করে ব্যবসা যেমন বাড়বে তেমনি উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্কও দ্বিগুণ বাড়াবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যতে এখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ। অথচ বাণিজ্য বাড়ানো উন্নয়নের জন্য বড় সহায়ক। এডিবি এদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করলেও এখন আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক করিডোরের সুবিধা নিতে ঢাকার আশপাশ দিয়ে বাইপাস রোড তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে এডিবির সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে ব্যবসা সহজীকরণ নীতির পাশাপাশি উদারিকরণ করা হলে দেশে অবৈধভাবে বাণিজ্য কমবে। অর্থনীতির গতি বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। শেখ হাসিনাকে সেই সুযোগ দিতে হবে।

প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ উদার বাণিজ্যনীতি চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে করে অবৈধ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য কমবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন করেন মি. সুন চ্যাং হোং।

আলোচক ছিলেন, এডিবির ডিরেক্টর সব্যসাচী মিত্র, প্রাণ-আরএফএলের ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়ে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


অর্থনৈতিক করিডোরে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা: এডিবি

Update Time : ০৪:০৮:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছে, অর্থনৈতিক করিডোরের সুবিধা কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতে, এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে সাত কোটি ১৮ লাখ কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান হবে এক কোটি ২৭ লাখ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে চার কোটি ৬২ লাখ। পাশাপাশি এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার।

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে এডিবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি করিডোর সুবিধা ব্যবহার করা না যায় তাহলে ২০৫০ সালে কর্মসংস্থান হবে তিন কোটি ১১ লাখ। আর ব্যবহার করা গেলে হবে সাত কোটি ১৮ লাখ।

২০২৫ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে হবে এক কোটি ৩৪ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে এক কোটি ৫৭ লাখ।

২০৩০ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে কর্মসংস্থান হবে এক কোটি ৭০ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে হবে দুই কোটি ৩৪ লাখ।

২০৩৫ সালে সুবিধা কাজে না লাগানো গেলে দুই কোটি ১০ লাখ, আর কাজে লাগালে হবে তিন কোটি ৪৭ লাখ।

এছাড়া এই সুবিধা কাজে না লাগালে ২০৪০ সালে কর্মস্থান হবে দুই কোটি ৪৮ লাখ। তবে করিডোর সুবিধা কাজে লাগানো গেলে হবে চার কোটি ৬২ লাখ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থনৈতিক করিডোরের তিনটি পরিপূরক উপাদান রয়েছে। একটি বাণিজ্য ও পরিবহন করিডোর, উৎপাদন ক্লাস্টার যা অভ্যন্তরীণ বাজারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উভয়ই ব্যবহারের জন্য পণ্য উৎপাদন করে। এছাড়া শহুরে উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে পণ্যের প্রধান বাজার হিসাবে কাজ করে এবং আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের জন্য তারা শ্রম প্রযুক্তি, সহায়তা পরিষেবা, জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের উৎস হিসাবেও কাজ করে। এই তিনটি উপাদান একটি সাধারণ উন্নয়ন ব্লু প্রিন্টে যুক্ত করা হয়, যা উপযুক্ত নীতি সমর্থন এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব।

অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো, স্বল্পোন্নত অঞ্চলের একীকরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করা।

এডিবি জানায়, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ দেশের প্রধান পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। তাই বাংলাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ জুড়ে অভিন্ন, সামগ্রিক এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোরকে (বিইসি) দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল (খুলনা বিভাগ) থেকে উত্তর- পূর্ব অঞ্চলে (সিলেট) পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে। দেশের সারা অর্থনৈতিক করিডোরটি মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ কভার করে ১৪টি জেলাকে জুড়ে। এর বেশিরভাগ উত্তর-পূর্ব জেলাগুলি ছয়টি হটস্পটের একটিতে অন্তর্ভুক্ত।

এসময় এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, বিশ্ব মন্দার এসময়ে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ এখন বড় ইস্যু। এ কারণে সম্পদের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়ন কেবল ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হলে হবে না। এটি অন্য জায়গায় প্রয়োজন। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল উন্নয়নের দিক থেকে এখনও পিছিয়ে। অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নের নতুন কেন্দ্র হতে পারে এসব স্থানে এতে করে ব্যবসা যেমন বাড়বে তেমনি উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্পর্কও দ্বিগুণ বাড়াবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যতে এখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ। অথচ বাণিজ্য বাড়ানো উন্নয়নের জন্য বড় সহায়ক। এডিবি এদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করলেও এখন আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক করিডোরের সুবিধা নিতে ঢাকার আশপাশ দিয়ে বাইপাস রোড তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে এডিবির সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে ব্যবসা সহজীকরণ নীতির পাশাপাশি উদারিকরণ করা হলে দেশে অবৈধভাবে বাণিজ্য কমবে। অর্থনীতির গতি বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। শেখ হাসিনাকে সেই সুযোগ দিতে হবে।

প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ উদার বাণিজ্যনীতি চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে করে অবৈধ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য কমবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন করেন মি. সুন চ্যাং হোং।

আলোচক ছিলেন, এডিবির ডিরেক্টর সব্যসাচী মিত্র, প্রাণ-আরএফএলের ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়ে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী।