উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে

  • Update Time : ০৮:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • / 158

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে । এই সময়ে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমেছে ৮৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর অর্থছাড় কমেছে ২৫ শতাংশ। এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ২৪৬ কোটি ডলার দিয়েছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৩০৯ কোটি ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইআরডি বলছে, গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণও বেড়েছে। ওই সময়ে ৮৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ৮৬ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। ডলারে পরিশোধের পরিমাণ ২ কোটি ডলার বাড়লেও দেশীয় মুদ্রায় পরিমাণটি তুলনামূলক বেশি। কারণ, ডলারের দাম বেড়েছে। এ কারণে ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে।

গত জুলাই-নভেম্বরে ৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডলারে বা বিদেশি মুদ্রায় ঋণের সুদাসল পরিশোধ করে।

ইআরডি জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ৪৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার। মূলত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড়ের গতি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।

এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতিও বেশ কম।

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করেছে জাপান।

এই সংস্থাটি ছাড় করেছে ৭৪২ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে চীন। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ৪২৫ মিলিয়ন এবং এডিবি ছাড় করেছে ৩১৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৭ হাজার ১২২ কোটি টাকার। এ বছর এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে তা ছিল ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এছাড়া একক মাস হিসেবে শুধু নভেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ মাসে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এর আগের বছরের নভেম্বরে বাস্তবায়ন ছিলো ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ একক মাস হিসেবে গত বছরের তুলনায় বাস্তবায়ন বেড়েছে।

এডিপির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থ খরচ করেছে ২৭ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। যা বরাদ্দের ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিদেশি অর্থ খরচ করেছে ১৭ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া বাকি অর্থ খরচ হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৬টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প ১ হাজার ৪৪১টি, উপ-প্রকল্প ৪৬টি এবং উন্নয়ন সহায়তা থোক ৯টি। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি, বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৯৬টি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে

Update Time : ০৮:৪৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে । এই সময়ে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমেছে ৮৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর অর্থছাড় কমেছে ২৫ শতাংশ। এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ২৪৬ কোটি ডলার দিয়েছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৩০৯ কোটি ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইআরডি বলছে, গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণও বেড়েছে। ওই সময়ে ৮৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ৮৬ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। ডলারে পরিশোধের পরিমাণ ২ কোটি ডলার বাড়লেও দেশীয় মুদ্রায় পরিমাণটি তুলনামূলক বেশি। কারণ, ডলারের দাম বেড়েছে। এ কারণে ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে।

গত জুলাই-নভেম্বরে ৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ডলারে বা বিদেশি মুদ্রায় ঋণের সুদাসল পরিশোধ করে।

ইআরডি জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ৪৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার। মূলত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড়ের গতি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।

এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতিও বেশ কম।

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করেছে জাপান।

এই সংস্থাটি ছাড় করেছে ৭৪২ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে চীন। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ৪২৫ মিলিয়ন এবং এডিবি ছাড় করেছে ৩১৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৭ হাজার ১২২ কোটি টাকার। এ বছর এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে তা ছিল ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এছাড়া একক মাস হিসেবে শুধু নভেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ মাসে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এর আগের বছরের নভেম্বরে বাস্তবায়ন ছিলো ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ একক মাস হিসেবে গত বছরের তুলনায় বাস্তবায়ন বেড়েছে।

এডিপির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থ খরচ করেছে ২৭ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। যা বরাদ্দের ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিদেশি অর্থ খরচ করেছে ১৭ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া বাকি অর্থ খরচ হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৬টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প ১ হাজার ৪৪১টি, উপ-প্রকল্প ৪৬টি এবং উন্নয়ন সহায়তা থোক ৯টি। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি, বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৯৬টি।