আবরার হত্যা: আরেক জনের সাক্ষ্য ও জেরা

  • Update Time : ০৪:৩৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
  • / 229

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বুধবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র তাজোয়ার বখতিয়ার জাহিদ সাক্ষ্য দেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪২তম সাক্ষী।

বুধবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র তাজোয়ার বখতিয়ার জাহিদ সাক্ষ্য দেন।

জাহিদ সাক্ষীর জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাত অনুমান ১১টা ৪০ মিনিটে আমি আমার ২০০৭ নম্বর রুম (কক্ষ) থেকে বাথরুমে যাওয়ার সময় ২০১১ নম্বর কক্ষের সামনে প্রচুর স্যান্ডেল দেখতে পাই। এরপর বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার নিজের কক্ষে গিয়ে মানিব্যাগ নিয়ে ক্যান্টিনে খাবার কিনতে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাবার নিয়ে আমি এসে আমার কক্ষের সামনে দাড়িয়ে তা খাই। এমন সময় (রাত ১১টা ৫০ মিনিট) অনিক সরকারকে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বেরিয়ে ২০১২ নম্বর কক্ষের দিকে যেতে দেখি। তখন অনিক সরকারের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছাত্র ছিল। অনিক সরকারের জার্সিতে তার নাম লেখা ছিল। এরপর আমি আমার রুমে চলে যাই।’

জবানবন্দিতে জাহিদ আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর আবার অনিক সরকার ২০১২ নম্বর কক্ষ থেকে বেরিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে যায়। এমন সময় মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম আমার কক্ষে এলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, ২০১১ নম্বর কক্ষে কী হয়েছে? সে তখন আমাকে বলে ২০১১ নম্বর কক্ষে শিবির সন্দেহে একজনকে ধরেছে।

‘শিবির সন্দেহে কাউকে ধরার মতো ঘটনা আগেও ঘটেছে। তাই আমি কিছু না ভেবে রেহমান, বিথুন, রাফসান ও আনামকে নিয়ে তিতুমীর হলের সামনের ক্যান্টিনে নাশতা খেতে যাই। রাত তখন আনুমানিক দেড়টা বাজে।’

সাক্ষ্যে জাহিদ আরও বলেন, ‘এরপর আমরা হলে ফিরে দেখি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম রাফসানের বিছানায় শুয়ে আছে। আমাদের দেখে সে উঠে যায় এবং আমার কাছে জানতে চায়, সে আমার বিছানায় একটু ঘুমাতে পারবে কিনা? আমি বলি, হ্যাঁ। সমস্যা নাই, আপনি ঘুমাতে পারেন।

জবানবন্দিতে জাহিদ বলেন, তখন সে (অমর্ত্য ইসলাম) আমাদের কাছে বলে যে অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, সকাল ও জিওন শিবির সন্দেহে একটি ছেলেকে প্রচুর পিটিয়েছে।’

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা সাক্ষীকে জবাবন্দি দিতে সহয়তা করেন।

বুয়েট ছাত্র আবরারকে পেটানোর পর সন্দেহভাজনরা ধরাধরি করে কক্ষ থেকে বাইরে নিয়ে যান। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সে দৃশ্য। ফাইল ছবি

তাজোয়ার বখতিয়ার জাহিদের জবানবন্দি শেষে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলূ তাকে (জাহিদ) জেরা করন। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি ওই ঘটনা আজকের কথিত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের কাছে জেনেছেন এবং আজ আদালতে সাক্ষী দিতে এসেছেন। সেই মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী কি না? উত্তরে সাক্ষী জাহিদ বলেন, ‘হ্যাঁ, সে দেখা সাক্ষী।’

এরপর আইনজীবী মাহবুব আহম্মেদ, আমিনূল গনি টিটো ও রেজাউল করিম সরকার তাকে জেরা করেন।

এর আগে আদালতে ৪১ নম্বর সাক্ষী আব্দূল মবিন ইবনে হাফিজ প্রত্যয়ের জেরা বাকি থাকায় আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো, আজিজুর রহমান দুলু, রেজাউল করিম সরকার ও ফারুক আহম্মেদসহ কয়েকজনে মিলে তাকে জেরা করেন ।

বুধবার আদালতের বিচার কাজ বেলা সাড়ে এগারোটায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় মুলতবি করা হয়। এ নিয়ে মামলাটির মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য শেষ হলো ।

গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। গত ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আবরার ফাহাদ রাব্বি বুয়েটের তড়িৎ ও বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আবরার হত্যা: আরেক জনের সাক্ষ্য ও জেরা

Update Time : ০৪:৩৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বুধবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র তাজোয়ার বখতিয়ার জাহিদ সাক্ষ্য দেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪২তম সাক্ষী।

বুধবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র তাজোয়ার বখতিয়ার জাহিদ সাক্ষ্য দেন।

জাহিদ সাক্ষীর জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাত অনুমান ১১টা ৪০ মিনিটে আমি আমার ২০০৭ নম্বর রুম (কক্ষ) থেকে বাথরুমে যাওয়ার সময় ২০১১ নম্বর কক্ষের সামনে প্রচুর স্যান্ডেল দেখতে পাই। এরপর বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার নিজের কক্ষে গিয়ে মানিব্যাগ নিয়ে ক্যান্টিনে খাবার কিনতে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাবার নিয়ে আমি এসে আমার কক্ষের সামনে দাড়িয়ে তা খাই। এমন সময় (রাত ১১টা ৫০ মিনিট) অনিক সরকারকে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বেরিয়ে ২০১২ নম্বর কক্ষের দিকে যেতে দেখি। তখন অনিক সরকারের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছাত্র ছিল। অনিক সরকারের জার্সিতে তার নাম লেখা ছিল। এরপর আমি আমার রুমে চলে যাই।’

জবানবন্দিতে জাহিদ আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর আবার অনিক সরকার ২০১২ নম্বর কক্ষ থেকে বেরিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে যায়। এমন সময় মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম আমার কক্ষে এলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, ২০১১ নম্বর কক্ষে কী হয়েছে? সে তখন আমাকে বলে ২০১১ নম্বর কক্ষে শিবির সন্দেহে একজনকে ধরেছে।

‘শিবির সন্দেহে কাউকে ধরার মতো ঘটনা আগেও ঘটেছে। তাই আমি কিছু না ভেবে রেহমান, বিথুন, রাফসান ও আনামকে নিয়ে তিতুমীর হলের সামনের ক্যান্টিনে নাশতা খেতে যাই। রাত তখন আনুমানিক দেড়টা বাজে।’

সাক্ষ্যে জাহিদ আরও বলেন, ‘এরপর আমরা হলে ফিরে দেখি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম রাফসানের বিছানায় শুয়ে আছে। আমাদের দেখে সে উঠে যায় এবং আমার কাছে জানতে চায়, সে আমার বিছানায় একটু ঘুমাতে পারবে কিনা? আমি বলি, হ্যাঁ। সমস্যা নাই, আপনি ঘুমাতে পারেন।

জবানবন্দিতে জাহিদ বলেন, তখন সে (অমর্ত্য ইসলাম) আমাদের কাছে বলে যে অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, সকাল ও জিওন শিবির সন্দেহে একটি ছেলেকে প্রচুর পিটিয়েছে।’

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা সাক্ষীকে জবাবন্দি দিতে সহয়তা করেন।

বুয়েট ছাত্র আবরারকে পেটানোর পর সন্দেহভাজনরা ধরাধরি করে কক্ষ থেকে বাইরে নিয়ে যান। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সে দৃশ্য। ফাইল ছবি

তাজোয়ার বখতিয়ার জাহিদের জবানবন্দি শেষে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলূ তাকে (জাহিদ) জেরা করন। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি ওই ঘটনা আজকের কথিত আসামি মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলামের কাছে জেনেছেন এবং আজ আদালতে সাক্ষী দিতে এসেছেন। সেই মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী কি না? উত্তরে সাক্ষী জাহিদ বলেন, ‘হ্যাঁ, সে দেখা সাক্ষী।’

এরপর আইনজীবী মাহবুব আহম্মেদ, আমিনূল গনি টিটো ও রেজাউল করিম সরকার তাকে জেরা করেন।

এর আগে আদালতে ৪১ নম্বর সাক্ষী আব্দূল মবিন ইবনে হাফিজ প্রত্যয়ের জেরা বাকি থাকায় আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো, আজিজুর রহমান দুলু, রেজাউল করিম সরকার ও ফারুক আহম্মেদসহ কয়েকজনে মিলে তাকে জেরা করেন ।

বুধবার আদালতের বিচার কাজ বেলা সাড়ে এগারোটায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় মুলতবি করা হয়। এ নিয়ে মামলাটির মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য শেষ হলো ।

গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। গত ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আবরার ফাহাদ রাব্বি বুয়েটের তড়িৎ ও বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।