“বিজয়ের ৪৯ পেরিয়ে বাংলাদেশের রূপ রূপায়ন”

  • আপডেটের সময়: ০৫:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
  • / 281
তরিকুল ইসলাম মাসুম:
স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শতজন্মবার্ষিকীতে পদার্পণ করেছি আমরা। বিজয়ের ৫০ এ পদার্পন করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে ৷ ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে প্রথম বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালি জাতি ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলা৷ জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে জাতি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যাবে৷ বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় “বঙ্গবন্ধু” নামক কবিতায় লিখেছেন”যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান৷
.
দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা রক্ত গঙ্গা বহমান নাই নাই ভয় হবে হবে জয় জয় শেখ মুজিবুর রহমান ৷ স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকসরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা শুরু করলে বাঙালি জাতি বীরদর্পে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ৷ ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতবর্ষ বিভক্ত হলেও দুইটি আলাদা প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান গঠন করা যৌক্তিক ছিল না ৷ যার ফলশ্রুতিতেই পাকিস্তান সরকারের অধীনে দীর্ঘ ২৪ বছর শাসন আর শোষণের দুর্দশার মধ্যে কেটেছে বাঙালি জাতির৷ মুক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যাটি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের দৃশ্যপট থেকে উন্মোচিত করতে চাই ৷ এখানে ১৯৭১ সালে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল ৷ সেই স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই স্মৃতি সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে৷স্থাপতি সোহেল তানভীর এটি নির্মাণ করেন।
.
স্মৃতিসৌধটি ২৩ টি ত্রিভূজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে গঠিত যা বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে ৷ ২৩ টি দেয়াল (আগস্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১) দ্বারা ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে, যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল ৷ শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট ৷ প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে ৷ এর ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলিকে বোঝানো হয়েছে। ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলো মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৯টি জেলাকে বুঝানো হয়েছে। এটির বেদীতে আরোহণের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে যা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তা বুঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল ফটকের রাস্তাটি মূল স্মৃতিসৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে।
.
এখানে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। স্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাশে প্রথম দেয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে যাকে রক্তের সাগর বলা হয়। লাল মঞ্চ থেকে যে ২৩ টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুরি-পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে, যা দিয়ে ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতাকে প্রতীক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে । ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করেছিল ৷ সেই থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ইতি টেনে আমরা পেলাম লাল-সবুজ পতাকা ঘোচিত একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র ৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিগত হওয়ার পর বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো: ১. মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে ৷ – (নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট) ২. শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে । – (ফিদেল কাস্ট্রো) ৩. আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য । – (ইয়াসির আরাফাত) ৪. শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত ।
.
তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন । তার অনন্য সাধারন সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল । – (ইন্দিরা গান্ধী) 5. আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না । – (হেনরি কিসিঞ্জার) 6. শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে । (বিবিসি-১৫ আগস্ট ১৯৭৫) বঙ্গবন্ধু আজ নেই, আছে তাঁর স্মৃতি-বিজড়িত পিতৃভূমি, আছে স্বাধীন সোনার বাংলা আর বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ৷ যিনি ছিলেন কৈশরে দূরন্ত, যৌবনে বিপ্লবী, আর পৌঢ়ে বাঙালির মুক্তিকামী মহান নেতা ৷ স্বাধীনতার ৪ দশক পেরিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে আমরা পৌঁছে গেছি ৷ দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে ৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার দুর্বার নের্তৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতির সোপানে ধাবিত হচ্ছে ৷ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নের দেশে আর ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে ৷
তারই ধারাবাহিকতায় আজ অকল্পনীয় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ৷ ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন হল, দৃশ্যমান হল পদ্মা সেতুর মত দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ কাজ চলছে, রূপপুর পারমাবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনার কাজও বেগমান রয়েছে দুর্বার গতিতে ৷ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সর্বক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এসেছে ৷ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিকিৎসা, খেলাধুলায় উন্নতির ছোঁয়া লক্ষ্যণীয় ৷ স্বাধীনতা পরবর্তী মাথাপিছু আয় ১১০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি আজ তা ১৯০৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে (১১ আগস্ট, ২০২০ অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলার) ৷ উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলেছে ব্যাপকভাবে, মাত্র ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৫ টিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ৷ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বৃদ্ধি পেয়েছে ; সরকারিকরণ করা হয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৷ তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক, তবে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এক্ষেত্রে অনেক পিছে ৷ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আইসিটি নৈতিকতা মানা হয় না, আর তরুণ-তরুণীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যহারের চাইতে অপব্যবহারই বেশী করছে ৷ ফলে তরুণেরা ধ্বংসের মুখে নিপতিত হতে চলেছে দিন দিন৷
.
সরকারের উচিত হবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সঠিক আইন বাস্তবায়ন আর বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা করে জনসম্পদে রূপান্তর করা ৷ তবেই আমরা পারব আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে অর্জন করতে ৷ জাতি পাবে উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা আর বাসস্থানের পরিবেশ ৷ দেশ হবে স্বনির্ভর আর স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত স্বপ্নের সোনার বাংলা ৷ বিশ্বজুড়ে আজ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অজস্র রোড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সেতু, ইকোপার্ক আরও কতো কি ! কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও ৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সোনার বাংলা গড়তে ৷ তবেই বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ সোনার দেশ, শান্তির পুন্যভূমি ৷
.
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷
ট্যাগ :

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন


“বিজয়ের ৪৯ পেরিয়ে বাংলাদেশের রূপ রূপায়ন”

আপডেটের সময়: ০৫:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
তরিকুল ইসলাম মাসুম:
স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শতজন্মবার্ষিকীতে পদার্পণ করেছি আমরা। বিজয়ের ৫০ এ পদার্পন করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে ৷ ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে প্রথম বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালি জাতি ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলা৷ জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে জাতি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যাবে৷ বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় “বঙ্গবন্ধু” নামক কবিতায় লিখেছেন”যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান৷
.
দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা রক্ত গঙ্গা বহমান নাই নাই ভয় হবে হবে জয় জয় শেখ মুজিবুর রহমান ৷ স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকসরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা শুরু করলে বাঙালি জাতি বীরদর্পে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ৷ ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতবর্ষ বিভক্ত হলেও দুইটি আলাদা প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান গঠন করা যৌক্তিক ছিল না ৷ যার ফলশ্রুতিতেই পাকিস্তান সরকারের অধীনে দীর্ঘ ২৪ বছর শাসন আর শোষণের দুর্দশার মধ্যে কেটেছে বাঙালি জাতির৷ মুক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যাটি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের দৃশ্যপট থেকে উন্মোচিত করতে চাই ৷ এখানে ১৯৭১ সালে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল ৷ সেই স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই স্মৃতি সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে৷স্থাপতি সোহেল তানভীর এটি নির্মাণ করেন।
.
স্মৃতিসৌধটি ২৩ টি ত্রিভূজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে গঠিত যা বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে ৷ ২৩ টি দেয়াল (আগস্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১) দ্বারা ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে, যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল ৷ শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট ৷ প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে ৷ এর ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলিকে বোঝানো হয়েছে। ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলো মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৯টি জেলাকে বুঝানো হয়েছে। এটির বেদীতে আরোহণের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে যা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তা বুঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল ফটকের রাস্তাটি মূল স্মৃতিসৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে।
.
এখানে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। স্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাশে প্রথম দেয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে যাকে রক্তের সাগর বলা হয়। লাল মঞ্চ থেকে যে ২৩ টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুরি-পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে, যা দিয়ে ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতাকে প্রতীক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে । ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করেছিল ৷ সেই থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ইতি টেনে আমরা পেলাম লাল-সবুজ পতাকা ঘোচিত একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র ৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিগত হওয়ার পর বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো: ১. মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে ৷ – (নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট) ২. শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে । – (ফিদেল কাস্ট্রো) ৩. আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য । – (ইয়াসির আরাফাত) ৪. শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত ।
.
তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন । তার অনন্য সাধারন সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল । – (ইন্দিরা গান্ধী) 5. আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না । – (হেনরি কিসিঞ্জার) 6. শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানীরা সংকোচবোধ করেছে । (বিবিসি-১৫ আগস্ট ১৯৭৫) বঙ্গবন্ধু আজ নেই, আছে তাঁর স্মৃতি-বিজড়িত পিতৃভূমি, আছে স্বাধীন সোনার বাংলা আর বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ৷ যিনি ছিলেন কৈশরে দূরন্ত, যৌবনে বিপ্লবী, আর পৌঢ়ে বাঙালির মুক্তিকামী মহান নেতা ৷ স্বাধীনতার ৪ দশক পেরিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে আমরা পৌঁছে গেছি ৷ দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে ৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার দুর্বার নের্তৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নশীল থেকে উন্নতির সোপানে ধাবিত হচ্ছে ৷ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নের দেশে আর ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে ৷
তারই ধারাবাহিকতায় আজ অকল্পনীয় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ৷ ইতোমধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন হল, দৃশ্যমান হল পদ্মা সেতুর মত দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ কাজ চলছে, রূপপুর পারমাবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য স্থাপনার কাজও বেগমান রয়েছে দুর্বার গতিতে ৷ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সর্বক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এসেছে ৷ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিকিৎসা, খেলাধুলায় উন্নতির ছোঁয়া লক্ষ্যণীয় ৷ স্বাধীনতা পরবর্তী মাথাপিছু আয় ১১০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি আজ তা ১৯০৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে (১১ আগস্ট, ২০২০ অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলার) ৷ উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলেছে ব্যাপকভাবে, মাত্র ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৫ টিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ৷ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বৃদ্ধি পেয়েছে ; সরকারিকরণ করা হয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৷ তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক, তবে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এক্ষেত্রে অনেক পিছে ৷ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আইসিটি নৈতিকতা মানা হয় না, আর তরুণ-তরুণীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যহারের চাইতে অপব্যবহারই বেশী করছে ৷ ফলে তরুণেরা ধ্বংসের মুখে নিপতিত হতে চলেছে দিন দিন৷
.
সরকারের উচিত হবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সঠিক আইন বাস্তবায়ন আর বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা করে জনসম্পদে রূপান্তর করা ৷ তবেই আমরা পারব আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে অর্জন করতে ৷ জাতি পাবে উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা আর বাসস্থানের পরিবেশ ৷ দেশ হবে স্বনির্ভর আর স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত স্বপ্নের সোনার বাংলা ৷ বিশ্বজুড়ে আজ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অজস্র রোড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সেতু, ইকোপার্ক আরও কতো কি ! কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও ৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সোনার বাংলা গড়তে ৷ তবেই বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ সোনার দেশ, শান্তির পুন্যভূমি ৷
.
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ৷