৫ দিনের মধ্যে সৈয়দপুরে আকলিমা হত্যার রহস্য উম্মোচিত-গ্রেফতার ২
- Update Time : ০৫:২০:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০২০
- / 159
মশিয়ার রহমান, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের উত্তর পাশ থেকে গত ২৩ আগস্ট উদ্ধার হওয়া আকলিমা নামের গৃহবধূর হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ।
.
শনিবার (২৯ আগস্ট) এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে নীলফামারী পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম) জানান, গত ২৩ আগস্ট সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের উত্তর পাশ থেকে আকলিমা(২৭) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ।
.
আকলিমা উক্ত ইউনিয়নের কিছামত কামারপুকুর এলাকার মৃত আবেদ আলীর মেয়ে। তিনি বলেন, গত ৮ বছর পূর্বে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হাবড়া রসুলপুর এলাকার আনিছুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলামের সাথে আকলিমার বিয়ে হয়। সে তিন সন্তানের জননী। স্বামী শরিফুলের পরকীয়ার কারণে তাদের সংসারে দ্বন্দ লেগে থাকতো এবং শরিফুল তাকে নির্যাতন করতো ।
.
গত ২৩ আগস্টের কয়েক দিন আগেও আকলিমার স্বামী তার সন্তানদের রেখে তাকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে সে তার ভাইদের বাড়িতে আসে। ভাইয়ের বাড়িতেও অনেক গালমন্দ শুনে, রাগে ক্ষোভে ভাইদের বাড়ি থেকে ২২ আগস্ট নিকটস্থ কামারপুকুরে গেলে কামারপুকুর ইউনিয়নের কাঙ্গালুপাড়ার আনারুল (৩৫), মোহাম্মদ শুভ(২০) ও হৃদয় (২০) নামে তিন জন তাকে সাহায্য করার কথা বলে খাবার ও টাকা দেওয়ার লোভ দেয়। রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে মর্মে সময় কালক্ষেপণ করে রাত করায়।
.
একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে আকলিমাকে নিয়ে নির্জন বাঁশঝাড়ে নিয়ে গণধর্ষণ ও হত্যা করে। পরবর্তীতে হত্যাকে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য ডারবি সিগারেটের ফয়েল পেপারে পেন্সিল দিয়ে লিখে রাখে “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না “। সাজানো আত্নহত্যার চিরকুটটি নিহতের কোমরে গুজে রাখে এবং গলায় রশি দিয়ে বিদ্যুতের খাম্বার সাথে ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধারের দিনেই আত্নহত্যার সাজানো চিরকুটটা ও পাশে পরে থাকা পেন্সিলের টুকরো উদ্ধার করেছিল। সেই আলামত দিয়ে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল এর নেতৃত্বে সৈয়দপুর থানা পুলিশ মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করে। সৈয়দপুর থানা পুলিশের দুই চৌকস পুলিশ রাখাল বেশে ঐ এলাকায় যায়।
.
ডারবী সিগারেট খায় এমন কিছু লোককে শনাক্ত করে । পরবর্তীতে পুলিশ কৌশলে ডারবী সিগারেট খাওয়া লোকদের কাছ থেকে হাতের লেখা সংগ্রহ করে। এমতাবস্থায় কাঙ্গালুপাড়ার আব্দুল করিমের ছেলে আনারুলের হাতের লেখার সাথে মরদেহের কোমরে পাওয়া চিরকুটে লিখা ” আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না ‘ মিলে যায় । সৈয়দপুর থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে আনারুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে আসল রহস্য । তার দেয়া তথ্যে ঐ রাতেই একই এলাকার মতিয়ারের ছেলে মোহাম্মদ শুভকে আটক করা হয় ।
.
অপরাধীরা শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এতে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা বলে । এরা দু’জন ছাড়াও হৃদয় (২০) নামে আরও একজনের সম্পৃক্ততা আছে বলে পুলিশ জানায়। তাকেও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
.
শনিবার বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটিই জানিয়েছেন নীলফামারী পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান (বিপিএম পিপিএম)।
.
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম আতিকুর রহমান, সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল প্রমুখ।
Tag :