মালয়েশিয়া’র স্বাধীনতা দিবস ৩১ আগস্ট

  • Update Time : ০৭:৫৩:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০
  • / 243

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া পা রাখছে স্বাধীনতা লাভের ৬৩ তম বার্ষিকীতে। এবারের স্লোগান- ‘মালয়েশিয়া পিরিহাতিন’ (মালয়েশিয়া যত্নশীল)।

১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহংকারের দিন এটি।

প্রতি বছর দিবসটি উদযাপনে প্রশাসনের পাশাপাশি জন সাধারণের মাঝেও দেখা যায় ব্যাপক প্রস্তুতি। রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরসহ রাজ্যে রাজ্যে ছেয়ে গেছে জাতীয় পতাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে নানান অফার। করোনা মহামারীর প্রভাবে নানান বিধি নিষেধ আরোপ করা হলেও এ দিবসের উৎসবের কোন কমতি দেখা যাচ্ছে না।

করোনাভাইরাসের কারণে এসওপি মেনে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার।
আশিয়ান এর প্রাণকেন্দ্র মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ। যার মোট আয়তন ৩,৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার। মোট ১৩ টি প্রদেশ এবং তিনটি প্রশাসনিক অঞ্চল আছে। জনসংখ্যা ৩২.৭ মিলিয়ন। মাথা পিছু আয় ১৩৫৪ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে উন্নত রাষ্ট্র ঘোষণা করার টার্গেট অর্জন করতে সক্ষম না হলেও ২০৩০ সালে উন্নত রাষ্ট্র ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চীন, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ড এর জল ও স্থল সীমান্ত ঘেরা মালয়েশিয়ার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। পর্যটকদের প্রথম পছন্দের দেশ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বিশ্বের সেরা কসমোপলিটন সিটি। মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা মালয় হলেও চাইনিজ ও তামিল ভাষার প্রাধান্য স্বীকৃত। সকলে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে।

সাংবিধানিক রাজা দেশটির প্রধান হলেও সরকার প্রধান নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচিত সংসদ আছে। প্রাদেশিক সরকার আছে এবং রাজা নির্বাচিত হয় প্রাদেশিক সুলতানদের মধ্য থেকে যা মালয়েশিয়ার ঐক্যকে করেছে সমৃদ্ধ। রাজা মালয়েশিয়ার জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। মালয়েশিয়া মুসলিম দেশ হলেও এখানে চাইনিজ মালয়েশিয়ান এবং ইন্ডিয়ান মালয়েশিয়ান যার অধিকাংশই খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ধর্মীয় সম্প্রীতি মালয়েশিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য দান করেছে। শ্রম, সেকেন্ড হোম বা বাণিজ্যিক কারণে মালয়েশিয়ায় অনেক অভিবাসী রয়েছে।

মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত। গত ৩০ বছরে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া একটি উঠতি শিল্প উন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শতভাগ কর্মসংস্থান থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে বেকারত্ব বেড়ে গেছে। মালয়েশিয়া ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আভাস দিয়েছে। ইতোমধ্যে করোনা কালে সরকার ৪ টি বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করছে ক্রমশ:। পর্যটন শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত হলেও করোনা কারণে এখন কোন পর্যটক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারছে না। মেডিকেল পর্যটন রয়েছে মালয়েশিয়ার।

মানব সম্পদ উন্নয়ন করতে মালয়েশিয়া বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করতে ইতোমধ্যে কর্মীদের কল্যাণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বেতন ভাতা বৃদ্ধি বীমা সহ নিরাপত্তা ও বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে শূন্য অভিবাসন এর দিকে ধাবিত হবার লক্ষণ স্পষ্ট । কারিগরি শিক্ষায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেশীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস করেছে ফলে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী আছে। চিকিৎসা শিক্ষায় অনেক উন্নতি করেছে।

বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তানশ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে প্রতিযোগিতার আছে। ক্ষমতার পালাবদল থাকলেও মালয়েশিয়ার উন্নয়নে ধারাবাহিকতা চলে আসছে।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে এবং এই অঞ্চলের মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে গেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত ভিত্তিতে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৭৬ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মী আসতে শুরু করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রম, শিক্ষা, সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালয়েশিয়া এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য-অংশীদার।

২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১১-১২ সালে ছিল মাত্র ৫৬.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে বাংলাদেশে হাউজিং, টেলিকম, পাওয়ার প্লান্ট এবং ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগ অংশীদার যার পরিমাণ ৮১৫.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে জ্বালানী ও ভোজ্য তেল আমদানি করে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার শ্রম সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে নবমাত্রা পেয়েছে বিশেষ করে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফর করেন এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে লেবার সোর্স কান্ট্রির স্বীকৃতি দেয়। এরপর জি টু জি প্লাস চুক্তি করে যার আওতায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশির নতুন করে কর্মসংস্থান হয়। অপরদিকে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে চলা রিহায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশী বৈধতা ও কাজ পায়, অন্যথায় এদের খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হত। বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে কোন ধরনের শারীরিক শাস্তি না দিয়ে কেবল সামান্য আর্থিক জরিমানা আরোপ করে দেশে ফিরে যাবার সুযোগ দিয়েছে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার সরকার এই প্রথম বিদেশি কর্মীকে একই সেক্টরে মালিক পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে, ক্যাম্পে থাকা এবং অন্যান্য অবৈধদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে বৈধতা দিয়ে কাজে নিয়োগ দেওয়ার জন্য হাইকমিশন জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। উন্নত মালয়েশিয়া বিনির্মাণে বাংলাদেশী কর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। আগামীতে দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মালয়েশিয়া’র স্বাধীনতা দিবস ৩১ আগস্ট

Update Time : ০৭:৫৩:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া পা রাখছে স্বাধীনতা লাভের ৬৩ তম বার্ষিকীতে। এবারের স্লোগান- ‘মালয়েশিয়া পিরিহাতিন’ (মালয়েশিয়া যত্নশীল)।

১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহংকারের দিন এটি।

প্রতি বছর দিবসটি উদযাপনে প্রশাসনের পাশাপাশি জন সাধারণের মাঝেও দেখা যায় ব্যাপক প্রস্তুতি। রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরসহ রাজ্যে রাজ্যে ছেয়ে গেছে জাতীয় পতাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে নানান অফার। করোনা মহামারীর প্রভাবে নানান বিধি নিষেধ আরোপ করা হলেও এ দিবসের উৎসবের কোন কমতি দেখা যাচ্ছে না।

করোনাভাইরাসের কারণে এসওপি মেনে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার।
আশিয়ান এর প্রাণকেন্দ্র মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ। যার মোট আয়তন ৩,৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার। মোট ১৩ টি প্রদেশ এবং তিনটি প্রশাসনিক অঞ্চল আছে। জনসংখ্যা ৩২.৭ মিলিয়ন। মাথা পিছু আয় ১৩৫৪ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে উন্নত রাষ্ট্র ঘোষণা করার টার্গেট অর্জন করতে সক্ষম না হলেও ২০৩০ সালে উন্নত রাষ্ট্র ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চীন, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ড এর জল ও স্থল সীমান্ত ঘেরা মালয়েশিয়ার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। পর্যটকদের প্রথম পছন্দের দেশ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বিশ্বের সেরা কসমোপলিটন সিটি। মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা মালয় হলেও চাইনিজ ও তামিল ভাষার প্রাধান্য স্বীকৃত। সকলে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে।

সাংবিধানিক রাজা দেশটির প্রধান হলেও সরকার প্রধান নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচিত সংসদ আছে। প্রাদেশিক সরকার আছে এবং রাজা নির্বাচিত হয় প্রাদেশিক সুলতানদের মধ্য থেকে যা মালয়েশিয়ার ঐক্যকে করেছে সমৃদ্ধ। রাজা মালয়েশিয়ার জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। মালয়েশিয়া মুসলিম দেশ হলেও এখানে চাইনিজ মালয়েশিয়ান এবং ইন্ডিয়ান মালয়েশিয়ান যার অধিকাংশই খ্রিস্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ধর্মীয় সম্প্রীতি মালয়েশিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য দান করেছে। শ্রম, সেকেন্ড হোম বা বাণিজ্যিক কারণে মালয়েশিয়ায় অনেক অভিবাসী রয়েছে।

মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত। গত ৩০ বছরে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া একটি উঠতি শিল্প উন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শতভাগ কর্মসংস্থান থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে বেকারত্ব বেড়ে গেছে। মালয়েশিয়া ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আভাস দিয়েছে। ইতোমধ্যে করোনা কালে সরকার ৪ টি বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করছে ক্রমশ:। পর্যটন শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত হলেও করোনা কারণে এখন কোন পর্যটক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারছে না। মেডিকেল পর্যটন রয়েছে মালয়েশিয়ার।

মানব সম্পদ উন্নয়ন করতে মালয়েশিয়া বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করতে ইতোমধ্যে কর্মীদের কল্যাণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বেতন ভাতা বৃদ্ধি বীমা সহ নিরাপত্তা ও বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে শূন্য অভিবাসন এর দিকে ধাবিত হবার লক্ষণ স্পষ্ট । কারিগরি শিক্ষায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেশীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস করেছে ফলে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী আছে। চিকিৎসা শিক্ষায় অনেক উন্নতি করেছে।

বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তানশ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে প্রতিযোগিতার আছে। ক্ষমতার পালাবদল থাকলেও মালয়েশিয়ার উন্নয়নে ধারাবাহিকতা চলে আসছে।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে এবং এই অঞ্চলের মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে গেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত ভিত্তিতে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৭৬ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মী আসতে শুরু করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রম, শিক্ষা, সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালয়েশিয়া এখন বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য-অংশীদার।

২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১১-১২ সালে ছিল মাত্র ৫৬.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে বাংলাদেশে হাউজিং, টেলিকম, পাওয়ার প্লান্ট এবং ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগ অংশীদার যার পরিমাণ ৮১৫.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে জ্বালানী ও ভোজ্য তেল আমদানি করে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার শ্রম সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে নবমাত্রা পেয়েছে বিশেষ করে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফর করেন এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে লেবার সোর্স কান্ট্রির স্বীকৃতি দেয়। এরপর জি টু জি প্লাস চুক্তি করে যার আওতায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশির নতুন করে কর্মসংস্থান হয়। অপরদিকে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে চলা রিহায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশী বৈধতা ও কাজ পায়, অন্যথায় এদের খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হত। বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে কোন ধরনের শারীরিক শাস্তি না দিয়ে কেবল সামান্য আর্থিক জরিমানা আরোপ করে দেশে ফিরে যাবার সুযোগ দিয়েছে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার সরকার এই প্রথম বিদেশি কর্মীকে একই সেক্টরে মালিক পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে, ক্যাম্পে থাকা এবং অন্যান্য অবৈধদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে বৈধতা দিয়ে কাজে নিয়োগ দেওয়ার জন্য হাইকমিশন জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। উন্নত মালয়েশিয়া বিনির্মাণে বাংলাদেশী কর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। আগামীতে দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।