হা‌ওরে নৌকা ডুবি মারা যাওয়া ১৭ জনই মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী

  • Update Time : ০৫:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০
  • / 160
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নেত্রকোনার মদন উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে এসে নৌকাডুবিতে ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও একজন। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মদনের উচিতপুরের সামনের হাওর গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা নামক স্থানে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
 
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া এলাকার মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বুধবার সকালে নেত্রকোনার মদনের জামিয়া আজিজিয়া মঈনুল ইসলাম মাদরাসার আমন্ত্রণে বেড়াতে আসেন। দুপুরে দুই মাদরাসার অন্তত ৪৮ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মদনের উচিতপুর এলাকায় হাওর ভ্রমণে যান। তারা একটি ট্রলারে (ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা) করে উচিতপুর থেকে গোবিন্দশ্রীর দিকে যাচ্ছিলেন।
 
পথে রাজালিকান্দা হাওরে হঠাৎ করে বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে ট্রলারটি ডুবে যায়। প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। পরে স্থানীয় দমকল বাহিনী ও পুলিশ উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হয়। ট্রলারডুবির ঘটনায় ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক পরিবারের আটজন রয়েছেন।
 
তারা হলেন- ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিন (৪৫), তার বড় ছেলে মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৭), ছোট ছেলে মাহমুদুর রহমান (১৪), ভাগনে রেজাউল করিম (১৮), ভাতিজা মো. জুবায়ের হোসাইন (১৯) ও মো. মুজাহিদ মিয়া (১৪)। তারা সবাই মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিনের ভাতিজি লুবনা আক্তার (১০) ও জুলফা আক্তার (৭) ইসরাহুল বানাত মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী।
 
এছাড়া একই জেলার ইসা মিয়া (৪৫), সাইফুল ইসলাম (৩০), হামিদুল ইসলাম (৩৫), আজাহারুল ইসলাম (৩৫), শফিকুর রহমান (৪০) ও তার ছেলে সামান (১০), ইসা মিয়ার ছেলে শামীম হাসান (১০), ফজর আলীর ছেলে মুজাহিদ (১৭) ও তালেব হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০)।
 
বেঁচে যাওয়া মাদরাসা শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নৌকাটি হঠাৎ বাতাসে উল্টে যায়। তিনি নৌকার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরাতে থাকি। একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে ডুবে যেতে থাকি। এ সময় আমার শরীরের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলি। পরে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হই।
 
পুলিশ জানায়, প্রায় ৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। তাদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
 
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন বাবদ সাত হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


হা‌ওরে নৌকা ডুবি মারা যাওয়া ১৭ জনই মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী

Update Time : ০৫:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অগাস্ট ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নেত্রকোনার মদন উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে এসে নৌকাডুবিতে ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও একজন। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মদনের উচিতপুরের সামনের হাওর গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা নামক স্থানে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
 
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া এলাকার মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বুধবার সকালে নেত্রকোনার মদনের জামিয়া আজিজিয়া মঈনুল ইসলাম মাদরাসার আমন্ত্রণে বেড়াতে আসেন। দুপুরে দুই মাদরাসার অন্তত ৪৮ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মদনের উচিতপুর এলাকায় হাওর ভ্রমণে যান। তারা একটি ট্রলারে (ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা) করে উচিতপুর থেকে গোবিন্দশ্রীর দিকে যাচ্ছিলেন।
 
পথে রাজালিকান্দা হাওরে হঠাৎ করে বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে ট্রলারটি ডুবে যায়। প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। পরে স্থানীয় দমকল বাহিনী ও পুলিশ উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হয়। ট্রলারডুবির ঘটনায় ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক পরিবারের আটজন রয়েছেন।
 
তারা হলেন- ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিন (৪৫), তার বড় ছেলে মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৭), ছোট ছেলে মাহমুদুর রহমান (১৪), ভাগনে রেজাউল করিম (১৮), ভাতিজা মো. জুবায়ের হোসাইন (১৯) ও মো. মুজাহিদ মিয়া (১৪)। তারা সবাই মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিনের ভাতিজি লুবনা আক্তার (১০) ও জুলফা আক্তার (৭) ইসরাহুল বানাত মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী।
 
এছাড়া একই জেলার ইসা মিয়া (৪৫), সাইফুল ইসলাম (৩০), হামিদুল ইসলাম (৩৫), আজাহারুল ইসলাম (৩৫), শফিকুর রহমান (৪০) ও তার ছেলে সামান (১০), ইসা মিয়ার ছেলে শামীম হাসান (১০), ফজর আলীর ছেলে মুজাহিদ (১৭) ও তালেব হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০)।
 
বেঁচে যাওয়া মাদরাসা শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নৌকাটি হঠাৎ বাতাসে উল্টে যায়। তিনি নৌকার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরাতে থাকি। একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে ডুবে যেতে থাকি। এ সময় আমার শরীরের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলি। পরে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হই।
 
পুলিশ জানায়, প্রায় ৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। তাদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
 
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন বাবদ সাত হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।