“আবেগ মিশ্রিত টিএসসিসি”

  • Update Time : ০৬:৫৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
  • / 220

আবু তালহা আকাশ:

সকাল থেকে ক্লাস ও সারাদিনের নানা রকমের ব্যস্ততা শেষে বিকেলে টিএসসিসি তে গানের আড্ডা এ যেন অন্যান্ন সকল নেশাকে হার মানিয়ে দেয়। সারা দিন যে যেখানেই থাকি না কেন বিকেল হওয়ার সাথে সাথেই কাহন, হাত বায়া, গিটার, খমক, উকেলেলে, খঞ্জনী, মন্দিরা এসব নিয়ে এক হতেই হবে ভালোবাসার এই স্থানে।

চলতো বেসুরে গলায় চিৎকার করে গাওয়া গান। আস্তে আস্তে পাশে এসে বসতো ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র ও জুনিয়র ভাই-বোনেরা। এতে করে সকলের সম্মিলিত কন্ঠে গাওয়া গান, হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, আবেগ আকাশে বাতাসে যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসতো কানে। এমন ভাবেই চলতো সন্ধা পর্যন্ত; কখন কখনও যে সেটা সন্ধা পেরিয়ে রাতে পৌঁছে যেত; তা যেন মাথায়-ই আসত না। মনে হতো যেন এই তো এসে বসলাম মাত্র। তিন বেলা ভাত ঠিক মতো খাওয়া না হলেও; এই রুটিনের যেন কোন রকম ব্যত্যয় ঘটতো না কখনও।

গানের প্রতি ভালোবাসাটা ছোট বেলা থেকেই; গান শোনা হতো অনেক কিন্তু এর চর্চাটা সেভাবে করা হয় নি কখনও। কিন্তু ইবিতে ভর্তি পরিক্ষা দিতে এসে কিছু ভাইয়া-আপুদের এই টিএসসিসি তে বসে তাদের সম্মিলিত কন্ঠে গাওয়া গানটাই যেন সে সময় নিজের অজান্তেই টিএসসিসি তথা ইবির প্রেমে পড়ে যাই। সে সময় মনে হচ্ছিল আমি যদি এখনে বসে এভাবে আড্ডা দিতে পারতাম আমার জীবনটা যেন সার্থক হয়ে যেত। আল্লাহর রহমতে এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া পর সেই টিএসসিসিই যেন প্রাণ কেন্দ্র হয়ে উঠলো। মূলত গানের চর্চা বা আড্ডার ছলে হলেও গান গাওয়ার শুরুটা; এই টিএসসিসির হাত ধরেই।

পারভেজ, পল্লব, সালাউদ্দিন, নিরবের মতো বন্ধু পেয়ে সে চর্চাটা যেন আরো বেড়ে যেতে থাকল। ক্যাম্পাস তাড়কা “গানের পাখি” খ্যাত ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই লালচাঁন তালুকদার, সোহেল, সুজন ভাইদের সংস্পর্শে এসে গানের প্রতি যেন আরো অন্যরকম এক আবেগ ও ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেল। এসবটাই ছিল এই টিএসসিসি কেন্দ্রিক। টুকটাক পাতিল বাজানোর অভ্যাস ছিল ছোট বেলা থেকেই। তারই সূত্রধরে কাহন ও হাতবায়া বাজানোর দায়িত্বটা এসে পড়ে আমার উপরেই; পারভেজের খমক, উকেলেলে; পল্লবের খঞ্জনী, মন্দিরা আর নিরবের গিটার এসব নিয়েই চলতো আড্ডা। সময়টা একবছরের হলেও এই টিএসসিসি কে ঘিরে তৈরি হয়েছে কত শত স্মৃতি, আবেগ, ভালোবাসা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ইবি ক্যাম্পাসের ১৭৫ একরের বিভিন্ন জায়গায় বসে গানের এসব আড্ডার মধ্যদিয়েই কেটে যাচ্ছিল সময়। কিন্তু নিরব ঘাতক করোনার থাবায় হঠাৎই যেন থমকে গেল পুরো পৃথিবী। এখন বাসায় বসে এসকল সোনালী স্মৃতি গুলো মনে করে যেমন আনন্দ পাচ্ছি; তেমনি সেগুলো যেন মনের গহীন কোটরে আচড় কেটে যাচ্ছে প্রতিটি মূহর্ত।

আমরা আশা রাখি নিশ্চই খুব দ্রুত এই দুঃসময়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং আমরা আবারও পূর্বের ন্যায় সবুজে ঘেরা অপরূপ ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবো; আবারো আড্ডায় মেতে উঠব।

 লেখকঃ শিক্ষার্থী,দ্বিতীয় বর্ষ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
.
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


“আবেগ মিশ্রিত টিএসসিসি”

Update Time : ০৬:৫৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০

আবু তালহা আকাশ:

সকাল থেকে ক্লাস ও সারাদিনের নানা রকমের ব্যস্ততা শেষে বিকেলে টিএসসিসি তে গানের আড্ডা এ যেন অন্যান্ন সকল নেশাকে হার মানিয়ে দেয়। সারা দিন যে যেখানেই থাকি না কেন বিকেল হওয়ার সাথে সাথেই কাহন, হাত বায়া, গিটার, খমক, উকেলেলে, খঞ্জনী, মন্দিরা এসব নিয়ে এক হতেই হবে ভালোবাসার এই স্থানে।

চলতো বেসুরে গলায় চিৎকার করে গাওয়া গান। আস্তে আস্তে পাশে এসে বসতো ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র ও জুনিয়র ভাই-বোনেরা। এতে করে সকলের সম্মিলিত কন্ঠে গাওয়া গান, হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, আবেগ আকাশে বাতাসে যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসতো কানে। এমন ভাবেই চলতো সন্ধা পর্যন্ত; কখন কখনও যে সেটা সন্ধা পেরিয়ে রাতে পৌঁছে যেত; তা যেন মাথায়-ই আসত না। মনে হতো যেন এই তো এসে বসলাম মাত্র। তিন বেলা ভাত ঠিক মতো খাওয়া না হলেও; এই রুটিনের যেন কোন রকম ব্যত্যয় ঘটতো না কখনও।

গানের প্রতি ভালোবাসাটা ছোট বেলা থেকেই; গান শোনা হতো অনেক কিন্তু এর চর্চাটা সেভাবে করা হয় নি কখনও। কিন্তু ইবিতে ভর্তি পরিক্ষা দিতে এসে কিছু ভাইয়া-আপুদের এই টিএসসিসি তে বসে তাদের সম্মিলিত কন্ঠে গাওয়া গানটাই যেন সে সময় নিজের অজান্তেই টিএসসিসি তথা ইবির প্রেমে পড়ে যাই। সে সময় মনে হচ্ছিল আমি যদি এখনে বসে এভাবে আড্ডা দিতে পারতাম আমার জীবনটা যেন সার্থক হয়ে যেত। আল্লাহর রহমতে এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া পর সেই টিএসসিসিই যেন প্রাণ কেন্দ্র হয়ে উঠলো। মূলত গানের চর্চা বা আড্ডার ছলে হলেও গান গাওয়ার শুরুটা; এই টিএসসিসির হাত ধরেই।

পারভেজ, পল্লব, সালাউদ্দিন, নিরবের মতো বন্ধু পেয়ে সে চর্চাটা যেন আরো বেড়ে যেতে থাকল। ক্যাম্পাস তাড়কা “গানের পাখি” খ্যাত ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই লালচাঁন তালুকদার, সোহেল, সুজন ভাইদের সংস্পর্শে এসে গানের প্রতি যেন আরো অন্যরকম এক আবেগ ও ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেল। এসবটাই ছিল এই টিএসসিসি কেন্দ্রিক। টুকটাক পাতিল বাজানোর অভ্যাস ছিল ছোট বেলা থেকেই। তারই সূত্রধরে কাহন ও হাতবায়া বাজানোর দায়িত্বটা এসে পড়ে আমার উপরেই; পারভেজের খমক, উকেলেলে; পল্লবের খঞ্জনী, মন্দিরা আর নিরবের গিটার এসব নিয়েই চলতো আড্ডা। সময়টা একবছরের হলেও এই টিএসসিসি কে ঘিরে তৈরি হয়েছে কত শত স্মৃতি, আবেগ, ভালোবাসা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ইবি ক্যাম্পাসের ১৭৫ একরের বিভিন্ন জায়গায় বসে গানের এসব আড্ডার মধ্যদিয়েই কেটে যাচ্ছিল সময়। কিন্তু নিরব ঘাতক করোনার থাবায় হঠাৎই যেন থমকে গেল পুরো পৃথিবী। এখন বাসায় বসে এসকল সোনালী স্মৃতি গুলো মনে করে যেমন আনন্দ পাচ্ছি; তেমনি সেগুলো যেন মনের গহীন কোটরে আচড় কেটে যাচ্ছে প্রতিটি মূহর্ত।

আমরা আশা রাখি নিশ্চই খুব দ্রুত এই দুঃসময়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং আমরা আবারও পূর্বের ন্যায় সবুজে ঘেরা অপরূপ ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবো; আবারো আড্ডায় মেতে উঠব।

 লেখকঃ শিক্ষার্থী,দ্বিতীয় বর্ষ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
.