নবাবগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
- Update Time : ০৮:২৮:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০
- / 145
অলিউর রহমান মেরাজ, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
প্রকাশ্য দিবালোকে আবাদী জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। স্থানীয় প্রশাসন সবই দেখছেন কিন্তু স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও রাজনৈতিক নেতাদের মদদ থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
১৭ জুন দুপুরে সরেজমিনে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দোমাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬ বিঘা ফসলী জমি ও পুকুর থেকে অবৈধভাবে শ্যালোমেশিনে পাইপ লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সেখানে এলোমেলোভাবে পাহারা দিচ্ছেন কয়েকজন যুবক। আর সেই বালু ট্রলিতে করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেখান থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে প্রায় ২০-৩০ ফুট গভীর জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই জলাশয়ের পাশের জমির মাটি ধসে যাচ্ছে ও ফসল চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা প্রশাসনের নিকট একাধিকবার অভিযোগ করলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। দাউদপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা অমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৫ মার্চ আমি ওই দুই ঘটনাস্থলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাই। পরে ১৬ মার্চ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ৪(ক) ও ৫(১) ধারা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগে দোমাইল গ্রামের মেহের আলী (৬০), মামনুর রশিদ (৫৫), মমিনুল ইসলাম (৪৫) ও মারফিদুল ইসলাম (৩৮) এর বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করি। যার স্বারক নম্বর- ২৬৩। কিন্তু পরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও থানা পুলিশ সেই অভিযোগ আমলে নেননি।পরে ১৭ মার্চ থানায় উক্ত বিষয়ে আবারো অভিযোগ করা হয়। যাহার স্বারক নম্বর-২৬৫ ও ২৬৬।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আরো বলেন, একই দিনে ওই ইউনিয়নের গাবগাছি গ্রামে বয়ে যাওয়া করতোয়া শাখা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে গাবগাছি গ্রামের সোলায়মান আলী (৪৫), মর্ত্তুজা আহম্মদে রঞ্জু (২৯), শাহিনুর ইসলাম (৩৬) ও চান মিয়া ওরফে আপন (৪৩) এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হলে সেটি আমলে নেয়া হয়। আসামী সোলায়মান আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বাকিরা কোর্টে আত্মসমর্পণ করে সবাই জামিনে আসেন।
দোমাইল গ্রামের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী, মোহাদ্দেস আলী ও রেহেনুল জানান, এলাকার প্রভাবশালী আরিফ, রাজু আর মোহাম্মদ আলী নামের তিনজন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে পাশের জমিগুলোর মাটি ধসে যাওয়ায় সেগুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে। এবং গ্রামের পাকারাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার চৌহান বলেন, নদী থেকে ও ব্যক্তিগত জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগে এনে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা থানায় দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন। নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগটি আমলে নেয়া হয় ও একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়। বাকিরা পরে জামিনে আসেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জমিতে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়ার পরে অভিযুক্তদের পক্ষে স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেন-দরবারের কারণে সেই অভিযোগ আমলে নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিকট থেকে ওই এলাকায় নদী ও ব্যক্তিগত ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগে সেখানে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে। এরপরও যদি সেখানে কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, উপজেলায় বালু উত্তোলনের কথা আমি শুনেছি, এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ অবৈধ এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকলে তার দ্বায়ভার আমরা নেব না।