নারীর অধিকার ও নির্যাতনের আইনী প্রতিকার
- Update Time : ০৯:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুলাই ২০২০
- / 220
জিসান তাসফিকঃ
কিন্তু আমরা যদি এইগুলো বুঝতে পারি তবে আজ সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠেছে?
একটি নারী যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে শিশু থাকে। তাকে বড় করা পরিবারের দায়িত্ব। শুধুমাত্র ছেলেকে নয়, নারীকেও সমাজের উপযুক্ত করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র ছেলেকে শিক্ষার সুযোগ দিলে, উৎসাহ দিলে সমাজে অর্ধেক মানুষ শিক্ষিত হয়ে থাকবে। উভয়কে সুযোগ দিলে সবাই শিক্ষিত হবে।
শুধু তাই নয় আমি মনে করি পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী যার যেটা প্রয়োজন তাকে সেটা দেওয়া উচিত। এখানে বৈষম্যমূলক আচরণ করা উচিত না।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।’ সুতরাং সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া সমাজের দায়িত্ব। অধিকার অর্জন সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী করে নিবে।
কিন্তু সমাজ এটা মেনে চলে না। সেই প্রাচীনকাল থেকে সমাজে নারীদের প্রতি অত্যাচার ও নির্যাতন হয়ে আসছে। সমাজের সকল সুযোগ সুবিধা পুরুষেরা নিত, নারীদের কে দিত না। বর্তমান সমাজেও এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি।
নারী নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান দেখা যায়, বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফল থেকে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে তা শুক্রবার প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১০ থেকে ১৪ কোটি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার হয়েছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে ১৮ বছরের কম বয়সি অন্তত ৭ কোটি নারীকে বিয়ে দেয়া হয়েছে৷ গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ এছাড়াও বিশ্বের তৃতীয় সংখ্যক নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার।
আমি যদি সমাজতন্ত্রের কথা বলি তবে সেখানে মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে।গনতন্ত্রে সবাইকে মতামতে সুযোগ দেওয়া হয়। আবার ইসলাম ধর্মের কথা বললে নবীজি বিদায় হজ্জে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হল ‘নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কখনো অন্যায়-অত্যাচার করবে না। কেননা তারা হলো অবলা। কেননা তাদের দায়িত্ব তোমাদের ওপরই। তোমাদের যেমন নারীদের ওপর অধিকার আছে। তেমনি তোমাদের ওপরও নারীদের অধিকার আছে। দয়া ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের সাথে আচরণ করবে।’ কিন্তু সমাজে কেউ এগুলো মানে না। খুন-ধর্ষণ, পরকীয়া, বিবাহ বিচ্ছেদ, শারীরিকভাবে নির্যাতন সমাজে চলতেছে।
তবে এই বলে সমাজে নারীরা থেমে থাকবে না। তাদেরকে সুযোগ আর অধিকার দেবার জন্য আইন আছে। আমাদের বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন সহ অন্যান্য আইনে সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা আছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের অনুচ্ছেদ ১৯, ২৮, ২৯ এ নারীদেরকে পুরষের সমান মর্যাদা, অধিকার ও সুযোগে কথা বলা আছে। এক সময়ে নারীদের ভোটাধিকার ছিল না কিন্তু বর্তমানে ১২১ অনুচ্ছেদ ভোটাধিকার দেওয়া আছে।
শুধু তাই নয়। এখন সংসদে নারীদের জন্য ৫০ টি সংরক্ষিত আসন আছে আর বাকি ৩০০ আসনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা ও সমান অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। যদি সম্পত্তি অধিকার লাভে কথা আসলে ইসলামে উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার সম্পত্তিতে মেয়ে ছেলের অর্ধেক পাবে। মায়ের সম্পত্তি পাবে এবং স্বামীর সম্পত্তি ৮ এর এক অংশ ও এছাড়া কাবিনে উল্লেখিত অর্থ পাবে। অন্যান্য ধর্মেও নারীদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া আছে। কোনো নারী যদি নির্যাতনের শিকার হয় তবে তার জন্য দেশে নারীদের ও শিশুদের জন্য বিশেষ আদালত আছে যেখানেই দ্রুত বিচার হয় এবং এর জন্য আলাদা নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ১৯৮৫ আছে । আছে নারীদের জন্য আলাদা সংস্থা।
পারিবারিক আদালতে যে কোনো নারীরা অধিকার আদালতে জন্য মামলা করতে পারবে। আইনে তাদের অধিকার আছে। এছাড়াও সমাজের প্রচলিত আদালতে তারা মামলা ও রিট করতে পারবে। অর্থাৎ বলা যায় নারী নির্যাতন রোধে যতগুলো পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজন পরে সবগুলো নিতেছে এবং ভবিষ্যতেও নিবে।
কিন্তু এত কিছু পরেও এর হার না কমানো কারণ হল আমাদের সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি। এছাড়া সর্বদাই সমাজে একটি প্রথা আছে যে দূর্বলের উপর সবলে অত্যাচার। অর্থাৎ যার হাতে ক্ষমতা থাকে সে অন্যকে শোষণ করে। আজকে অবলা নারীরা নির্যাতনে শিকার হয় কিন্তু আমাদের সমাজে যে সকল নারীরা ক্ষমতায় আছে তারা কিন্তু নির্যাতিত হয় না। অনেক নারীর কাছে তার গৃহকর্মী ও নির্যাতনের শিকার হয়। সুতরাং সমাজের নারী ও পুরুষের এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে তবেই সমাজে নির্যাতনের মাত্রা কমে যাবে।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।