‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুদক জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে’

  • Update Time : ১০:৫৬:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
  • / 217
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম। তারপরও কতিপয় লোভী মানুষকে প্রতিরোধ করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে এদেরকে আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
.

শুক্রবার (২৬শে জুন), সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য সামগ্রী আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম (যেমন মামলা দায়ের, অভিযোগপত্র দাখিল, গ্রেফতার, অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ, আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা হতে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ইত্যাদি) একটি বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুদক চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়।

এসময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকুল পরিবেশেই দুদককে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস দুদকের দুইজন কর্মকর্তার মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখনও ১৫ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত। আমি তাদের সকলের রোগমুক্তি কামনা করি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ত্রাণ আত্মসাতের মামলাগুলোর আর্থিক সংশ্লেষ কম হলেও মামলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মামলাগুলো নিখুঁতভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রকৃত অপরাধীরা যেন পার না পেয়ে যায়।’

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান কমিশন প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কমিশন ২০১৭ সালেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিলো। ২০১৯ সালের প্রারম্ভে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির (১১টি) উৎস ও তা নিয়ন্ত্রণে ২৫ দফা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সংবলিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি প্রতিবেদন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের নিকট হস্তান্তর করেন।

এই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরা সম্ভব হতো। এছাড়া ঢাকা, সাতক্ষীরা, রংপুর , চট্টগ্রাম, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও কমিশন থেকে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। এই ১১টি মামলায় সম্পৃক্ত ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট এসব অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। হয়তো আরো মামলা হবে, আরো প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হবে। মোদ্দা কথা স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাবের আগ থেকেই কমিশন সক্রিয় ছিলো। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশন শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে।’

দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এরপরও কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। এই অনুসন্ধানটি হতে হবে নির্মোহ ও পূর্ণাঙ্গ। মানুষকে সবকিছু জানাতে হবে। দুদক কোনো কিছুই গোপন করে না, করবেও না। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও দালিলিক প্রমাণাদির মাধ্যমে যেমন অপরাধীদের আমলে আনতে হবে তেমনি জনগণের কাছেও কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের এই প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘দুদক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিলো মূলত: বিজনেস প্রসেস রি-ইজ্ঞিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তিতে জনগণের হয়রানি ও দুর্নীতি লাঘবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহযোগিতা করার জন্য। বেশকিছু প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নও করেছে। এখন কমিশন থেকে এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। আমরা চাই সকলের সমন্বিত উদ্যোগে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত হোক।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুদক জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে’

Update Time : ১০:৫৬:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম। তারপরও কতিপয় লোভী মানুষকে প্রতিরোধ করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে এদেরকে আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
.

শুক্রবার (২৬শে জুন), সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য সামগ্রী আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম (যেমন মামলা দায়ের, অভিযোগপত্র দাখিল, গ্রেফতার, অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ, আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা হতে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ইত্যাদি) একটি বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুদক চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়।

এসময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকুল পরিবেশেই দুদককে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস দুদকের দুইজন কর্মকর্তার মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখনও ১৫ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত। আমি তাদের সকলের রোগমুক্তি কামনা করি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ত্রাণ আত্মসাতের মামলাগুলোর আর্থিক সংশ্লেষ কম হলেও মামলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মামলাগুলো নিখুঁতভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রকৃত অপরাধীরা যেন পার না পেয়ে যায়।’

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান কমিশন প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কমিশন ২০১৭ সালেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিলো। ২০১৯ সালের প্রারম্ভে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির (১১টি) উৎস ও তা নিয়ন্ত্রণে ২৫ দফা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সংবলিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি প্রতিবেদন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের নিকট হস্তান্তর করেন।

এই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরা সম্ভব হতো। এছাড়া ঢাকা, সাতক্ষীরা, রংপুর , চট্টগ্রাম, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও কমিশন থেকে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। এই ১১টি মামলায় সম্পৃক্ত ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট এসব অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। হয়তো আরো মামলা হবে, আরো প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হবে। মোদ্দা কথা স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাবের আগ থেকেই কমিশন সক্রিয় ছিলো। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশন শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে।’

দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এরপরও কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। এই অনুসন্ধানটি হতে হবে নির্মোহ ও পূর্ণাঙ্গ। মানুষকে সবকিছু জানাতে হবে। দুদক কোনো কিছুই গোপন করে না, করবেও না। বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও দালিলিক প্রমাণাদির মাধ্যমে যেমন অপরাধীদের আমলে আনতে হবে তেমনি জনগণের কাছেও কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের এই প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘দুদক ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিলো মূলত: বিজনেস প্রসেস রি-ইজ্ঞিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তিতে জনগণের হয়রানি ও দুর্নীতি লাঘবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহযোগিতা করার জন্য। বেশকিছু প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নও করেছে। এখন কমিশন থেকে এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। আমরা চাই সকলের সমন্বিত উদ্যোগে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত হোক।’