করোনা সন্দেহে শাশুড়িকে মন্দিরে ফেলে আসায় পুত্রবধূ আটক

  • Update Time : ০৬:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০
  • / 252

বরিশালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন গুজব ছড়িয়ে দুই মাস ধরে বৃদ্ধাকে ঘরে না রেখে পাশের একটি মন্দিরের বারান্দায় ফেলে রাখার ঘটনায় পুত্রবধূ শিখা রানীকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে শিখা রানীর স্বামী জগদীশ সরকারকে খুঁজছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন।

ওসি আফজাল হোসেন বলেন, গ্রামে পুলিশ আসার খবর পেয়ে শিখা রানী ও জগদীশ সরকার আত্মগোপন করেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে শিখা রানীকে আটক করা হয়। ছেলে জগদীশ সরকারকেও খুঁজছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানায়, সূর্য কান্ত সরকার মারা গেলে তার স্ত্রী জ্ঞানদা রানী ছেলে জগদীশ সরকারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। বয়সের ভারে নানা জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। এসব বিবেচনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জ্ঞানদা রানীকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করে দেয়া হয়। ওই ভাতার টাকা তিন মাস পরপর উত্তোলন করে পুত্রবধূ শিখার কাছে জমা রাখতেন জ্ঞানদা রানী।

দুই মাস আগে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন জ্ঞানদা রানী। এ সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন গুজব ছড়িয়ে বাড়ির পাশের একটি মন্দিরের বারান্দায় জ্ঞানদা রানীকে রেখে আসেন ছেলে ও পুত্রবধূ। সর্দি-কাশি ভালো হলেও তার ঠাঁই হয়নি বাড়িতে। প্রায় দুই মাস ধরে মন্দিরের বারান্দায় অবস্থান করছেন তিনি। প্রথমদিকে বাড়ি থেকে সেখানে দুই বেলা খাবার দেয়া হতো। কিন্তু এরপর একবেলা পাঠালে আরেকবেলা দেয়া হতো না। একবেলা খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন তিনি।

জ্ঞানদা রানীর প্রতিবেশী বিভূতি মন্ডল বলেন, সোমবার দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়ালেও জ্ঞানদা রানীকে খাবার দেয়া হয়নি। বিকেলে ছেলে ও পুত্রবধূর কাছে খাবার চেয়ে না পেয়ে নিজের নামের বয়স্কভাতার টাকা চান জ্ঞানদা রানী। এতে পুত্রবধূ শিখা রানী ও ছেলে জগদীশ সরকার ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে নির্মমভাবে জ্ঞানদা রানীকে পিটিয়ে আহত করেন তারা। জ্ঞানদা রানীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে পুত্রবধূ শিখা রানী ও ছেলে জগদীশ সরকার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ সময় প্রতিবেশীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন শিখা রানী ও জগদীশ সরকার। এরপর পুত্রবধূ শিখা রানী ও ছেলে জগদীশ সরকারের ভয়ে দূরের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন জ্ঞানদা রানী।

বিষয়টি জানতে পেরে খাবার ও ফলমূল নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৃদ্ধা জ্ঞানদা রানীর সঙ্গে দেখা করেন আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন। তার কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ওসি। পাশাপাশি বৃদ্ধা জ্ঞানদা রানীর চিকিৎসার সব খরচ বহন করবেন বলে ওসি জানিয়েছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


করোনা সন্দেহে শাশুড়িকে মন্দিরে ফেলে আসায় পুত্রবধূ আটক

Update Time : ০৬:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০

বরিশালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন গুজব ছড়িয়ে দুই মাস ধরে বৃদ্ধাকে ঘরে না রেখে পাশের একটি মন্দিরের বারান্দায় ফেলে রাখার ঘটনায় পুত্রবধূ শিখা রানীকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে শিখা রানীর স্বামী জগদীশ সরকারকে খুঁজছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন।

ওসি আফজাল হোসেন বলেন, গ্রামে পুলিশ আসার খবর পেয়ে শিখা রানী ও জগদীশ সরকার আত্মগোপন করেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে শিখা রানীকে আটক করা হয়। ছেলে জগদীশ সরকারকেও খুঁজছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানায়, সূর্য কান্ত সরকার মারা গেলে তার স্ত্রী জ্ঞানদা রানী ছেলে জগদীশ সরকারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন। বয়সের ভারে নানা জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। এসব বিবেচনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জ্ঞানদা রানীকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করে দেয়া হয়। ওই ভাতার টাকা তিন মাস পরপর উত্তোলন করে পুত্রবধূ শিখার কাছে জমা রাখতেন জ্ঞানদা রানী।

দুই মাস আগে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন জ্ঞানদা রানী। এ সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন গুজব ছড়িয়ে বাড়ির পাশের একটি মন্দিরের বারান্দায় জ্ঞানদা রানীকে রেখে আসেন ছেলে ও পুত্রবধূ। সর্দি-কাশি ভালো হলেও তার ঠাঁই হয়নি বাড়িতে। প্রায় দুই মাস ধরে মন্দিরের বারান্দায় অবস্থান করছেন তিনি। প্রথমদিকে বাড়ি থেকে সেখানে দুই বেলা খাবার দেয়া হতো। কিন্তু এরপর একবেলা পাঠালে আরেকবেলা দেয়া হতো না। একবেলা খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন তিনি।

জ্ঞানদা রানীর প্রতিবেশী বিভূতি মন্ডল বলেন, সোমবার দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়ালেও জ্ঞানদা রানীকে খাবার দেয়া হয়নি। বিকেলে ছেলে ও পুত্রবধূর কাছে খাবার চেয়ে না পেয়ে নিজের নামের বয়স্কভাতার টাকা চান জ্ঞানদা রানী। এতে পুত্রবধূ শিখা রানী ও ছেলে জগদীশ সরকার ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে নির্মমভাবে জ্ঞানদা রানীকে পিটিয়ে আহত করেন তারা। জ্ঞানদা রানীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে পুত্রবধূ শিখা রানী ও ছেলে জগদীশ সরকার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ সময় প্রতিবেশীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন শিখা রানী ও জগদীশ সরকার। এরপর পুত্রবধূ শিখা রানী ও ছেলে জগদীশ সরকারের ভয়ে দূরের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন জ্ঞানদা রানী।

বিষয়টি জানতে পেরে খাবার ও ফলমূল নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৃদ্ধা জ্ঞানদা রানীর সঙ্গে দেখা করেন আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন। তার কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ওসি। পাশাপাশি বৃদ্ধা জ্ঞানদা রানীর চিকিৎসার সব খরচ বহন করবেন বলে ওসি জানিয়েছেন।