বসন্তে লাভবান যশোরের ফুল চাষিরা

  • Update Time : ০১:৩১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / 282
মো: সাহিদুল ইসলাম শাহীন,বেনাপোল(যশোর):
বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ৮ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬দিনে গদখালী ফুল বাজারে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
.
এবার দাম ও বেচাকেনা দুটোই ভাল হওয়ায় ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম-সবই বেশ ভালো, এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা সবাই খুশি, তবে সারাদেশে খুচরা বাজারে ফুল বিক্রি বেশি হলে চাষিরা তার সুফল পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস ও আম্ফান ঝড়ের ক্ষতির আধার কাটিয়ে আলোর মুখ দেখায় প্রায় এক বছর পর বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে তাই যশোরের গদখালির ফুলচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে,ফুল চাষে বেশ খুশি তারা। গদখালী এলাকায় এ বছর এক হাজার  ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ৫টি ও পরীক্ষামূলকভাবে আরও ৬-৭ টি জাতের ফুলের চাষ করেছেন বলে জানিয়েছেন আব্দুর রহিম।
.
গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহম্মদ বলেন, ভালবাসা দিবসে রঙিন গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও গোলাপ বেশি বিক্রি হয়। আর গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয় একুশে ফেব্রুয়ারি ও বসন্ত উৎসবে।”
.
উল্লেখ্য, যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীর ছোট্ট এ বাজার। প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই চাষি, পাইকার, মজুরের হাঁক ডাকে মুখর হয়ে ওঠে ফুলের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত গদখালীর এই বাজারটি। দূরদূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে ফুল সাজানো হচ্ছে। পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মত বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যাচ্ছে।
.
কুলিয়া গ্রামের ফুলচাষি শাহ আলম এবার দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ ও গাঁদা, ৬বিঘা জমিতে গ্ল্যাডিওলাস ও এক বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। শাহ আলম বলেন,“তিন দিনে আমি তিন লাখ ১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি।” আর হাড়িয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন  একদিনে ৫০ হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করেছেন বলে জানালেন।
.
নীলকণ্ঠনগরের হোসেন আলী জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ও এক বিঘা জমিতে গ্লাডিউলাস ফুলের চাষ করেছেন।গত তিন দিনে তিনি এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
.
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, করোনা মহামারি ও আম্পান ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ফুলচাষিদের সব স্বপ্ন, করোনাকালিন সময়ে ফুল বেঁচতে না পেরে কৃষকরা ফুল পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আর আম্পান ঝড়ে ফুলের শেডগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর চাষিদের আবারো ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা,আজ তা সফল হতে চলেছে।
.
ফুল ব্যবসায়ী আকবর আলি গত শনিবার এক লাখ টাকার ফুল কিনেছেন বলে জানান। ফুলের বাজার কেমন জানতে চাইলে ফুল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন,অন্য সময় চায়না গোলাপ ৬-৮ টাকায় কেনা গেলেও এখন লাগছে ১৮-২০টাকা। আগে রজনীগন্ধার প্রতি স্টিক বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮-৯ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৩-৫ টাকা।রঙ্গিন গ্লাডিউলাস এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৬ টাকা,যা পূর্বে ছিল ৩-৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা, যা পূর্বের দাম ছিল ৬-৮টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা হাজার। যা পূর্বের দাম ছিল দেড় থেকে ২০০ টাকা হাজার। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা আটি, যা পূর্বে বিক্রি হচ্ছিল ২৫ টাকা আটি। জিপসির আটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। যা পূর্বের দাম ছিল ২০-২৫ টাকা।
.
গদখালী বাজারে ফুল কিনতে আসা ফুল ব্যবসায়ী নূর হোসেন বলেন, “ফুলের বাজার খুব চড়া। তারপরও দুই লাখ টাকার ফুল কিনেছি, আরও কিনব।”
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


বসন্তে লাভবান যশোরের ফুল চাষিরা

Update Time : ০১:৩১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
মো: সাহিদুল ইসলাম শাহীন,বেনাপোল(যশোর):
বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ৮ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬দিনে গদখালী ফুল বাজারে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
.
এবার দাম ও বেচাকেনা দুটোই ভাল হওয়ায় ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম-সবই বেশ ভালো, এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা সবাই খুশি, তবে সারাদেশে খুচরা বাজারে ফুল বিক্রি বেশি হলে চাষিরা তার সুফল পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস ও আম্ফান ঝড়ের ক্ষতির আধার কাটিয়ে আলোর মুখ দেখায় প্রায় এক বছর পর বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে তাই যশোরের গদখালির ফুলচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে,ফুল চাষে বেশ খুশি তারা। গদখালী এলাকায় এ বছর এক হাজার  ৬২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ৫টি ও পরীক্ষামূলকভাবে আরও ৬-৭ টি জাতের ফুলের চাষ করেছেন বলে জানিয়েছেন আব্দুর রহিম।
.
গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহম্মদ বলেন, ভালবাসা দিবসে রঙিন গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও গোলাপ বেশি বিক্রি হয়। আর গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয় একুশে ফেব্রুয়ারি ও বসন্ত উৎসবে।”
.
উল্লেখ্য, যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীর ছোট্ট এ বাজার। প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই চাষি, পাইকার, মজুরের হাঁক ডাকে মুখর হয়ে ওঠে ফুলের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত গদখালীর এই বাজারটি। দূরদূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে ফুল সাজানো হচ্ছে। পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মত বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যাচ্ছে।
.
কুলিয়া গ্রামের ফুলচাষি শাহ আলম এবার দেড় বিঘা জমিতে গোলাপ ও গাঁদা, ৬বিঘা জমিতে গ্ল্যাডিওলাস ও এক বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। শাহ আলম বলেন,“তিন দিনে আমি তিন লাখ ১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি।” আর হাড়িয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন  একদিনে ৫০ হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করেছেন বলে জানালেন।
.
নীলকণ্ঠনগরের হোসেন আলী জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ও এক বিঘা জমিতে গ্লাডিউলাস ফুলের চাষ করেছেন।গত তিন দিনে তিনি এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
.
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, করোনা মহামারি ও আম্পান ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ফুলচাষিদের সব স্বপ্ন, করোনাকালিন সময়ে ফুল বেঁচতে না পেরে কৃষকরা ফুল পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আর আম্পান ঝড়ে ফুলের শেডগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর চাষিদের আবারো ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা,আজ তা সফল হতে চলেছে।
.
ফুল ব্যবসায়ী আকবর আলি গত শনিবার এক লাখ টাকার ফুল কিনেছেন বলে জানান। ফুলের বাজার কেমন জানতে চাইলে ফুল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন,অন্য সময় চায়না গোলাপ ৬-৮ টাকায় কেনা গেলেও এখন লাগছে ১৮-২০টাকা। আগে রজনীগন্ধার প্রতি স্টিক বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮-৯ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৩-৫ টাকা।রঙ্গিন গ্লাডিউলাস এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৬ টাকা,যা পূর্বে ছিল ৩-৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা, যা পূর্বের দাম ছিল ৬-৮টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা হাজার। যা পূর্বের দাম ছিল দেড় থেকে ২০০ টাকা হাজার। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা আটি, যা পূর্বে বিক্রি হচ্ছিল ২৫ টাকা আটি। জিপসির আটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। যা পূর্বের দাম ছিল ২০-২৫ টাকা।
.
গদখালী বাজারে ফুল কিনতে আসা ফুল ব্যবসায়ী নূর হোসেন বলেন, “ফুলের বাজার খুব চড়া। তারপরও দুই লাখ টাকার ফুল কিনেছি, আরও কিনব।”