শেখ হাসিনার কৌশলী নেতৃত্বেই করোনা মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছে

  • Update Time : ১১:৫২:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অগাস্ট ২০২০
  • / 250

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মহামারি মোকাবিলায় বেশ কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা সামনে থেকে করোনা মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। জীবন-জীবিকা সচল রেখে করোনা মোকাবিলায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।

একই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসায় উদ্বুদ্ধ করে দ্রুতগতিতে মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত পদক্ষেপে করোনা চিকিৎসায় সফলতা আসে। যে কারণে মার্কিন ফোবর্স ম্যাগাজিনে শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক উন্নত দেশ করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ সফলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। শুরুর দিকে অনেক বিদেশি ভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেলেও এখন তারা ফিরছেন। কেননা বাংলাদেশ যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছে, উন্নত দেশও তা পারেনি। আমেরিকা, ভারতে এখনো করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা শুরু থেকেই চিকিৎসার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদকে গুরুত্ব দেন। যে কারণে কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয় গার্মেন্টস। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখা হয় দোকানপাট। যাতে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের আয় রুজির ব্যবস্থা হয়। সচল থাকে অর্থনীতির চাকা। একইসঙ্গে দেশব্যাপী দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য ও নগদ অর্থ বিতরণের ফলে মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা হয়।

এ ছাড়া গার্মেন্টসহ শিল্পে প্রণোদনা দিয়ে শিল্পোন্নয়নে সহায়তা করা হয়। যাতে কিছুদিনের মধ্যেই অর্থনীতিতে বেশ গতি আসে। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। বিপাকে পড়ে খেটে খাওয়া জনগণ। ঠিক সেই সময়ে জনগণের পাশে ত্রাণকর্তা হিসেবে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। গত ৫ এপ্রিল করোনা ভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন তিনি।

এর মধ্যে শিল্পঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রিশিপমেন্ট ঋণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, গরিব মানুষের নগদ সহায়তা ৭৬১ কোটি টাকা, অতিরিক্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। করোনা সংক্রমণের শুরু দিকে যখন সারা বিশ্ব দিশেহারা ঠিক ওই মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সংকট মোকাবিলায় মনোনিবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুরুর দিকে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রকাশ পেতে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই সরবরাহ ধরা পড়ে। এ ছাড়া আরও নানা ধরনের অসংগতি ফুটে ওঠে। সেসব অসংগতিগুলো শুধরে নিতে কড়া বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলে ওই পদে নতুন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনা মোকাবিলায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বর্তমান সরকারকে সফলতা এনে দেয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়। করোনাকালে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছিল— তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সরকারের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন পদক্ষেপ দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর এমন নেতৃত্বে। চলতি বছরের ১৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে দক্ষিণ এশিয়ার সার্ক জোটভুক্ত দেশের নেতারা করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলার লক্ষে এক ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হন।

করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর লড়াইয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সার্ক নেতাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ মে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সহায়তা প্রদান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শি জিনপিংয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী পরে চীন বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসে।

৪ জুন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গ্লোবাল অ্যালায়েনস ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) আয়োজিত ভ্যাকসিন সামিটে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আহ্বান জানান এবং সংস্থাটির তহবিল বাড়াতে অনুদান দিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এসব অনুষ্ঠানেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সার্ক জোটভুক্ত দেশের নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা করোনা মহামারির সংকটে জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত দিন না এই সংকট কাটবে, তত দিন আমি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে থাকব। সরকার মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে সে সময় শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে মানুষকে বাঁচানো, আবার মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা সেগুলো যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছি। সে জন্য আমি দেশবাসীকে বলব, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা যা নির্দেশনা সেগুলো মেনে চলে নিজের জীবনকে চালাতে হবে। করোনা সংকটের প্রথম দিকে চিকিৎসায় মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। মাত্র ৪টি সরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হলে অনেক করোনা রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হয়। রোগীরা দিগ্বিদিক ছুটেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে এগিয়ে আসে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতল।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আনোয়ার হোসেন খান এমপির নেতৃত্বে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এক সভায় করোনা চিকিৎসায় নিজেদের নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত হয়। মাত্র দুই সপ্তাহে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজে স্বতন্ত্র ২০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু হয়। এতে করোনা চিকিৎসার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। পরে এগিয়ে আসে আরও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল। যাতে করোনা রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেতে থাকে। এখনো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বেশির ভাগ করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।

এ ছাড়া সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা মোকাবিলায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে এবং এখনো করে যাচ্ছে। এসব-ই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত নিরলসভাবে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা রোগটি সারা বিশ্বের জন্যই নতুন।

এমন ব্যাধি আর কখনো একযোগে বিশ্বকে নাড়া দেয়নি। তাই সব দেশের মতো বাংলাদেশেও এ রোগ মোকাবিলায় প্রথম দিকে হিমশিম খেতে হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন। মাস্ক, পিপিই কেলেঙ্কারিসহ চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দিকে বিব্রত থাকলেও পর্যায়ক্রমে ধকল কাটিয়ে ওঠেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সবকিছু বুঝেশুনে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

পদক্ষেপের মধ্যে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন কেন্দ্র স্থাপন করে করোনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করাসহ চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য সরঞ্জামসহ করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং নতুন করে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দিন দিন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


শেখ হাসিনার কৌশলী নেতৃত্বেই করোনা মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছে

Update Time : ১১:৫২:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অগাস্ট ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মহামারি মোকাবিলায় বেশ কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা সামনে থেকে করোনা মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। জীবন-জীবিকা সচল রেখে করোনা মোকাবিলায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি।

একই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসায় উদ্বুদ্ধ করে দ্রুতগতিতে মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত পদক্ষেপে করোনা চিকিৎসায় সফলতা আসে। যে কারণে মার্কিন ফোবর্স ম্যাগাজিনে শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক উন্নত দেশ করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ সফলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। শুরুর দিকে অনেক বিদেশি ভয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেলেও এখন তারা ফিরছেন। কেননা বাংলাদেশ যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছে, উন্নত দেশও তা পারেনি। আমেরিকা, ভারতে এখনো করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা শুরু থেকেই চিকিৎসার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদকে গুরুত্ব দেন। যে কারণে কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয় গার্মেন্টস। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখা হয় দোকানপাট। যাতে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের আয় রুজির ব্যবস্থা হয়। সচল থাকে অর্থনীতির চাকা। একইসঙ্গে দেশব্যাপী দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য ও নগদ অর্থ বিতরণের ফলে মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা হয়।

এ ছাড়া গার্মেন্টসহ শিল্পে প্রণোদনা দিয়ে শিল্পোন্নয়নে সহায়তা করা হয়। যাতে কিছুদিনের মধ্যেই অর্থনীতিতে বেশ গতি আসে। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। বিপাকে পড়ে খেটে খাওয়া জনগণ। ঠিক সেই সময়ে জনগণের পাশে ত্রাণকর্তা হিসেবে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। গত ৫ এপ্রিল করোনা ভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন তিনি।

এর মধ্যে শিল্পঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রিশিপমেন্ট ঋণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, গরিব মানুষের নগদ সহায়তা ৭৬১ কোটি টাকা, অতিরিক্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। করোনা সংক্রমণের শুরু দিকে যখন সারা বিশ্ব দিশেহারা ঠিক ওই মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সংকট মোকাবিলায় মনোনিবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শুরুর দিকে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রকাশ পেতে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই সরবরাহ ধরা পড়ে। এ ছাড়া আরও নানা ধরনের অসংগতি ফুটে ওঠে। সেসব অসংগতিগুলো শুধরে নিতে কড়া বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলে ওই পদে নতুন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। করোনা মোকাবিলায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বর্তমান সরকারকে সফলতা এনে দেয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়। করোনাকালে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছিল— তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সরকারের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন পদক্ষেপ দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর এমন নেতৃত্বে। চলতি বছরের ১৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে দক্ষিণ এশিয়ার সার্ক জোটভুক্ত দেশের নেতারা করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলার লক্ষে এক ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হন।

করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর লড়াইয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সার্ক নেতাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ মে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সহায়তা প্রদান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শি জিনপিংয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী পরে চীন বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসে।

৪ জুন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গ্লোবাল অ্যালায়েনস ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) আয়োজিত ভ্যাকসিন সামিটে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আহ্বান জানান এবং সংস্থাটির তহবিল বাড়াতে অনুদান দিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এসব অনুষ্ঠানেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সার্ক জোটভুক্ত দেশের নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা করোনা মহামারির সংকটে জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত দিন না এই সংকট কাটবে, তত দিন আমি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে থাকব। সরকার মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে সে সময় শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে মানুষকে বাঁচানো, আবার মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা সেগুলো যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছি। সে জন্য আমি দেশবাসীকে বলব, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা যা নির্দেশনা সেগুলো মেনে চলে নিজের জীবনকে চালাতে হবে। করোনা সংকটের প্রথম দিকে চিকিৎসায় মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। মাত্র ৪টি সরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হলে অনেক করোনা রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হয়। রোগীরা দিগ্বিদিক ছুটেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে এগিয়ে আসে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতল।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আনোয়ার হোসেন খান এমপির নেতৃত্বে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এক সভায় করোনা চিকিৎসায় নিজেদের নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত হয়। মাত্র দুই সপ্তাহে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজে স্বতন্ত্র ২০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু হয়। এতে করোনা চিকিৎসার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। পরে এগিয়ে আসে আরও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল। যাতে করোনা রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেতে থাকে। এখনো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বেশির ভাগ করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।

এ ছাড়া সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা মোকাবিলায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে এবং এখনো করে যাচ্ছে। এসব-ই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত নিরলসভাবে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা রোগটি সারা বিশ্বের জন্যই নতুন।

এমন ব্যাধি আর কখনো একযোগে বিশ্বকে নাড়া দেয়নি। তাই সব দেশের মতো বাংলাদেশেও এ রোগ মোকাবিলায় প্রথম দিকে হিমশিম খেতে হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন। মাস্ক, পিপিই কেলেঙ্কারিসহ চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দিকে বিব্রত থাকলেও পর্যায়ক্রমে ধকল কাটিয়ে ওঠেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সবকিছু বুঝেশুনে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

পদক্ষেপের মধ্যে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন কেন্দ্র স্থাপন করে করোনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করাসহ চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য সরঞ্জামসহ করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং নতুন করে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দিন দিন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।