ফ্লোরিডায় হারিকেন মিলটনের আঘাতে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস, চলছে ব্যাপক তাণ্ডব

  • Update Time : ১০:৫১:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / 26

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়েছে হারিকেন মিলটন। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে এ হারিকেন। পাশাপাশি, প্রবল শক্তিশালী বাতাসের কারণে ব্যাপক সম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার হালনাগাদ এ তথ্য জানায়

রাডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার বলছে, মিলটন ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে সারাসোটা কাউন্টির সিয়েস্তা কি এলাকায় ভূভাগে আছড়ে পড়েছে।

হারিকেনটির ক্ষেত্র এতই বড় ছিল যে, ঝড়ের কেন্দ্র থেকে কয়েক শত মাইল দূরে থাকা দক্ষিণ ফ্লোরিডার এলাকাগুলোতে জারি করা হয়েছিল রেকর্ড সংখ্যক ১৯টি টর্নেডো সতর্কতা। এছাড়া, কমপক্ষে সাতটি টর্নেডো মাটিতে দেখা যায়। ফোর্ট মায়ার্সে সৃষ্ট একটি টর্নেডো একটি বাড়ির ছাদ ছিঁড়ে ফেলেছে।

এনএইচসি অফিসে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক ৫০টিরও বেশি টর্নেডো এবং রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১১৬টি সতর্কতা জারি করা হয়। ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলে সেন্ট লুসি কাউন্টির একটি কান্ট্রি ক্লাবে একটি টর্নেডো আঘাত হানার পর ‘বহু হতাহতের’ খবর পাওয়া গেছে।

হারিকেন মিলটনের আঘাতে ফ্লোরিডায় বড় রকমের হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

গতকাল দিনের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হারিকেনকে ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঝড়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। মিয়ামির জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র (এনএইচসি) জানিয়েছে, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরেই ফ্লোরিডার সারাসোটার কাছাকাছি স্থানে আঘাত হানে হারিকেন মিলটন। ঝড়টি ফ্লোরিডার উপসাগরীয় উপকূলের বেশিরভাগ অংশে বয়ে আনে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস। যার মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেমন ট্যাম্পা, সেন্ট পিটার্সবার্গ, সারাসোটা এবং ফোর্ট মায়ার্স ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী হারিকেন মিলটন এখনো তাণ্ডব চালাচ্ছে ফ্লোরিডায়।

হারিকেন মিলটনের জেরে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে ১২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পাওয়ারআউটেজ.ইউএস ট্র্যাকার অনুসারে, অঙ্গরাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ১২ লাখেরও বেশি গ্রাহক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যানটিস বলেছেন, দানবীয় এই হারিকেনের কবল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে নিরাপদ এলাকায় কয়েক ডজন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংকটময় পরিস্থিতিতে লুটপাট ঠেকাতে সতর্ক করে দিয়ে গভর্নর রন ডিস্যানটিস আরও বলেন, ‘এ কথা (লুটপাট) চিন্তাও করবেন না। ঘরেই থাকুন। এমন কাজ করলে পরে অবশ্যই পস্তাতে হবে।’

হারিকেন হেলেনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই অঙ্গরাজ্যটি আবারও বড় ধরনের দুর্যোগের মুখে পড়ল। ওই হারিকেনে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, দক্ষিণ ক্যারোলাইনা, টেনেসি, ভার্জিনিয়া এবং উত্তর ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে অন্তত ২২৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হারিকেনের মৌসুম। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত নয়টি হারিকেন আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে পাঁচটিই আঘাত হেনেছে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগের পরে। এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত বছরের মৌসুমে সাতটি হারিকেন আঘাত হেনেছিল। এবারের মৌসুম শেষ হওয়ার মাস দু-এক বাকি থাকতেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ফ্লোরিডায় হারিকেন মিলটনের আঘাতে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস, চলছে ব্যাপক তাণ্ডব

Update Time : ১০:৫১:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়েছে হারিকেন মিলটন। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে এ হারিকেন। পাশাপাশি, প্রবল শক্তিশালী বাতাসের কারণে ব্যাপক সম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার হালনাগাদ এ তথ্য জানায়

রাডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার বলছে, মিলটন ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে সারাসোটা কাউন্টির সিয়েস্তা কি এলাকায় ভূভাগে আছড়ে পড়েছে।

হারিকেনটির ক্ষেত্র এতই বড় ছিল যে, ঝড়ের কেন্দ্র থেকে কয়েক শত মাইল দূরে থাকা দক্ষিণ ফ্লোরিডার এলাকাগুলোতে জারি করা হয়েছিল রেকর্ড সংখ্যক ১৯টি টর্নেডো সতর্কতা। এছাড়া, কমপক্ষে সাতটি টর্নেডো মাটিতে দেখা যায়। ফোর্ট মায়ার্সে সৃষ্ট একটি টর্নেডো একটি বাড়ির ছাদ ছিঁড়ে ফেলেছে।

এনএইচসি অফিসে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক ৫০টিরও বেশি টর্নেডো এবং রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১১৬টি সতর্কতা জারি করা হয়। ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলে সেন্ট লুসি কাউন্টির একটি কান্ট্রি ক্লাবে একটি টর্নেডো আঘাত হানার পর ‘বহু হতাহতের’ খবর পাওয়া গেছে।

হারিকেন মিলটনের আঘাতে ফ্লোরিডায় বড় রকমের হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

গতকাল দিনের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হারিকেনকে ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঝড়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। মিয়ামির জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র (এনএইচসি) জানিয়েছে, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরেই ফ্লোরিডার সারাসোটার কাছাকাছি স্থানে আঘাত হানে হারিকেন মিলটন। ঝড়টি ফ্লোরিডার উপসাগরীয় উপকূলের বেশিরভাগ অংশে বয়ে আনে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস। যার মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেমন ট্যাম্পা, সেন্ট পিটার্সবার্গ, সারাসোটা এবং ফোর্ট মায়ার্স ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী হারিকেন মিলটন এখনো তাণ্ডব চালাচ্ছে ফ্লোরিডায়।

হারিকেন মিলটনের জেরে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে ১২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পাওয়ারআউটেজ.ইউএস ট্র্যাকার অনুসারে, অঙ্গরাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ১২ লাখেরও বেশি গ্রাহক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যানটিস বলেছেন, দানবীয় এই হারিকেনের কবল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে নিরাপদ এলাকায় কয়েক ডজন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংকটময় পরিস্থিতিতে লুটপাট ঠেকাতে সতর্ক করে দিয়ে গভর্নর রন ডিস্যানটিস আরও বলেন, ‘এ কথা (লুটপাট) চিন্তাও করবেন না। ঘরেই থাকুন। এমন কাজ করলে পরে অবশ্যই পস্তাতে হবে।’

হারিকেন হেলেনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই অঙ্গরাজ্যটি আবারও বড় ধরনের দুর্যোগের মুখে পড়ল। ওই হারিকেনে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, দক্ষিণ ক্যারোলাইনা, টেনেসি, ভার্জিনিয়া এবং উত্তর ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে অন্তত ২২৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হারিকেনের মৌসুম। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত নয়টি হারিকেন আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে পাঁচটিই আঘাত হেনেছে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগের পরে। এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত বছরের মৌসুমে সাতটি হারিকেন আঘাত হেনেছিল। এবারের মৌসুম শেষ হওয়ার মাস দু-এক বাকি থাকতেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।