ঠাকুরগাঁওয়ের তোররা স্কুলে ২১ জনের মধ্যে ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীই প্রধান শিক্ষকের নিকটাত্মীয় 

  • Update Time : ০৫:২০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 20

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ।।

 ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ জনের মধ্যে ১৬ জন পরিবারের লোক ও আত্মীয় স্বজনদের শিক্ষক-কর্মচারীকে পদে তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে ওই প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্কুলটিতে আত্মীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী বাইরের। বাকিরা সকলেই প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের নিকটাত্মীয়। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই স্কুলে থাকা প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সদর ইউনিয়নের তোররা বাজারে অবস্থিত তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষক নিজের ভাই, স্ত্রী, মামাশ্বশুর, ভাইয়ের ফুফুশাশুড়ি ও ভাগ্নেসহ বিভিন্ন  আত্মীয়দের এসব পদে নিয়োগ দেন। বর্তমানে
এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ২১ জন কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক পারভীন আকতার প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী, সহকারী মৌলভী আবেদ আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক মসলিম উদ্দিনও চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক সাবিনা খাতুন চাচাতো বোন, সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদিন আপন চাচাতো ভগ্নিপতি, কম্পিউটার শিক্ষক জসিমউদ্দিন চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) আমিনুল ইসলাম মামাশ্বশুর, কৃষি শিক্ষক আব্দুর রউফ আত্মীয়,সহকারী শিক্ষক (গণিত) একরামুল আত্মীয়, সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন ভাগ্নে, সহকারী শিক্ষক  হোসনেয়ারা লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাইয়ের ফুফু শাশুড়ি, সহকারী শিক্ষক জসিম উদদীন চাচাতো বোনের চাচা শ্বশুর, অফিস সহকারী ইউসুফ লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, পিয়ন আব্দুস সালাম লুৎফর রহমানের ভাগ্নে, আয়া কহিনুর বেগম, আত্মীয়। এমএলএস মসিউর রহমান প্রধান শিক্ষকের বোনের ছেলে, এবং অফিস সহায়ক কাঞ্চন লুৎফর রহমানের ছোট ভাই, এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মী আকতারুল নিকটাত্মীয়। এতে এদের মধ্যে দুজনে এখন এমপিও হয়নি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নিয়োগ বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুই আত্মীয়কে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেন লুৎফর রহমান, যা বাতিলের দাবি জানিয়ে গত মে মাসে ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করেছেন বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি মো.বেলালউদ্দীন।
শনিবার (১৪সেপ্টেম্বর)
সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি যা করেছি নিয়ম মেনে করেছি। নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে কথা বললে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তদন্ত করে এ বিদ্যালয়কে আত্মীয়করণ মুক্ত করার কথা জানিয়েছেন এলাকাবসী এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জনিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। হরিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়া বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই স্কুলের বর্তমান সভাপতি ও হরিপুর  উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.আরিফুজ্জামান জানান, তারা নীতিমালা ও নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ দিয়েছেন কি না তা আমরা খতিয়ে দেখবো পদায়ন সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঠাকুরগাঁওয়ের তোররা স্কুলে ২১ জনের মধ্যে ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীই প্রধান শিক্ষকের নিকটাত্মীয় 

Update Time : ০৫:২০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ।।

 ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ জনের মধ্যে ১৬ জন পরিবারের লোক ও আত্মীয় স্বজনদের শিক্ষক-কর্মচারীকে পদে তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে ওই প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্কুলটিতে আত্মীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী বাইরের। বাকিরা সকলেই প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের নিকটাত্মীয়। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই স্কুলে থাকা প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর সদর ইউনিয়নের তোররা বাজারে অবস্থিত তোররা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষক নিজের ভাই, স্ত্রী, মামাশ্বশুর, ভাইয়ের ফুফুশাশুড়ি ও ভাগ্নেসহ বিভিন্ন  আত্মীয়দের এসব পদে নিয়োগ দেন। বর্তমানে
এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ২১ জন কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক পারভীন আকতার প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী, সহকারী মৌলভী আবেদ আলী লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক মসলিম উদ্দিনও চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক সাবিনা খাতুন চাচাতো বোন, সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদিন আপন চাচাতো ভগ্নিপতি, কম্পিউটার শিক্ষক জসিমউদ্দিন চাচাতো ভাই, সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) আমিনুল ইসলাম মামাশ্বশুর, কৃষি শিক্ষক আব্দুর রউফ আত্মীয়,সহকারী শিক্ষক (গণিত) একরামুল আত্মীয়, সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন ভাগ্নে, সহকারী শিক্ষক  হোসনেয়ারা লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাইয়ের ফুফু শাশুড়ি, সহকারী শিক্ষক জসিম উদদীন চাচাতো বোনের চাচা শ্বশুর, অফিস সহকারী ইউসুফ লুৎফর রহমানের চাচাতো ভাই, পিয়ন আব্দুস সালাম লুৎফর রহমানের ভাগ্নে, আয়া কহিনুর বেগম, আত্মীয়। এমএলএস মসিউর রহমান প্রধান শিক্ষকের বোনের ছেলে, এবং অফিস সহায়ক কাঞ্চন লুৎফর রহমানের ছোট ভাই, এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মী আকতারুল নিকটাত্মীয়। এতে এদের মধ্যে দুজনে এখন এমপিও হয়নি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নিয়োগ বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দুই আত্মীয়কে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেন লুৎফর রহমান, যা বাতিলের দাবি জানিয়ে গত মে মাসে ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করেছেন বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি মো.বেলালউদ্দীন।
শনিবার (১৪সেপ্টেম্বর)
সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি যা করেছি নিয়ম মেনে করেছি। নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে কথা বললে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তদন্ত করে এ বিদ্যালয়কে আত্মীয়করণ মুক্ত করার কথা জানিয়েছেন এলাকাবসী এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জনিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। হরিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়া বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই স্কুলের বর্তমান সভাপতি ও হরিপুর  উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.আরিফুজ্জামান জানান, তারা নীতিমালা ও নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ দিয়েছেন কি না তা আমরা খতিয়ে দেখবো পদায়ন সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।