সরকারি বিল বন্ডে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে

  • Update Time : ১০:৪০:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • / 50

দেশের ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের মধ্যে সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না করে অধিক মুনাফার আসায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে সরকারি বিল বন্ডে। এর ফলে বছরের ব্যবধানে সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারি বিল বন্ডে মোট বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ লাখ ৪৬৫ কোটি টাকা।

এদিকে ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৮০ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ ছিলো ৭৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।

আর ২০২৩ সালের জুনে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ১২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে অধিক মুনাফার আসায় সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এটার সাময়িক অসুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে বাজার থেকে টাকার সরবরাহ কমাতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বাড়া সমস্যা নয়। তবে যদি ডলার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা না যায় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের কর্মসংস্থানের উপর এটি সমস্যা তৈরি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ৭ দশমিক ২৫ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মুনাফা ছিল শতকরা ৮ দশমিক ৩০ টাকা। অন্যদিকে দুই বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৬৫ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। তরল সম্পদ হলো, নগদ টাকা ও খুব সহজে বিনিময়যোগ্য উপাদান। এর মধ্যে বিল-বন্ড অন্যতম। তথ্যমতে, মোট তরল সম্পদের ৭০ শতাংশই বিল ও বন্ড হিসেবে গচ্ছিত থাকে।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে ২৪টি প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ও ২৪টি নন প্রাইমারি ডিলার (নন-পিডি) ব্যাংক রয়েছে দেশে। তবে বিল ও বন্ডে পিডি ব্যাংকের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, এ খাতে মোট বিনিয়োগের ৩৬ দশমিক ৬২ শতাংশই পিডি ব্যাংকের সম্পদ। ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ নন-পিডি, ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক, ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যক্তিগত ও বাকি অংশ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ।

পিডি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিল ও বন্ড কিনেছে ব্র্যাক ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে এর পরেই রয়েছে মধুমতি, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, স্ট্রার্ন্ডাড চাটার্ড, এনসিসি, ইস্টার্ন, মিডল্যান্ড, রুপালি, সিটি, এমটিবি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর হাতে সিআরআর ও এসএলআর রাখার পর চলতি বছরের নভেম্বর শেষে অতিরিক্ত তারল্য কমে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এক মাস আগে অর্থাৎ অক্টোবর শেষে ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ১৮ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সরকারি বিল বন্ডে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে

Update Time : ১০:৪০:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের মধ্যে সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ না করে অধিক মুনাফার আসায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে সরকারি বিল বন্ডে। এর ফলে বছরের ব্যবধানে সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারি বিল বন্ডে মোট বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে ১ লাখ ৪৬৫ কোটি টাকা।

এদিকে ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৮০ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ ছিলো ৭৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।

আর ২০২৩ সালের জুনে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ১২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে অধিক মুনাফার আসায় সরকারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এটার সাময়িক অসুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে বাজার থেকে টাকার সরবরাহ কমাতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বাড়া সমস্যা নয়। তবে যদি ডলার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা না যায় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের কর্মসংস্থানের উপর এটি সমস্যা তৈরি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ৭ দশমিক ২৫ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মুনাফা ছিল শতকরা ৮ দশমিক ৩০ টাকা। অন্যদিকে দুই বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৬৫ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।

রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। তরল সম্পদ হলো, নগদ টাকা ও খুব সহজে বিনিময়যোগ্য উপাদান। এর মধ্যে বিল-বন্ড অন্যতম। তথ্যমতে, মোট তরল সম্পদের ৭০ শতাংশই বিল ও বন্ড হিসেবে গচ্ছিত থাকে।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে ২৪টি প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ও ২৪টি নন প্রাইমারি ডিলার (নন-পিডি) ব্যাংক রয়েছে দেশে। তবে বিল ও বন্ডে পিডি ব্যাংকের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, এ খাতে মোট বিনিয়োগের ৩৬ দশমিক ৬২ শতাংশই পিডি ব্যাংকের সম্পদ। ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ নন-পিডি, ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক, ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যক্তিগত ও বাকি অংশ অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ।

পিডি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিল ও বন্ড কিনেছে ব্র্যাক ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে এর পরেই রয়েছে মধুমতি, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, স্ট্রার্ন্ডাড চাটার্ড, এনসিসি, ইস্টার্ন, মিডল্যান্ড, রুপালি, সিটি, এমটিবি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর হাতে সিআরআর ও এসএলআর রাখার পর চলতি বছরের নভেম্বর শেষে অতিরিক্ত তারল্য কমে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এক মাস আগে অর্থাৎ অক্টোবর শেষে ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ১৮ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা।