নৌকার লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না: মাধবদী থানা আ.লীগের আহ্বায়ক সিরাজ

  • Update Time : ০৮:২২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / 144

নরসিংদী প্রতিনিধি:

নরসিংদী-১ সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে এক আওয়ামী লীগ নেতার দেওয়া বক্তব্যে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নৌকার প্রার্থী।

বুধবার বিকালে নরসিংদীর মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে আয়োজিত সভায় ওই বক্তব্য দেন।

এ সময় সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল উপস্থিত ছিলেন। সিরাজের এই বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সিরাজকে বলতে শোনা যায়, “নৌকা বলি না, আমরা হিরুর নৌকা বলি, হিরু, হিরু। হিরুর (নৌকার প্রার্থী) লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না। ৭ তারিখ যে জাগরণ সৃষ্টি হবে এই নরসিংদীতে এই জাগরণের পরিণতিতে কামরুল ভাই (আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী) বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

“মাধবদীর মেয়র মোশারফ সাব বক্তব্য দেওয়ার পরে দক্ষিণ এলাকার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গণজাগরণ তৈরি হবে ইনশাল্লাহ। এই গণজাগরণে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিতে পারবে না। কাল থেকে হিরোর নৌকার লোক পলানোর জন্য জায়গা পাবে না। নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।”

এ সময় সভায় উপস্থিত থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কিছুটা হাসাহাসি করেন। তখন সিরাজ নিজেই বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, “হিরোর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কাল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের হয়ে মাঠে নামবো। কোনো বাধা-বিপত্তি নেই। যতই প্রোপাগান্ডা করুক, গণজাগরণ ফেরাতে পারবে না। মোশারফ ভাই যেভাবে বলবেন, কাল থেকে সেভাবে কাজ করবেন।”

“আমার চাচা আছে মোশাররফ (মাধবদী পৌর মেয়র) সাহেব। তার নেতৃত্বে পাঁচটা ইউনিয়ন ও মাধবদী পৌরসভা চলবে। তার নেতৃত্বের বাইরে, তার অর্ডারের বাইরে কেউ পা দিতে পারবে না”, যোগ করেন সিরাজ।

মাধবদী পৌর পরিষদের উদ্যোগে মাধবদী পৌরসভার হলরুমে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধবদী পৌরসভার মেয়র ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক।

এ সময় সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক মাহমুদুল কবীর সাহীদ, নরসিংদী পৌর মেয়র ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ, মাধবদী পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোজাম্মেল মিয়া, নুরালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছানাউল্লাহ মোল্লা, নুরালাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফয়সাল বিন ইসলাম, মাধবদী পৌর কৃষক লীগের সভাপতি শরিফ মিয়া, মাধবদী পৌর কাউন্সিলর, বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম বলেন, “তার (সিরাজ) বক্তব্য নিরেট নির্বাচনি আচরণ ভঙ্গ করেছে। কাউকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার এখতিয়ার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

“তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে, নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনার অর্থ হচ্ছে, দলের সঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করার শামিল। আমি উনার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নৌকার সমর্থকদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ায় তার বিচারের দাবি করছি”, বলেন কাইয়ুম।

নরসিংদী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (হিরু) বলেন, “তিনি আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। অন্যায় হলে তিনি ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে পারেন, তার স্বাধীনতা আছে।

“কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। তিনি নির্বাচনি আচরণ ভঙ্গ করেছেন, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।”

তবে রাতে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নৌকার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেইনি। এ বিষয়ে আমি অবগত নই।”

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, “থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়ে এমন বক্তব্য খুবই ধিক্কারজনক। এরই মধ্যে আমি তার বক্তব্যের ভিডিও দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ব্যাপারে জানতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বদিউল আলমকে একাধিকার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নৌকার লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না: মাধবদী থানা আ.লীগের আহ্বায়ক সিরাজ

Update Time : ০৮:২২:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নরসিংদী প্রতিনিধি:

নরসিংদী-১ সদর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে এক আওয়ামী লীগ নেতার দেওয়া বক্তব্যে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নৌকার প্রার্থী।

বুধবার বিকালে নরসিংদীর মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে আয়োজিত সভায় ওই বক্তব্য দেন।

এ সময় সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল উপস্থিত ছিলেন। সিরাজের এই বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সিরাজকে বলতে শোনা যায়, “নৌকা বলি না, আমরা হিরুর নৌকা বলি, হিরু, হিরু। হিরুর (নৌকার প্রার্থী) লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না। ৭ তারিখ যে জাগরণ সৃষ্টি হবে এই নরসিংদীতে এই জাগরণের পরিণতিতে কামরুল ভাই (আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী) বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

“মাধবদীর মেয়র মোশারফ সাব বক্তব্য দেওয়ার পরে দক্ষিণ এলাকার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গণজাগরণ তৈরি হবে ইনশাল্লাহ। এই গণজাগরণে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিতে পারবে না। কাল থেকে হিরোর নৌকার লোক পলানোর জন্য জায়গা পাবে না। নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।”

এ সময় সভায় উপস্থিত থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কিছুটা হাসাহাসি করেন। তখন সিরাজ নিজেই বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, “হিরোর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কাল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের হয়ে মাঠে নামবো। কোনো বাধা-বিপত্তি নেই। যতই প্রোপাগান্ডা করুক, গণজাগরণ ফেরাতে পারবে না। মোশারফ ভাই যেভাবে বলবেন, কাল থেকে সেভাবে কাজ করবেন।”

“আমার চাচা আছে মোশাররফ (মাধবদী পৌর মেয়র) সাহেব। তার নেতৃত্বে পাঁচটা ইউনিয়ন ও মাধবদী পৌরসভা চলবে। তার নেতৃত্বের বাইরে, তার অর্ডারের বাইরে কেউ পা দিতে পারবে না”, যোগ করেন সিরাজ।

মাধবদী পৌর পরিষদের উদ্যোগে মাধবদী পৌরসভার হলরুমে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধবদী পৌরসভার মেয়র ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক।

এ সময় সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক মাহমুদুল কবীর সাহীদ, নরসিংদী পৌর মেয়র ও নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ, মাধবদী পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোজাম্মেল মিয়া, নুরালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছানাউল্লাহ মোল্লা, নুরালাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফয়সাল বিন ইসলাম, মাধবদী পৌর কৃষক লীগের সভাপতি শরিফ মিয়া, মাধবদী পৌর কাউন্সিলর, বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজের এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম বলেন, “তার (সিরাজ) বক্তব্য নিরেট নির্বাচনি আচরণ ভঙ্গ করেছে। কাউকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার এখতিয়ার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

“তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে, নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনার অর্থ হচ্ছে, দলের সঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করার শামিল। আমি উনার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নৌকার সমর্থকদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ায় তার বিচারের দাবি করছি”, বলেন কাইয়ুম।

নরসিংদী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (হিরু) বলেন, “তিনি আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। অন্যায় হলে তিনি ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে পারেন, তার স্বাধীনতা আছে।

“কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না। তিনি নির্বাচনি আচরণ ভঙ্গ করেছেন, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।”

তবে রাতে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নৌকার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেইনি। এ বিষয়ে আমি অবগত নই।”

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, “থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়ে এমন বক্তব্য খুবই ধিক্কারজনক। এরই মধ্যে আমি তার বক্তব্যের ভিডিও দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ব্যাপারে জানতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বদিউল আলমকে একাধিকার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।