নিজেদের স্বার্থে বিদেশে সরকার হঠাতে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র

  • Update Time : ১০:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
  • / 139

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিভিন্ন দেশে সরকার হঠানোর কাজে সম্পৃক্ত থাকে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে দেশটি এমন কাজে সম্পৃক্ত হয়। দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন তুরস্কের সরকারি টেলিভিশন টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ইনারভিউ প্রোগ্রামে এমন মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় সহায়তা করে আসছে। গত বছর সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও বোল্টন বলেছিলেন, অভ্যুত্থান বা সরকার বদলের পরিকল্পনাগুলোর নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখা এবং অন্য দেশের প্রভাব কমানোই মূল উদ্দেশ্য।

বোল্টন প্রায় ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে কাজ করেছেন। সবশেষ তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। তবে মতের অমিলে তাকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। ওই সময় ট্রাম্প বলেন, বোল্টন বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বাধাতে ও বোমা ফেলতে চান।

টিভি সাক্ষাৎকারে বোল্টনের কাছে অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যেতে যাচ্ছি না। তবে তিনি তার বইতে ভেনিজুয়েলার বিষয়ে কথা বলেছেন। যদিও ওই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল। এজন্য তার বিরুদ্ধে দেশট্রি রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে হত্যা এবং অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভেনিজুয়েলায় বিরোধী মিলিশিয়াদের সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

হোয়াইট হাউজের দিনগুলো নিয়ে জন বোল্টনের লেখা ‘দ্য রুম হয়ার ইট হ্যাপেন্ড: আ হোয়াইট হাউস মেমোয়ার’ (যে কক্ষে এটি ঘটেছে : হোয়াইট হাউস স্মৃতিকথা) নামের বইটি ২০২০ সালের জুনে প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি প্রকাশের আগে এতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য আছে বলে প্রকাশককে চিঠি দিয়ে হোয়াইট হাউস সতর্ক করে। ওই বইয়ে বোল্টন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভ্রান্তিকর ও অস্থির নীতির সমালোচনা করেন।

বইটিতে তিনি দাবি করেন, ভেনিজুয়েলা আক্রমণ করা ‘আইনসম্মত’ হবে এবং দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটি ‘যুক্তরাষ্ট্রের অংশ’—এমন কথাও বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

বোল্টনের এ কথার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যেরও মিল রয়েছে। তিনি গত ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতেপাল্টাতে পারে।’

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ওই সাক্ষাৎকারে বিদেশে সরকারের পতন ঘটানো যুক্তরাষ্ট্রের কাজ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্টনে বলেন, এটি নির্ভর করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে। ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে মাদুরোর শাসনকে সমর্থন করেছিল কিউবানরা। আর আগে রাশিয়াও সমর্থন দিয়েছিল। এছাড়া এখানে চীনের উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা ছিল।

তিনি বলেন, মনরো মতবাদে বিশ্বাসী দেশগুলো বিদেশি প্রভাব থেকে দূরে থাকতে চায়। এ ক্ষেত্রে নীতি হলো ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়া বা কিউবার জনগণ তাদের দেশ নিজেদেরই চালানোর সুযোগ করে দেওয়া।

ভেনিজুয়েলা, কিউবা, ইয়েমেন, সিরিয়া বা লিবিয়ায় অভিযান চালানো এবং সরকার উৎখাতের আহ্বান আপনার ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্টন বলেন, বিষয়টি তেমন ছিল না। এটি কেবল ইরানে পরামাণু অস্ত্র পাওয়া থেকে আয়াতুল্লাহকে থামানোর জন্য।

তিনি সরকার বদলাতে চেয়েছিলেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মনে হয় দেশটির জনগণ সরকার বদলাতে চেয়েছিল। এজন্য মাশা আমিনির হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে টানা বিক্ষোভ হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থেকে শুরু করে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো পর্যায়েই কি তিনি বিদেশে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্টন জানান, তিনি অনেক সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএনএনের জ্যাক ট্যাপারের শোতে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতে তিনি এখনো অবিচল আছেন।

বোল্টন বলেন, ‘রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য যাতে প্রকাশিত না হয় সে জন্য ভেনিজুয়েলায় ভূমিকা নিয়ে আমার বইয়ের পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল।’

তার অভ্যত্থানের চেষ্টাগুলোর একটিও সফল হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বড় খেলা আছে। আমি জানি, আপনি কী নিয়ে প্রশ্ন করছেন। কিন্তু আমি এ বিষয়ে আর কিছুই বলছি না।’

ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার নাম উল্লেখ করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এসব দেশের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় কিনা। জবাবে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের অধীন একীভূত হওয়া প্রয়োজন।

আপনি কি এখন আপনার মনোভাব বদলেছেন নাকি ওই সরকারগুলোর পরিবর্তন হওয়া দরকার বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নে বোল্টন বলেন, লিবিয়ায় এখন সরকার নেই। এটিই এখন সমস্যার অংশ। ইরাকে ক্ষমতার পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সফল হয়েছিল। কিন্তু এরপর সেখানে ইরান মিলিশিয়া গোষ্ঠী সৃষ্টি করে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চেয়েছে। ইরানই ইরাককে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়েছে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নিজেদের স্বার্থে বিদেশে সরকার হঠাতে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র

Update Time : ১০:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিভিন্ন দেশে সরকার হঠানোর কাজে সম্পৃক্ত থাকে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে দেশটি এমন কাজে সম্পৃক্ত হয়। দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন তুরস্কের সরকারি টেলিভিশন টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ইনারভিউ প্রোগ্রামে এমন মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় সহায়তা করে আসছে। গত বছর সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও বোল্টন বলেছিলেন, অভ্যুত্থান বা সরকার বদলের পরিকল্পনাগুলোর নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখা এবং অন্য দেশের প্রভাব কমানোই মূল উদ্দেশ্য।

বোল্টন প্রায় ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে কাজ করেছেন। সবশেষ তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। তবে মতের অমিলে তাকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। ওই সময় ট্রাম্প বলেন, বোল্টন বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বাধাতে ও বোমা ফেলতে চান।

টিভি সাক্ষাৎকারে বোল্টনের কাছে অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যেতে যাচ্ছি না। তবে তিনি তার বইতে ভেনিজুয়েলার বিষয়ে কথা বলেছেন। যদিও ওই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল। এজন্য তার বিরুদ্ধে দেশট্রি রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোকে হত্যা এবং অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভেনিজুয়েলায় বিরোধী মিলিশিয়াদের সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

হোয়াইট হাউজের দিনগুলো নিয়ে জন বোল্টনের লেখা ‘দ্য রুম হয়ার ইট হ্যাপেন্ড: আ হোয়াইট হাউস মেমোয়ার’ (যে কক্ষে এটি ঘটেছে : হোয়াইট হাউস স্মৃতিকথা) নামের বইটি ২০২০ সালের জুনে প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি প্রকাশের আগে এতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য আছে বলে প্রকাশককে চিঠি দিয়ে হোয়াইট হাউস সতর্ক করে। ওই বইয়ে বোল্টন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভ্রান্তিকর ও অস্থির নীতির সমালোচনা করেন।

বইটিতে তিনি দাবি করেন, ভেনিজুয়েলা আক্রমণ করা ‘আইনসম্মত’ হবে এবং দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটি ‘যুক্তরাষ্ট্রের অংশ’—এমন কথাও বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

বোল্টনের এ কথার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্যেরও মিল রয়েছে। তিনি গত ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতেপাল্টাতে পারে।’

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ওই সাক্ষাৎকারে বিদেশে সরকারের পতন ঘটানো যুক্তরাষ্ট্রের কাজ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্টনে বলেন, এটি নির্ভর করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে। ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে মাদুরোর শাসনকে সমর্থন করেছিল কিউবানরা। আর আগে রাশিয়াও সমর্থন দিয়েছিল। এছাড়া এখানে চীনের উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা ছিল।

তিনি বলেন, মনরো মতবাদে বিশ্বাসী দেশগুলো বিদেশি প্রভাব থেকে দূরে থাকতে চায়। এ ক্ষেত্রে নীতি হলো ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়া বা কিউবার জনগণ তাদের দেশ নিজেদেরই চালানোর সুযোগ করে দেওয়া।

ভেনিজুয়েলা, কিউবা, ইয়েমেন, সিরিয়া বা লিবিয়ায় অভিযান চালানো এবং সরকার উৎখাতের আহ্বান আপনার ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্টন বলেন, বিষয়টি তেমন ছিল না। এটি কেবল ইরানে পরামাণু অস্ত্র পাওয়া থেকে আয়াতুল্লাহকে থামানোর জন্য।

তিনি সরকার বদলাতে চেয়েছিলেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মনে হয় দেশটির জনগণ সরকার বদলাতে চেয়েছিল। এজন্য মাশা আমিনির হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে টানা বিক্ষোভ হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থেকে শুরু করে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো পর্যায়েই কি তিনি বিদেশে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বোল্টন জানান, তিনি অনেক সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএনএনের জ্যাক ট্যাপারের শোতে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতে তিনি এখনো অবিচল আছেন।

বোল্টন বলেন, ‘রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য যাতে প্রকাশিত না হয় সে জন্য ভেনিজুয়েলায় ভূমিকা নিয়ে আমার বইয়ের পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল।’

তার অভ্যত্থানের চেষ্টাগুলোর একটিও সফল হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বড় খেলা আছে। আমি জানি, আপনি কী নিয়ে প্রশ্ন করছেন। কিন্তু আমি এ বিষয়ে আর কিছুই বলছি না।’

ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার নাম উল্লেখ করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এসব দেশের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় কিনা। জবাবে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের অধীন একীভূত হওয়া প্রয়োজন।

আপনি কি এখন আপনার মনোভাব বদলেছেন নাকি ওই সরকারগুলোর পরিবর্তন হওয়া দরকার বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নে বোল্টন বলেন, লিবিয়ায় এখন সরকার নেই। এটিই এখন সমস্যার অংশ। ইরাকে ক্ষমতার পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সফল হয়েছিল। কিন্তু এরপর সেখানে ইরান মিলিশিয়া গোষ্ঠী সৃষ্টি করে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চেয়েছে। ইরানই ইরাককে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়েছে