জঙ্গি উত্থান নিয়ে সতর্ক করা হলো ১৪ কংগ্রেসম্যানকে

  • Update Time : ১১:৩৫:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩
  • / 151

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জঙ্গি উত্থান নিয়ে সতর্ক করা হলো ১৪ কংগ্রেসম্যানকে
মিশরের মতোই বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ছদ্মাবরণে ধর্মীয় উগ্র ও জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটতে পারে বলে ১৪ মার্কিন কংগ্রেসম্যানকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে আসছেন।

এক বিবৃতিতে তাদের বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে যেকোনোভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কব্জায় নিতে চায় ওই গোষ্ঠী। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম এবং হরকাতুল জিহাদের যোগসাজশ প্রমাণিত। ওই জঙ্গিরা আল কায়েদার হয়ে বাংলাদেশে কাজ করে।

বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নারকীয় নৃশংসতা চালানোর নজির তুলে ধরা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ওই গোষ্ঠী আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সেই দুঃসহ ভয়াবহতা ফিরে আসবে বলে কংগ্রেসম্যানদের সতর্ক করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অজুহাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট কোনোভাবে ক্ষমতা দখল করলে বহু মানুষের জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে।

নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে ২০১২ সালে মিশরে কীভাবে উগ্রপন্থী ব্রাদারহুড রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল তা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেসম্যানদের বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভুল নীতির কারণে বাংলাদেশে একই ঘটনা ঘটলে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অবিলম্বে বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন নীতি বদলাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

গত সোমবার ওই ১৪ কংগ্রেসম্যানদের উদ্দেশ করে এই বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে সই করেছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান নির্বাচিত কয়েকজন কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী ও সামাজিক-পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, আমরা বাংলাদেশি-আমেরিকান; যারা মানবাধিকার, সামাজিক ও পেশাদার সংগঠনে কর্মকর্তা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা সহিংসতামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে জোরালভাবে সমর্থন করি।

বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে আপনাদের বিবৃতি দেখে মনে হচ্ছে, আপনারা ধর্মীয় উগ্রবাদী ও জঙ্গিদের হাতের খেলনা হিসেবে কাজ করছেন। আপনাদের এখনকার চাওয়ার মতোই এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে ব্ল্যাকমেইল করে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করে। তখন বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনে সেনা নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করা হয়েছিল। তাতে কিন্তু সংকট মোকাবিলা করা যায়নি।

‘প্রিয় কংগ্রেসম্যানরা, আপনারা হঠাৎ করে বিদেশের একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আগে দয়া করে হোমওয়ার্ক করুন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের দাবির বিষয়ে আরও অবহিত হোন।’

বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, ২০১৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় নামে একজন আমেরিকান মুক্তমনা লেখককে খুন করে জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম। আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন হিসেবে এই আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে গোপন অপারেশন পরিচালনা করে। আর ২০০১ সাল থেকেই হরকাতুল জিহাদ ও আনসার আল ইসলামের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্য ও গোপনে কাজ করে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এই দুটি দল এখন বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।

‘আর এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো মিশরের ব্রাদারহুডের মতোই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের কব্জায় নেয়ার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। একই কাজ করে ২০১২ সালে মিশরের ক্ষমতা দখল করেছিল ব্রাদারহুড।’

কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, আমরা কেন আপনাকে এই বিবৃতি লিখছি? প্রথমত, মার্কিন নাগরিক হিসেবে আমরা মুসলিম দেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক মাত্রা বিবেচনা না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বারবার ব্যর্থতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো- আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়া। আমরা চাই না বাংলাদেশে এমনটা হোক।

দ্বিতীয়ত, আমরা যারা গত কয়েক দশক ধরে একটি অসাম্প্রদায়িক, সহিংসতামুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে ওকালতি ও লড়াই করছি, তারা মনে করি যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অজুহাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট কোনোভাবে ক্ষমতা দখল করলে, অভিজিতের মতো আমাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে। অনুগ্রহ করে এটাও মনে রাখবেন, যেকোনো ধরনের ইসলামী জোটের হাতে যদি বাংলাদেশ চলে যায় তাহলে, দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ দ্বিগুণ আঘাতপ্রাপ্ত হবে।

বিবৃতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, এখন অতীতে ফিরে দেখা যাক, কীভাবে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে ইসলামপন্থীরা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। তারা এখনও দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

‘বাংলাদেশে প্রশংসিত এবং অংশগ্রহণমূলক চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলো হলো ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি অবাধ নির্বাচনের মধ্যেও বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ২০২৪ সালে শুধুমাত্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। একটি টেকসই সমাধান তখনই খুঁজে পাওয়া যাবে, যখন নির্বাচনে ও নির্বাচন-পরবর্তীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের অংশগ্রহণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।’

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ইসলামী জোটের জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘুদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব নেমে আসার কথা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমের ১১টি জেলাজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা চালানো হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের বাড়িঘর, চালানো হয় লুটপাট। হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হয় এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

‘আর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই সহিংসতা চলে পুরো পাঁচ বছর ধরে। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলজুড়ে (২০০১ থেকে ২০০৬)। বিএনপি-জামায়াত জোট নেতাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’

সেই সময়ের কয়েকটি নারকীয় জঙ্গি হামলার নমুনা তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে। এগুলো হলো:

> ২০০৪ সালের ২৪ মে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনারসহ ৫০ জন আহত হন। ওই ঘটনায় মারা যান তিন জন। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান এবং আরও দুইজনের ফাঁসির রায় হয়।

> ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশের ওপর দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলা চালায় হুজি। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০০ জন আহত হন। ওই ঘটনার পর বিচার যাতে নিশ্চিত না হয় সেজন্য বিএনপি-জামাত জোট সরকার মিথ্যা নাটক সাজায় দরিদ্র জজ মিয়া এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক শৈবাল সাহা পার্থের ওপর দোষ চাপানো হয়। ওই ঘটনার দায় স্বীকার করতে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মুফতি হান্নান ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেন। মুফতি হান্নান বলেন, ওই হামলার পেছনে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছিলেন। এছাড়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুও জড়িত ছিলেন।

> ২০১৮ সালে হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে, তারেক জিয়া, বাবর ও পিন্টুসহ অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৭ জনের ফাঁসির রায় হয়। তারেকসহ ১৮ জনের যাবজ্জীবন দণ্ড হয়।

> ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় ৪৫৯টি বোমা হামলা চালায়। এই হামলার মূল নায়ক ছিল শায়খ আবদুল রহমান এবং সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। জেএমবি এবং হুজি বিভিন্ন সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের ওপর অনেক হামলা চালায়। এসব হামলার পেছনে তারেক রহমানসহ বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন।

> ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউনুসের ওপর হামলা চালায়।

যে কারণে উদ্বেগ:

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা কেন উদ্বিগ্ন তা তুলে ধরা হয়েছে তাদের বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, প্রথমত, বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল-বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি। দলের চেয়ারপারসন হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। সন্ত্রাস ও অন্যান্য অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তারেক এবং অন্য আসামিরা যদি কোনোভাবে অবাধ নির্বাচনের পেছনের দরজা দিয়ে বিজয়ী হয় তাহলে, গণতন্ত্র নিরাপদ হবে কীভাবে? ঠিক একইভাবে কি মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুডকেও ২০১২ সালে মিশরে একটি অবাধ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি?

‘দ্বিতীয়ত, এতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংস পথ পরিহার করত পারেনি। অতি সম্প্রতি গত ২৫ থেকে ২৯ জুলাই রাজনৈতিক সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়ার পরে বিএনপির নেতৃত্বে সহিংসতা চালানো হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, গণপরিবহন পুড়িয়ে ফেলা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে তাদের কর্মীবাহিনী।’

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত করার পর জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সারাদেশ জুড়ে বছরব্যাপী যে সহিংসতা চালিয়েছিল তাও তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে।

‘ওই সহিংসতায় শত শত মানুষ প্রাণ হারান। জামায়াত নেতৃত্বাধীন ওই সহিংসতায় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর আবার সরকার পতনের নামে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বিএনপি-জামায়াত পেট্রোল বোমা মেরে বহু মানুষকে হত্যা করে। পুড়িয়ে দেয়া হয় বহু যানবাহন। বোমা হামলায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং শতাধিক আহত হন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে ওই সন্ত্রাসের সমালোচনা করে বলা হয়েছিল, ‘…যে পদ্ধতিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভগুলি পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতাকেই বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে।’

বিবৃতিতে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের অনুরোধ করে বলা হয়েছে, ‘প্রিয় কংগ্রেসম্যান, অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের। আমরা পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক কামনা করি। অতএব, আমরা অনুরোধ করছি যে, আপনারা দয়া করে সতর্কতার সাথে আপনার বিবৃতি দেবেন এবং সহিংসতামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন্য সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করবেন ‘

‘আপনারা যদি চান, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান গতিপথ কেন অস্থিতিশীল হচ্ছে তা নিয়েও আমাদের উদ্বেগগুলিকে তথ্যসম্মৃদ্ধভাবে উপস্থাপন করতে পারি। বিএনপির মূল অংশের নেতৃত্বে রয়েছে দোষী ও সন্ত্রাসীরা। বিএনপির রয়েছে সহিংস প্রবণতা এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সঙ্গে জোট। যদি তারা কোনোভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আরোহণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বীভৎস সহিংসতার আবার দেখবে বাংলাদেশ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তাই বাংলাদেশের জন্য সহিংসতামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমরা আপনাদের বর্তমান কর্মপন্থা পরিবর্তন করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।

বিবৃতিতে সই করেছেন:

১। নির্বাচিত বাংলাদেশী-আমেরিকান কর্মকর্তা হলেন: কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী, এনজে; মেয়র মাহাবুবুল আলম তৈয়ুব, পিএ; রাজ্য প্রতিনিধি আবুল খান, এনএইচ; কাউন্সিলম্যান আবু আহমেদ মুসা, এমআই এবং কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান, পিএ।

২। সম্প্রীতি ফোরামের অধ্যাপক এবিএম নাসির, এনসি।

৩। ইউএসএ বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রকৌশলী রানা হাসান মাহমুদ, সিএ এবং প্রকৌশলী স্বীকৃতি বড়ুয়া, এনওয়াই।

৪। বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটেরান্স ১৯৭১, ইউএসএ ইনকর্পোরেটেডের গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ।

৫। ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের নজরুল আলম এবং ইঞ্জিনিয়ার তাসনিম সালাম আসলাম, সিএ।

৬। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউএসএ-এর ফাহিম রেজা নূর, এনওয়াই।

৭। মিশিগান বঙ্গবন্ধু পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার আহাদ আহমেদ, এমআই এবং আলী আহমেদ ফারিশ, এমআই।

৮। ইউএসএ কমিটি ফর ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড সেক্যুলার বাংলাদেশের জাকারিয়া চৌধুরী, এনওয়াই।

৯। এনআরবি কাউন্সিল ইউএসএ, ইঞ্জিনিয়ার জলিল খান, সিএ।

১০। জর্জিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের রুমি কবির এবং মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া, জিএ।

১১। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ইউএসএ-এর খুরশীদ আনোয়ার বাবলু।

১২। গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদের নাসরিন মান্নান।

১৩। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ড. আব্দুল বাতেন।

১৪। ম্যাসাচুসেটস বঙ্গবন্ধু পরিষদের সফেদা বসু, এমএ।

১৫। মোরশেদ আলম, গণতান্ত্রিক নেতা, এনওয়াই।

১৬। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ক্যালিফোর্নিয়া কমান্ড কাউন্সিল, জাহেদুল মাহমুদ জমি, সিএ।

১৭। পেনসিলভানিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আবু তাহের বীর প্রতীক, কাজী শামীম, পিএ।

১৮। অ্যাকাডেমিক গ্রুপ: অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, পিএ; প্রফেসর মিজান আর মিয়া, আইএল; অধ্যাপক জামিল তালুকদার , ডব্লিউআই; অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন, এনওয়াই।

১৯। দক্ষিণ নিউ জার্সি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, নূরন্নবী চৌধুরী, এনজে

২০। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক সংস্থা, তৌফিক সোলেমান তুহিন, জামিউল বেলাল, সিএ

সূত্র: একাত্তর

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


জঙ্গি উত্থান নিয়ে সতর্ক করা হলো ১৪ কংগ্রেসম্যানকে

Update Time : ১১:৩৫:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জঙ্গি উত্থান নিয়ে সতর্ক করা হলো ১৪ কংগ্রেসম্যানকে
মিশরের মতোই বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ছদ্মাবরণে ধর্মীয় উগ্র ও জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটতে পারে বলে ১৪ মার্কিন কংগ্রেসম্যানকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে আসছেন।

এক বিবৃতিতে তাদের বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে যেকোনোভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কব্জায় নিতে চায় ওই গোষ্ঠী। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম এবং হরকাতুল জিহাদের যোগসাজশ প্রমাণিত। ওই জঙ্গিরা আল কায়েদার হয়ে বাংলাদেশে কাজ করে।

বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নারকীয় নৃশংসতা চালানোর নজির তুলে ধরা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ওই গোষ্ঠী আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সেই দুঃসহ ভয়াবহতা ফিরে আসবে বলে কংগ্রেসম্যানদের সতর্ক করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অজুহাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট কোনোভাবে ক্ষমতা দখল করলে বহু মানুষের জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে।

নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে ২০১২ সালে মিশরে কীভাবে উগ্রপন্থী ব্রাদারহুড রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল তা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেসম্যানদের বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভুল নীতির কারণে বাংলাদেশে একই ঘটনা ঘটলে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অবিলম্বে বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন নীতি বদলাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

গত সোমবার ওই ১৪ কংগ্রেসম্যানদের উদ্দেশ করে এই বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে সই করেছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান নির্বাচিত কয়েকজন কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী ও সামাজিক-পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন, আমরা বাংলাদেশি-আমেরিকান; যারা মানবাধিকার, সামাজিক ও পেশাদার সংগঠনে কর্মকর্তা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা সহিংসতামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে জোরালভাবে সমর্থন করি।

বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে আপনাদের বিবৃতি দেখে মনে হচ্ছে, আপনারা ধর্মীয় উগ্রবাদী ও জঙ্গিদের হাতের খেলনা হিসেবে কাজ করছেন। আপনাদের এখনকার চাওয়ার মতোই এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে ব্ল্যাকমেইল করে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করে। তখন বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনে সেনা নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করা হয়েছিল। তাতে কিন্তু সংকট মোকাবিলা করা যায়নি।

‘প্রিয় কংগ্রেসম্যানরা, আপনারা হঠাৎ করে বিদেশের একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আগে দয়া করে হোমওয়ার্ক করুন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের দাবির বিষয়ে আরও অবহিত হোন।’

বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, ২০১৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় নামে একজন আমেরিকান মুক্তমনা লেখককে খুন করে জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম। আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন হিসেবে এই আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে গোপন অপারেশন পরিচালনা করে। আর ২০০১ সাল থেকেই হরকাতুল জিহাদ ও আনসার আল ইসলামের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্য ও গোপনে কাজ করে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এই দুটি দল এখন বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।

‘আর এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো মিশরের ব্রাদারহুডের মতোই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের কব্জায় নেয়ার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। একই কাজ করে ২০১২ সালে মিশরের ক্ষমতা দখল করেছিল ব্রাদারহুড।’

কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, আমরা কেন আপনাকে এই বিবৃতি লিখছি? প্রথমত, মার্কিন নাগরিক হিসেবে আমরা মুসলিম দেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক মাত্রা বিবেচনা না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বারবার ব্যর্থতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো- আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়া। আমরা চাই না বাংলাদেশে এমনটা হোক।

দ্বিতীয়ত, আমরা যারা গত কয়েক দশক ধরে একটি অসাম্প্রদায়িক, সহিংসতামুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে ওকালতি ও লড়াই করছি, তারা মনে করি যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অজুহাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট কোনোভাবে ক্ষমতা দখল করলে, অভিজিতের মতো আমাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে। অনুগ্রহ করে এটাও মনে রাখবেন, যেকোনো ধরনের ইসলামী জোটের হাতে যদি বাংলাদেশ চলে যায় তাহলে, দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ দ্বিগুণ আঘাতপ্রাপ্ত হবে।

বিবৃতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, এখন অতীতে ফিরে দেখা যাক, কীভাবে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে ইসলামপন্থীরা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। তারা এখনও দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

‘বাংলাদেশে প্রশংসিত এবং অংশগ্রহণমূলক চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলো হলো ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু ২০০১ ও ২০০৮ সালের দুটি অবাধ নির্বাচনের মধ্যেও বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ২০২৪ সালে শুধুমাত্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। একটি টেকসই সমাধান তখনই খুঁজে পাওয়া যাবে, যখন নির্বাচনে ও নির্বাচন-পরবর্তীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের অংশগ্রহণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।’

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ইসলামী জোটের জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘুদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব নেমে আসার কথা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমের ১১টি জেলাজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা চালানো হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের বাড়িঘর, চালানো হয় লুটপাট। হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হয় এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

‘আর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই সহিংসতা চলে পুরো পাঁচ বছর ধরে। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলজুড়ে (২০০১ থেকে ২০০৬)। বিএনপি-জামায়াত জোট নেতাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’

সেই সময়ের কয়েকটি নারকীয় জঙ্গি হামলার নমুনা তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে। এগুলো হলো:

> ২০০৪ সালের ২৪ মে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনারসহ ৫০ জন আহত হন। ওই ঘটনায় মারা যান তিন জন। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান এবং আরও দুইজনের ফাঁসির রায় হয়।

> ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশের ওপর দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলা চালায় হুজি। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০০ জন আহত হন। ওই ঘটনার পর বিচার যাতে নিশ্চিত না হয় সেজন্য বিএনপি-জামাত জোট সরকার মিথ্যা নাটক সাজায় দরিদ্র জজ মিয়া এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক শৈবাল সাহা পার্থের ওপর দোষ চাপানো হয়। ওই ঘটনার দায় স্বীকার করতে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মুফতি হান্নান ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেন। মুফতি হান্নান বলেন, ওই হামলার পেছনে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছিলেন। এছাড়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুও জড়িত ছিলেন।

> ২০১৮ সালে হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে, তারেক জিয়া, বাবর ও পিন্টুসহ অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৭ জনের ফাঁসির রায় হয়। তারেকসহ ১৮ জনের যাবজ্জীবন দণ্ড হয়।

> ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় ৪৫৯টি বোমা হামলা চালায়। এই হামলার মূল নায়ক ছিল শায়খ আবদুল রহমান এবং সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। জেএমবি এবং হুজি বিভিন্ন সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের ওপর অনেক হামলা চালায়। এসব হামলার পেছনে তারেক রহমানসহ বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন।

> ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউনুসের ওপর হামলা চালায়।

যে কারণে উদ্বেগ:

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা কেন উদ্বিগ্ন তা তুলে ধরা হয়েছে তাদের বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, প্রথমত, বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল-বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি। দলের চেয়ারপারসন হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। সন্ত্রাস ও অন্যান্য অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তারেক এবং অন্য আসামিরা যদি কোনোভাবে অবাধ নির্বাচনের পেছনের দরজা দিয়ে বিজয়ী হয় তাহলে, গণতন্ত্র নিরাপদ হবে কীভাবে? ঠিক একইভাবে কি মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুডকেও ২০১২ সালে মিশরে একটি অবাধ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি?

‘দ্বিতীয়ত, এতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংস পথ পরিহার করত পারেনি। অতি সম্প্রতি গত ২৫ থেকে ২৯ জুলাই রাজনৈতিক সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়ার পরে বিএনপির নেতৃত্বে সহিংসতা চালানো হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, গণপরিবহন পুড়িয়ে ফেলা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে তাদের কর্মীবাহিনী।’

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত করার পর জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সারাদেশ জুড়ে বছরব্যাপী যে সহিংসতা চালিয়েছিল তাও তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে।

‘ওই সহিংসতায় শত শত মানুষ প্রাণ হারান। জামায়াত নেতৃত্বাধীন ওই সহিংসতায় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর আবার সরকার পতনের নামে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বিএনপি-জামায়াত পেট্রোল বোমা মেরে বহু মানুষকে হত্যা করে। পুড়িয়ে দেয়া হয় বহু যানবাহন। বোমা হামলায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং শতাধিক আহত হন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে ওই সন্ত্রাসের সমালোচনা করে বলা হয়েছিল, ‘…যে পদ্ধতিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভগুলি পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতাকেই বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে।’

বিবৃতিতে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের অনুরোধ করে বলা হয়েছে, ‘প্রিয় কংগ্রেসম্যান, অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন যে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের। আমরা পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক কামনা করি। অতএব, আমরা অনুরোধ করছি যে, আপনারা দয়া করে সতর্কতার সাথে আপনার বিবৃতি দেবেন এবং সহিংসতামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন্য সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করবেন ‘

‘আপনারা যদি চান, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান গতিপথ কেন অস্থিতিশীল হচ্ছে তা নিয়েও আমাদের উদ্বেগগুলিকে তথ্যসম্মৃদ্ধভাবে উপস্থাপন করতে পারি। বিএনপির মূল অংশের নেতৃত্বে রয়েছে দোষী ও সন্ত্রাসীরা। বিএনপির রয়েছে সহিংস প্রবণতা এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সঙ্গে জোট। যদি তারা কোনোভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আরোহণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বীভৎস সহিংসতার আবার দেখবে বাংলাদেশ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তাই বাংলাদেশের জন্য সহিংসতামুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমরা আপনাদের বর্তমান কর্মপন্থা পরিবর্তন করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।

বিবৃতিতে সই করেছেন:

১। নির্বাচিত বাংলাদেশী-আমেরিকান কর্মকর্তা হলেন: কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী, এনজে; মেয়র মাহাবুবুল আলম তৈয়ুব, পিএ; রাজ্য প্রতিনিধি আবুল খান, এনএইচ; কাউন্সিলম্যান আবু আহমেদ মুসা, এমআই এবং কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান, পিএ।

২। সম্প্রীতি ফোরামের অধ্যাপক এবিএম নাসির, এনসি।

৩। ইউএসএ বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রকৌশলী রানা হাসান মাহমুদ, সিএ এবং প্রকৌশলী স্বীকৃতি বড়ুয়া, এনওয়াই।

৪। বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটেরান্স ১৯৭১, ইউএসএ ইনকর্পোরেটেডের গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ।

৫। ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের নজরুল আলম এবং ইঞ্জিনিয়ার তাসনিম সালাম আসলাম, সিএ।

৬। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউএসএ-এর ফাহিম রেজা নূর, এনওয়াই।

৭। মিশিগান বঙ্গবন্ধু পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার আহাদ আহমেদ, এমআই এবং আলী আহমেদ ফারিশ, এমআই।

৮। ইউএসএ কমিটি ফর ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড সেক্যুলার বাংলাদেশের জাকারিয়া চৌধুরী, এনওয়াই।

৯। এনআরবি কাউন্সিল ইউএসএ, ইঞ্জিনিয়ার জলিল খান, সিএ।

১০। জর্জিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের রুমি কবির এবং মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া, জিএ।

১১। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ইউএসএ-এর খুরশীদ আনোয়ার বাবলু।

১২। গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদের নাসরিন মান্নান।

১৩। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ড. আব্দুল বাতেন।

১৪। ম্যাসাচুসেটস বঙ্গবন্ধু পরিষদের সফেদা বসু, এমএ।

১৫। মোরশেদ আলম, গণতান্ত্রিক নেতা, এনওয়াই।

১৬। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ক্যালিফোর্নিয়া কমান্ড কাউন্সিল, জাহেদুল মাহমুদ জমি, সিএ।

১৭। পেনসিলভানিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আবু তাহের বীর প্রতীক, কাজী শামীম, পিএ।

১৮। অ্যাকাডেমিক গ্রুপ: অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, পিএ; প্রফেসর মিজান আর মিয়া, আইএল; অধ্যাপক জামিল তালুকদার , ডব্লিউআই; অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন, এনওয়াই।

১৯। দক্ষিণ নিউ জার্সি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, নূরন্নবী চৌধুরী, এনজে

২০। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক সংস্থা, তৌফিক সোলেমান তুহিন, জামিউল বেলাল, সিএ

সূত্র: একাত্তর