বিশ্বযোগ ইসরাইলি হামলায় রণক্ষেত্র জেনিন, বাড়ছে হতাহত

  • Update Time : ১০:০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩
  • / 87

অনলাইন ডেস্ক

ইসরাইলি হামলায় রণক্ষেত্র জেনিন, বাড়ছে হতাহত
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আহত হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনি নাগরিক। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ হামলা এখনও চলছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী গেলো ২০ বছরের মধ্যে জেনিনে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, একটি সামরিক সূত্রের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

জেনিনে হামলা চালাতে এক হাজারেরও বেশি ইসরাইলি সেনা সোমবার ওই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তাদের সহায়তায় পাঠানো হয়েছে সাঁজোয়া যান, বুলেডোজার ও স্নাইপার। এছাড়া জেনিনের বিভিন্ন ভবনে হামলা চালাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান।

তবে জেনিনে প্রবেশের সময় সশস্ত্র ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় ইসরাইলি বাহিনীকে। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মাহমুদ আল-সাদি সোমবার বলেছিলেন, আহতদের বেশিরভাগ আঘাত গুরুতর এবং শরীরের উপরের অংশে, ফলে তাদের শারীরিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।

তিনি আরও বলেন, জেনিনে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বোমা হামলায় অসংখ্য বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।

হামলার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা আল জাজিরাকে বলেছেন, জেনিনের মানবিক পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ।

Twitter embed code generator
অন্যদিকে ইসরাইলের দাবি, এই শিবির থেকে পরিকল্পিতভাবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, “সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামোতে আঘাত” এবং জেনিন ক্যাম্প এলাকায় “বিস্তৃত সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টা” শুরু করেছে ইসরাইল। একটি মাত্র ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, যেটি জেনিন ব্রিগেডের সদস্যদের সামরিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিলো। তারা এই অভিযানকে পশ্চিম তীরের ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ উদ্যোগের অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে জেনিন ব্যাটালিয়ন। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ফাতাহ, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছে এ ব্যাটালিয়ন।

জেনিন ব্যাটালিয়ন বলেছে, আমরা শেষ নিঃশ্বাস এবং বুলেট পর্যন্ত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবো। সব ফিলিস্তিনি ও সামরিক সংগঠন এক হয়ে লড়বো।

এদিকে ইসরাইলি সেনাদের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

জাতিসংঘের অভিযোগ, হামলায় গুরুতর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল।

জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের মুখপাত্র ভেনেসা হুগেনিন এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে যে পরিমাণ বিমান ও স্থল অভিযান চলছে এবং একটি ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে যেভাবে বিমান হামলা চলছে তাতে আমরা শঙ্কিত।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলাকে ‘সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ চালায় জেনিনের চলমান আগ্রাসন তারই অব্যাহত অংশ মাত্র। চলমান আগ্রাসনের সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আরও পড়ুন: ভার্চুয়াল সম্মেলনে মোদী, পুতিন, জিনপিং, শাহবাজসহ ৮ নেতা

ইরান এ হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের’ সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, এই আগ্রাসন প্রমাণ করে ইসরাইলের সঙ্গে কথিত শান্তি প্রতিষ্ঠা করে এই দখলদার সরকারের ‘যুদ্ধ-যন্ত্র’ বন্ধ করা যাবে না।

আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত বলেছেন, জেনিন শহর ও শরণার্থী শিবিরে বিমান থেকে বোমা হামলা এবং স্থলপথে বুলডোজার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে। যা পরিস্থিতিকে আগের চেয়ে জটিল করে তুলবে।

ইরানের পাশপাশি তুরস্ক, মিশর, জর্দান, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


বিশ্বযোগ ইসরাইলি হামলায় রণক্ষেত্র জেনিন, বাড়ছে হতাহত

Update Time : ১০:০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক

ইসরাইলি হামলায় রণক্ষেত্র জেনিন, বাড়ছে হতাহত
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আহত হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনি নাগরিক। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ হামলা এখনও চলছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী গেলো ২০ বছরের মধ্যে জেনিনে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, একটি সামরিক সূত্রের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

জেনিনে হামলা চালাতে এক হাজারেরও বেশি ইসরাইলি সেনা সোমবার ওই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তাদের সহায়তায় পাঠানো হয়েছে সাঁজোয়া যান, বুলেডোজার ও স্নাইপার। এছাড়া জেনিনের বিভিন্ন ভবনে হামলা চালাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান।

তবে জেনিনে প্রবেশের সময় সশস্ত্র ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় ইসরাইলি বাহিনীকে। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মাহমুদ আল-সাদি সোমবার বলেছিলেন, আহতদের বেশিরভাগ আঘাত গুরুতর এবং শরীরের উপরের অংশে, ফলে তাদের শারীরিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।

তিনি আরও বলেন, জেনিনে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বোমা হামলায় অসংখ্য বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।

হামলার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা আল জাজিরাকে বলেছেন, জেনিনের মানবিক পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ।

Twitter embed code generator
অন্যদিকে ইসরাইলের দাবি, এই শিবির থেকে পরিকল্পিতভাবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, “সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামোতে আঘাত” এবং জেনিন ক্যাম্প এলাকায় “বিস্তৃত সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টা” শুরু করেছে ইসরাইল। একটি মাত্র ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, যেটি জেনিন ব্রিগেডের সদস্যদের সামরিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিলো। তারা এই অভিযানকে পশ্চিম তীরের ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ উদ্যোগের অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে জেনিন ব্যাটালিয়ন। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ফাতাহ, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছে এ ব্যাটালিয়ন।

জেনিন ব্যাটালিয়ন বলেছে, আমরা শেষ নিঃশ্বাস এবং বুলেট পর্যন্ত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবো। সব ফিলিস্তিনি ও সামরিক সংগঠন এক হয়ে লড়বো।

এদিকে ইসরাইলি সেনাদের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

জাতিসংঘের অভিযোগ, হামলায় গুরুতর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল।

জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের মুখপাত্র ভেনেসা হুগেনিন এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে যে পরিমাণ বিমান ও স্থল অভিযান চলছে এবং একটি ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে যেভাবে বিমান হামলা চলছে তাতে আমরা শঙ্কিত।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলাকে ‘সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ চালায় জেনিনের চলমান আগ্রাসন তারই অব্যাহত অংশ মাত্র। চলমান আগ্রাসনের সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আরও পড়ুন: ভার্চুয়াল সম্মেলনে মোদী, পুতিন, জিনপিং, শাহবাজসহ ৮ নেতা

ইরান এ হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের’ সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, এই আগ্রাসন প্রমাণ করে ইসরাইলের সঙ্গে কথিত শান্তি প্রতিষ্ঠা করে এই দখলদার সরকারের ‘যুদ্ধ-যন্ত্র’ বন্ধ করা যাবে না।

আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত বলেছেন, জেনিন শহর ও শরণার্থী শিবিরে বিমান থেকে বোমা হামলা এবং স্থলপথে বুলডোজার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে। যা পরিস্থিতিকে আগের চেয়ে জটিল করে তুলবে।

ইরানের পাশপাশি তুরস্ক, মিশর, জর্দান, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে