মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান

  • Update Time : ০৯:৩৫:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
  • / 113

কমল পাটোয়ারি,মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দৃশ্যমান দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাকি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ এই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করবে বিশ্ব পরিচিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান “চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি”। আরও বেশ কিছু শিল্প এমনকি উৎপাদনে যাবে। সাগরের লোনা পানির কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা ভেজা তৃণভূমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এই জমির ব্যবহার গবাদি পশু চারণ এবং মাছ চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
সন্দ্বীপ চ্যানেলের কাছে গজিয়ে ওঠা চরের এসব অকৃত্রিম ভূমি এখন দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের রাজধানী শহর হিসেবে খ্যাতি পাচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শীলের চর, মোশারফের চর ও পীরের চর, সোনাগাজী ও ফেনীর সীতাকুণ্ড অংশে ৩০ হাজার একর তৃণভূমি জুড়ে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল। এক সময় এসব চর এলাকায় দিনের বেলায়ও কেউ যেত না এখন শুধু শিল্প কারখানা নয় সৌন্দর্য্য। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পর্যবেক্ষণ করতে প্রচুর লোক ভিড় করে।
জানা যায়, বিশাল এই অভিযানে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এক হাজার একরের বেশি এলাকাজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ, ভূমি উন্নয়ন, ৩০ কিলোমিটার ৭টি খাল খনন, ৭টি সুইচ গেট নির্মাণ করা হয়েছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। রাস্তা এবং গাইড দেয়াল। মেরিন ড্রাইভ সড়কও এই এলাকার সাথে যুক্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্র উপকূলের কাছে সাড়ে ১৮ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩ একর জমির এই শিল্পনগরীতে ইতোমধ্যে ১৩৬টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি ১৭ হাজার ৮৩৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যেখানে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৩ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অংশে আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি বড় কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এগুলো হলো- ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, জাপানের নিপ্পন স্টিল, ম্যাকডোনাল্ড এবং টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এছাড়া বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা প্রিফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, কিয়াম মেটাল লিমিটেড, এসকিউ ইলেকট্রনিক লিমিটেড এবং সমুদা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড নির্মাণাধীন রয়েছে। “২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ ৯৮% সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি কাজটি এই বছরেই শেষ হবে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে”, বলেছেন প্রজেক্ট ম্যানেজার মিঃ জ্যাং হৈলং।
মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা ভাগ্যবান, আমাদের এলাকায় এমন একটি শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। এমনটা হলে মিরসরাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো শহর হবে। আশা করা যায় এই শিল্পনগরী। আগামী কয়েক বছর পর শহরটি পুরোপুরি চালু হবে এবং পুরো কাজ শেষ হলে এখানে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। উল্লেখ্য, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান

Update Time : ০৯:৩৫:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩

কমল পাটোয়ারি,মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দৃশ্যমান দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাকি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ এই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করবে বিশ্ব পরিচিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান “চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি”। আরও বেশ কিছু শিল্প এমনকি উৎপাদনে যাবে। সাগরের লোনা পানির কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা ভেজা তৃণভূমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এই জমির ব্যবহার গবাদি পশু চারণ এবং মাছ চাষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
সন্দ্বীপ চ্যানেলের কাছে গজিয়ে ওঠা চরের এসব অকৃত্রিম ভূমি এখন দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের রাজধানী শহর হিসেবে খ্যাতি পাচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুর চর, শীলের চর, মোশারফের চর ও পীরের চর, সোনাগাজী ও ফেনীর সীতাকুণ্ড অংশে ৩০ হাজার একর তৃণভূমি জুড়ে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল। এক সময় এসব চর এলাকায় দিনের বেলায়ও কেউ যেত না এখন শুধু শিল্প কারখানা নয় সৌন্দর্য্য। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পর্যবেক্ষণ করতে প্রচুর লোক ভিড় করে।
জানা যায়, বিশাল এই অভিযানে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এক হাজার একরের বেশি এলাকাজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ, ভূমি উন্নয়ন, ৩০ কিলোমিটার ৭টি খাল খনন, ৭টি সুইচ গেট নির্মাণ করা হয়েছে। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। রাস্তা এবং গাইড দেয়াল। মেরিন ড্রাইভ সড়কও এই এলাকার সাথে যুক্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্র উপকূলের কাছে সাড়ে ১৮ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করছে। কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য দুই একর জমিতে জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩ একর জমির এই শিল্পনগরীতে ইতোমধ্যে ১৩৬টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি ১৭ হাজার ৮৩৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যেখানে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৩ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অংশে আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি বড় কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এগুলো হলো- ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, জাপানের নিপ্পন স্টিল, ম্যাকডোনাল্ড এবং টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এছাড়া বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা প্রিফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, কিয়াম মেটাল লিমিটেড, এসকিউ ইলেকট্রনিক লিমিটেড এবং সমুদা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড নির্মাণাধীন রয়েছে। “২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ ৯৮% সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি কাজটি এই বছরেই শেষ হবে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে”, বলেছেন প্রজেক্ট ম্যানেজার মিঃ জ্যাং হৈলং।
মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা ভাগ্যবান, আমাদের এলাকায় এমন একটি শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। এমনটা হলে মিরসরাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো শহর হবে। আশা করা যায় এই শিল্পনগরী। আগামী কয়েক বছর পর শহরটি পুরোপুরি চালু হবে এবং পুরো কাজ শেষ হলে এখানে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। উল্লেখ্য, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।