আরও ৭ বছর কারাদণ্ড, অনিশ্চিত পথে সু চির যাত্রা
- Update Time : ০৯:০২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
- / 161
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের একটি আদালত দেশটির সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে আরও সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। দুর্নীতি-সংক্রান্ত পাঁচটি অভিযোগে তাকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সু চির বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগের বিচার আপাতত শেষ হলো। শুক্রবারের সাজা নিয়ে সুচির কারাদণ্ডের মোট মেয়াদ দাঁড়াল ৩৩ বছর।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) যে পাঁচটি অভিযোগে ৭৭ বছর বয়সি সু চিকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার অন্যতম। এসব অভিযোগে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকেও শুক্রবার সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলাসংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘সু চির বিরুদ্ধে জান্তার দায়ের করা সব মামলা শেষ হলো। তার বিরুদ্ধে জান্তার আপাতত আর কোনো অভিযোগ নেই।’
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তা রিচার্ড হরসি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হলো, জান্তা সরকার সু চিকে নিয়ে কী করবে? কোথায় তিনি ৩৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবেন? তাকে কি গৃহবন্দি রাখা হবে? বিদেশিদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হবে কি? কিন্তু জান্তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা শিগগির কোনো সিদ্ধান্ত জানাবে না।’
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত সু চিকে এ পর্যন্ত যেসব অভিযোগে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার সবগুলোয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতারা। সু চির আইনজীবীরা শুক্রবারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এতে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফিল রবার্টসন এক টুইটে লেখেন, ‘জান্তার কেঙ্গারু আদালতে ন্যায়বিচারের কোনো সম্ভাবনা নেই।’
শুক্রবারের আগে বিভিন্ন মামলায় সু চিকে ২৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ওয়কি-টকি রাখার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপনীতা ভঙ্গ ও করোনা আইন লঙ্ঘন অন্যতম।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চি ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ মিয়ানমারের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার করে দেশটির সেনাবাহিনী। ঘোষণা করে বছরব্যাপী জরুরি অবস্থা। আগের বছরের ডিসেম্বরে সম্পন্ন জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় সেনাবাহিনী। কিন্তু নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। অথচ ওই নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছিল এনএলডি।
সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই মিয়ানমারের শহরগুলো জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমশ কঠোর থেকে কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমন শুরু করে সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
মিয়ানমার বিক্ষোভের তথ্যসংগ্রহকারী প্ল্যাটফর্ম অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) গত মাসে জানায়, বিক্ষোভ শুরুর পর জান্তার বিভিন্ন বাহিনীর হাতে অন্তত ২ হাজার ৪৬৫ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তার দ্বিগুণ। আটক হয়েছে ১৬ হাজারের বেশি, যাদের প্রায় তিন হাজারকে সম্প্রতি সাধারণ মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
জান্তাবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য সরকার (নাগ) গঠন করেছে। তৈরি করেছে গণপ্রতিরক্ষা বাহিনী (পিডিএফ)। দেশটির ২০টির মতো পুরোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে জান্তাবিরোধী জনযুদ্ধ করছে পিডিএফ। তাদের মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে জান্তা সরকার।