নীলফামারীর ডোমারে পরকীয়া করতে এসে আটক র‌্যাবের এসআই জেলহাজতে

  • Update Time : ০৫:১৭:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০২২
  • / 306

মশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডোমারে দুই সন্তানের জননী সুমনা আক্তার(৩০) এর সাথে পরকীয়ার জেরে রাত কাটাতে এসে ধরা পড়েছেন মহাবীর ব্যানার্জি নামে একজন র‌্যাবের এসআই।

বুধবার রাতে ডোমার উপজেলার আরডিআরএস সংলগ্ন মোজাম্মেল হক ভিলায় এ ঘটনা ঘটে। আটককৃত মহাবীর ব্যানার্জি মাস ছয়েক আগে ডোমার থানার এসআই হিসেবে কর্মরত থাকার পর এখন নায়ারনগঞ্জে র‌্যাব- ১১তে কর্মরত রয়েছেন বলে আটক মহাবীর জানান। বর্তমানে প্রেমিকা সুমনা আক্তারসহ তাকে ডোমার থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সুমনা আক্তার দেবীগঞ্জ উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের রাজীব হোসেনের স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী। সুমনা ডোমারের মোজাম্মেল হক ভিলায় বাসা ভাড়ায় থাকেন।

অন্যদিকে মহাবীর দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার কেউটপাড়া রসুলপুর এলাকার কালিমোহন ব্যানার্জির ছেলে।
সুমনা আক্তারের মামা শ্বশুর ইসমাইল হোসেন বলেন, সুমনার ছেলে তার দাদার বাসায় ছিল৷

বুধবার রাত নয়টার পরে আমি সুমনার ছেলেকে তাদের বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার জন্য আরডিআরএস সংলগ্ন মোজাম্মেল ভিলায় আসি। দরজা নক করার পর আমার বউমা দরজা খুলে দেয়। এ সময় আমি তার সন্তানকে তাকে দিয়ে চলে যেতে চাইলে সে চা খেয়ে যেতে বলে। এ সময় পাশের রুমে শব্দ হলে আমি সেই রুমে যেতে চাইলে সুমনা আমাকে সেখানে যেতে বাধা দেয়। এক সময় আমি ঐ রুমে গিয়ে দেখি একজন পুরুষ মানুষ সেখানে লুকিয়ে রয়েছে। আমাকে দেখে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি চিৎকার দিলে আশেপাশের মানুষজন এসে তাকে আটক করে। আটকের পর জানা গেল সে ডোমার থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত ছিল। আটককৃত মহাবীর হিন্দু ঘরের সন্তান ও সুমনা আক্তার মুসলমান। প্রেমিকা সুমনা আক্তার বলেন, ডোমার থানায় আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দের একটি অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগটি তিনি মিমাংসা করে দেওয়ার পর থেকেই তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে সে আমাকে বিয়ের কথা জানালে আমি তাকে বলি তুমি যে হিন্দু আমাকে কিভাবে বিয়ে করবে। সে সময় সে আমাকে জানায় আমি মুসলমান ধর্ম গ্রহন করে তোমাকে বিয়ে করবো। এর পর থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করি ও আমাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পুজাঁর ছুটিতে সে বাড়ীতে আসলে বুধবার তার সাথে দেবীগঞ্জে ঘুরার পর রাত নয়টার দিকে আমার বাসায় সে আসে। এর কিছুক্ষন পর আমার মামা শুশুর তাকে বাড়ীতে দেখতে পেয়ে চিল্লাহাল্লা করে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর আমার প্রথম স্বামী আমাকে আর গ্রহন করবেনা। আমি এখন তাকেই বিয়ে করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, এরআগেও গত ২৮ সেপ্টেম্বর সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। গতকালের ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে মিমাংসা বসা হলে সে আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।
আটককৃত এসআই মহাবীর প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেন, বুধবার রাতে সে আমাকে তার বাড়ীতে আসতে বলায় আমি এসেছি। এর আগে আমি কখানো তার বাড়ীতে আসেনি। বাড়ীতে লোক আসায় অন্য ঘরে লুকালেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সুমনা আক্তার আমাকে লুকাতে বলায় আমি বারান্দায় এসে লুকায় ছিলাম।
ডোমার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ এসআই মহাবীর দুই সন্তানের জননীসহ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেয়ে পরিবারকে আসতে বললেও তারা কেউ আসেননি।

তাছাড়া এখানে মুসলমান-হিন্দুর বিষয় থাকায় আমার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই থানায় খবর দিলে বৃহস্পতিবার সকালে ডোমার থানা পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়। সুমনার স্বামী ওষধ কোম্পানীতে চাকুরী করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার থানার ওসি মাহমুদ উন নবী বলেন, সুমনা আক্তার নামে এক নারীর ধর্ষণ মামলায় এসআই মহাবীর ব্যানার্জিকে গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আই’র বদলী হলেও মোবাইলে যোগাযোগ অব্যাহত ছিলো তাদের। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পূজাঁর ছুটিতে এসে গত ৫ অক্টোবর রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুবাদে ওই নারীর সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করে মহাবীর। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন।

ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানান, এর আগেও গেল ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। গতকালের ঘটনার পর মিমাংসায় বসা হয়েছিলো কিন্তু মহাবীর বিয়েতে রাজী হয়নি। যার কারণে থানায় মামলা করতে হয়েছে। ডোমার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ জানান, পৌরসভার কাউন্সিলরের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি যাই। এবং তাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিলো। গতকাল রাতে পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই নারীর নিকটাত্মীয়রা আটক করেন। কোন অভিভাবক না আসায় তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নীলফামারীর ডোমারে পরকীয়া করতে এসে আটক র‌্যাবের এসআই জেলহাজতে

Update Time : ০৫:১৭:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০২২

মশিয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর ডোমারে দুই সন্তানের জননী সুমনা আক্তার(৩০) এর সাথে পরকীয়ার জেরে রাত কাটাতে এসে ধরা পড়েছেন মহাবীর ব্যানার্জি নামে একজন র‌্যাবের এসআই।

বুধবার রাতে ডোমার উপজেলার আরডিআরএস সংলগ্ন মোজাম্মেল হক ভিলায় এ ঘটনা ঘটে। আটককৃত মহাবীর ব্যানার্জি মাস ছয়েক আগে ডোমার থানার এসআই হিসেবে কর্মরত থাকার পর এখন নায়ারনগঞ্জে র‌্যাব- ১১তে কর্মরত রয়েছেন বলে আটক মহাবীর জানান। বর্তমানে প্রেমিকা সুমনা আক্তারসহ তাকে ডোমার থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সুমনা আক্তার দেবীগঞ্জ উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের রাজীব হোসেনের স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী। সুমনা ডোমারের মোজাম্মেল হক ভিলায় বাসা ভাড়ায় থাকেন।

অন্যদিকে মহাবীর দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার কেউটপাড়া রসুলপুর এলাকার কালিমোহন ব্যানার্জির ছেলে।
সুমনা আক্তারের মামা শ্বশুর ইসমাইল হোসেন বলেন, সুমনার ছেলে তার দাদার বাসায় ছিল৷

বুধবার রাত নয়টার পরে আমি সুমনার ছেলেকে তাদের বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার জন্য আরডিআরএস সংলগ্ন মোজাম্মেল ভিলায় আসি। দরজা নক করার পর আমার বউমা দরজা খুলে দেয়। এ সময় আমি তার সন্তানকে তাকে দিয়ে চলে যেতে চাইলে সে চা খেয়ে যেতে বলে। এ সময় পাশের রুমে শব্দ হলে আমি সেই রুমে যেতে চাইলে সুমনা আমাকে সেখানে যেতে বাধা দেয়। এক সময় আমি ঐ রুমে গিয়ে দেখি একজন পুরুষ মানুষ সেখানে লুকিয়ে রয়েছে। আমাকে দেখে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি চিৎকার দিলে আশেপাশের মানুষজন এসে তাকে আটক করে। আটকের পর জানা গেল সে ডোমার থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত ছিল। আটককৃত মহাবীর হিন্দু ঘরের সন্তান ও সুমনা আক্তার মুসলমান। প্রেমিকা সুমনা আক্তার বলেন, ডোমার থানায় আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দের একটি অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগটি তিনি মিমাংসা করে দেওয়ার পর থেকেই তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে সে আমাকে বিয়ের কথা জানালে আমি তাকে বলি তুমি যে হিন্দু আমাকে কিভাবে বিয়ে করবে। সে সময় সে আমাকে জানায় আমি মুসলমান ধর্ম গ্রহন করে তোমাকে বিয়ে করবো। এর পর থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করি ও আমাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পুজাঁর ছুটিতে সে বাড়ীতে আসলে বুধবার তার সাথে দেবীগঞ্জে ঘুরার পর রাত নয়টার দিকে আমার বাসায় সে আসে। এর কিছুক্ষন পর আমার মামা শুশুর তাকে বাড়ীতে দেখতে পেয়ে চিল্লাহাল্লা করে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর আমার প্রথম স্বামী আমাকে আর গ্রহন করবেনা। আমি এখন তাকেই বিয়ে করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, এরআগেও গত ২৮ সেপ্টেম্বর সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। গতকালের ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে মিমাংসা বসা হলে সে আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।
আটককৃত এসআই মহাবীর প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেন, বুধবার রাতে সে আমাকে তার বাড়ীতে আসতে বলায় আমি এসেছি। এর আগে আমি কখানো তার বাড়ীতে আসেনি। বাড়ীতে লোক আসায় অন্য ঘরে লুকালেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সুমনা আক্তার আমাকে লুকাতে বলায় আমি বারান্দায় এসে লুকায় ছিলাম।
ডোমার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ এসআই মহাবীর দুই সন্তানের জননীসহ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেয়ে পরিবারকে আসতে বললেও তারা কেউ আসেননি।

তাছাড়া এখানে মুসলমান-হিন্দুর বিষয় থাকায় আমার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই থানায় খবর দিলে বৃহস্পতিবার সকালে ডোমার থানা পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়। সুমনার স্বামী ওষধ কোম্পানীতে চাকুরী করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার থানার ওসি মাহমুদ উন নবী বলেন, সুমনা আক্তার নামে এক নারীর ধর্ষণ মামলায় এসআই মহাবীর ব্যানার্জিকে গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আই’র বদলী হলেও মোবাইলে যোগাযোগ অব্যাহত ছিলো তাদের। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পূজাঁর ছুটিতে এসে গত ৫ অক্টোবর রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুবাদে ওই নারীর সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক করে মহাবীর। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন।

ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানান, এর আগেও গেল ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। গতকালের ঘটনার পর মিমাংসায় বসা হয়েছিলো কিন্তু মহাবীর বিয়েতে রাজী হয়নি। যার কারণে থানায় মামলা করতে হয়েছে। ডোমার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ জানান, পৌরসভার কাউন্সিলরের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি যাই। এবং তাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিলো। গতকাল রাতে পুলিশ কর্মকর্তাকে ওই নারীর নিকটাত্মীয়রা আটক করেন। কোন অভিভাবক না আসায় তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।