পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নীচে

  • Update Time : ০৯:৪৪:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অগাস্ট ২০২২
  • / 183

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

স্মরণাতীতকালের ভয়াবহতম বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। দেশটির জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রেহমান এ খবর জানিয়েছেন।

বিধ্বংসী আকস্মিক এ বন্যায় ভেসে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষেত। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে দেশটির বেলুচিস্তান, সিন্ধু, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বন্যাকবলিত লাখ লাখ মানুষ। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন। বিপর্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া পাক সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।

জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেন, “এটি একটি বিশাল সমুদ্র। পানি সেচে ফেরার জন্য কোনো শুকনো জমি নেই। তিনি একে ‘অকল্পনীয় সংকট’ বলে উল্লেখ করেছেন।”

শেরি বলেন, “এবারের বন্যা অতীতের প্রতিটি সীমা, প্রতিটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আমরা এর আগে কখনো এ পরিস্থিতি দেখিনি।”

এ বছরের জুন মাসে পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে এত ভারী বর্ষণ আর হয়নি। এ বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছে দেশটির সরকার।

সোমবার পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্যার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেছেন, “নিহতদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে চেষ্টা করছি।”

কর্মকর্তারা ধারণা করছে, তিন কোটি ৩০ লাখের বেশি পাকিস্তানি নাগরিক ঐতিহাসিক এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। লাখো ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। অনেকে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ বন্যাকবলিত। ২০১০-১১ সালের বন্যার সঙ্গে এ বন্যার তুলনা করা যায়।”

বন্যায় সিন্ধু এবং বেলুচিস্তানের মতো প্রদেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে খাইবার পাখতুনখাওয়া পার্বত্য অঞ্চলগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সরকারি কর্মকর্তারা বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করলেও অনেকেই বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতির কারণ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করছেন।

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে থাকা পাকিস্তানের জন্য এ বন্যার ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ইতিমধ্যে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সংস্থা, বন্ধুভাবাপন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

পাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সুফি বলেছেন, “পাকিস্তানে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “পাকিস্তান এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু দেশটি যখন অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে, তখনই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে।”
সূত্র: পার্সটুডে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নীচে

Update Time : ০৯:৪৪:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অগাস্ট ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

স্মরণাতীতকালের ভয়াবহতম বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। দেশটির জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রেহমান এ খবর জানিয়েছেন।

বিধ্বংসী আকস্মিক এ বন্যায় ভেসে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষেত। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে দেশটির বেলুচিস্তান, সিন্ধু, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বন্যাকবলিত লাখ লাখ মানুষ। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন। বিপর্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া পাক সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।

জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেন, “এটি একটি বিশাল সমুদ্র। পানি সেচে ফেরার জন্য কোনো শুকনো জমি নেই। তিনি একে ‘অকল্পনীয় সংকট’ বলে উল্লেখ করেছেন।”

শেরি বলেন, “এবারের বন্যা অতীতের প্রতিটি সীমা, প্রতিটি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আমরা এর আগে কখনো এ পরিস্থিতি দেখিনি।”

এ বছরের জুন মাসে পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে এত ভারী বর্ষণ আর হয়নি। এ বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছে দেশটির সরকার।

সোমবার পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্যার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেছেন, “নিহতদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে চেষ্টা করছি।”

কর্মকর্তারা ধারণা করছে, তিন কোটি ৩০ লাখের বেশি পাকিস্তানি নাগরিক ঐতিহাসিক এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। লাখো ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। অনেকে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। দেশটিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ বন্যাকবলিত। ২০১০-১১ সালের বন্যার সঙ্গে এ বন্যার তুলনা করা যায়।”

বন্যায় সিন্ধু এবং বেলুচিস্তানের মতো প্রদেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে খাইবার পাখতুনখাওয়া পার্বত্য অঞ্চলগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সরকারি কর্মকর্তারা বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করলেও অনেকেই বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতির কারণ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করছেন।

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে থাকা পাকিস্তানের জন্য এ বন্যার ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ইতিমধ্যে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সংস্থা, বন্ধুভাবাপন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

পাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সুফি বলেছেন, “পাকিস্তানে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “পাকিস্তান এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু দেশটি যখন অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে, তখনই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে।”
সূত্র: পার্সটুডে