যেভাবে মার্কিন গোয়েন্দাজালে জাওয়াহিরি

  • Update Time : ০১:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২
  • / 179

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

আইমান আল-জাওয়াহিরির অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন গুজবের কারণে তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিলেন যে জাওয়াহিরি আসলে কোথায় লুকিয়ে আছেন। মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, জাওয়াহিরি অনেক বছর ধরে লুকিয়ে ছিল এবং তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করার ঘটনাটি কাউন্টার-টেররিজম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক, ধৈর্য্যশীল এবং অবিচল কাজ এবং কয়েক মাসের সূক্ষ পরিকল্পনার ফল।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কিন কর্মকর্তা কাবুলের ওই অভিযানের বিষয়ে যেসব বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তা তুলে ধরা হল:

মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়ার পর গত এক বছর ধরে আফগানিস্তানে আল কায়েদার কর্মকাণ্ড নজরে ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে তথ্য ছিল যে একটি নেটওয়ার্ক জাওয়াহিরিকে আশ্রয় দিচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধান চলতে থাকে। এক পর্যায়ে চলতি বছর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জাওয়াহিরির পরিবারকে শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ছিলেন তার স্ত্রী, তার কন্যা ও ওই নারীর সন্তানরা। তাদের কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে রাখা হয়েছিল। পরে ওই একই বাড়িতে জাওয়াহিরির উপস্থিতিও শনাক্ত করা যায়।

বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে কাবুলের ওই বাড়িতে যিনি আছেন তিনিই জাওয়াহিরি, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান সত্য প্রমাণিত হলে এপ্রিলের প্রথমদিকে তারা মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালেভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিষয়টি জানান।

ওই ভবনের কাঠামোর জন্য যাতে কোনো হুমকি তৈরি না করে এবং বেসামরিক ও জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি যাতে না থাকে এমনভাবেই হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়।

এই পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ওই নিরাপদ আস্তানার গঠন ও ধরন অনুসন্ধান করার পাশাপাশি এর বাসিন্দাদের যাচাই করে দেখেন বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এরপর প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিটি গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করেন এবং হামলার সঠিক সময় নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করেন।
এজন্য প্রধান উপদেষ্টাদের ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ১ জুলাই হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সিআইএ-র পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রস্তাবিত একটি অভিযানের বিষয়ে বাইডেনকে অবহিত করেন।

ওই বৈঠকে বাইডেন বহু প্রশ্ন করেন এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের করা জাওয়াহিরির আস্তানার একটি মডেল নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখেন।

কাবুলে হামলা চালালে সম্ভাব্য যে প্রভাব সৃষ্টি হবে বাইডেন তাও বিশ্লেষণ করে দেখার অনুরোধ করেছিলেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন চূড়ান্ত ব্রিফিংয়ের জন্য মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্যদের ও উপদেষ্টাদের ডাকেন এবং জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হলে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা করেন।

সবার মতামত নেওয়ার পর বাইডেন বেসামরিকদের ঝুঁকি যাতে একেবারেই না থাকে এই শর্তে এটি সুনির্দিষ্ট উপযোগী বিমান হামলার অনুমোদন দেন।

এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাবুলের স্থানীয় সময় রোববার (৩১ জুলাই) ভোর ৬টা ১৮ মিনিটে একটি ড্রোন থেকে দুটি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়।

আল কায়েদা প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর এটি আন্তর্জাতিক এ সন্ত্রাসী সংগঠনটির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


যেভাবে মার্কিন গোয়েন্দাজালে জাওয়াহিরি

Update Time : ০১:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

আইমান আল-জাওয়াহিরির অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন গুজবের কারণে তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিলেন যে জাওয়াহিরি আসলে কোথায় লুকিয়ে আছেন। মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, জাওয়াহিরি অনেক বছর ধরে লুকিয়ে ছিল এবং তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করার ঘটনাটি কাউন্টার-টেররিজম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক, ধৈর্য্যশীল এবং অবিচল কাজ এবং কয়েক মাসের সূক্ষ পরিকল্পনার ফল।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কিন কর্মকর্তা কাবুলের ওই অভিযানের বিষয়ে যেসব বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তা তুলে ধরা হল:

মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়ার পর গত এক বছর ধরে আফগানিস্তানে আল কায়েদার কর্মকাণ্ড নজরে ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে তথ্য ছিল যে একটি নেটওয়ার্ক জাওয়াহিরিকে আশ্রয় দিচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধান চলতে থাকে। এক পর্যায়ে চলতি বছর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জাওয়াহিরির পরিবারকে শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ছিলেন তার স্ত্রী, তার কন্যা ও ওই নারীর সন্তানরা। তাদের কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে রাখা হয়েছিল। পরে ওই একই বাড়িতে জাওয়াহিরির উপস্থিতিও শনাক্ত করা যায়।

বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে কাবুলের ওই বাড়িতে যিনি আছেন তিনিই জাওয়াহিরি, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান সত্য প্রমাণিত হলে এপ্রিলের প্রথমদিকে তারা মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালেভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিষয়টি জানান।

ওই ভবনের কাঠামোর জন্য যাতে কোনো হুমকি তৈরি না করে এবং বেসামরিক ও জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি যাতে না থাকে এমনভাবেই হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়।

এই পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ওই নিরাপদ আস্তানার গঠন ও ধরন অনুসন্ধান করার পাশাপাশি এর বাসিন্দাদের যাচাই করে দেখেন বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এরপর প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিটি গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করেন এবং হামলার সঠিক সময় নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করেন।
এজন্য প্রধান উপদেষ্টাদের ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ১ জুলাই হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সিআইএ-র পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রস্তাবিত একটি অভিযানের বিষয়ে বাইডেনকে অবহিত করেন।

ওই বৈঠকে বাইডেন বহু প্রশ্ন করেন এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের করা জাওয়াহিরির আস্তানার একটি মডেল নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখেন।

কাবুলে হামলা চালালে সম্ভাব্য যে প্রভাব সৃষ্টি হবে বাইডেন তাও বিশ্লেষণ করে দেখার অনুরোধ করেছিলেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন চূড়ান্ত ব্রিফিংয়ের জন্য মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্যদের ও উপদেষ্টাদের ডাকেন এবং জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হলে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা করেন।

সবার মতামত নেওয়ার পর বাইডেন বেসামরিকদের ঝুঁকি যাতে একেবারেই না থাকে এই শর্তে এটি সুনির্দিষ্ট উপযোগী বিমান হামলার অনুমোদন দেন।

এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাবুলের স্থানীয় সময় রোববার (৩১ জুলাই) ভোর ৬টা ১৮ মিনিটে একটি ড্রোন থেকে দুটি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়।

আল কায়েদা প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর এটি আন্তর্জাতিক এ সন্ত্রাসী সংগঠনটির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা।